Just In
রেড টি খেয়েছেন কখনও? জেনে নিন এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
শুধু বাঙালি নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে চা, কফি এক অদ্ভুত নেশা ও ভালোলাগার জিনিস। কেউ চা এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বুঝে পান করেন, আবার কেউ না বুঝেই পান করেন। সবাই স্বাদ ও গুণের উপর ভিত্তি করে নিজেদের পছন্দের চা পান করে থাকেন। আজ আমরা এই প্রবন্ধে স্বাস্থ্য উপকারিতার উপর ভিত্তি করে একটি চায়ের কথা আলোচনা করব, যা পান করলে আপনার হাজারও শারীরিক সমস্যা থেকে অনায়াসেই মুক্তি পেতে পারেন। এই চায়ের নাম হল 'রুইবস চা' বা 'রেড টি'।
'রুইবস চা' হল একটি লাল ভেষজ চা, যা আফ্রিকান রেড টি হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য চায়ের তুলনায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশি বলে, এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই, অনেকেই গ্রিন বা ব্ল্যাক টি এর বিকল্প হিসেবে এটি পান করে থাকেন। তাহলে চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক রুইবস বা রেড টি এর উপকারিতা সম্পর্কে।
রুইবস বা রেড টি কী?
রুইবস চা, কেপ অফ গুড হোপ এর স্থানীয় একটি গুল্মজাতীয় গাছ অ্যাস্প্যালাথাস লিনিয়ারিস (Aspalathus Linearis) এর পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এই পাতাটি সাধারণত দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে পাওয়া যায়। পাতাটি শুকনো অবস্থায় অনেকটা সূঁচের মতো দেখতে হয়। এই চা লাল গুল্ম চা হিসেবেও পরিচিত। মধু বা ভ্যানিলার মতো হালকা সুগন্ধ পাওয়া যায় এই চায়ে। পুষ্টিবিদদের মতে, গ্রিন টি এর চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে রুইবস চায়ে, যা দেহের ফ্রি রেডিক্যালগুলির গতি রোধ করে এবং জারণ চাপকে হ্রাস করে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) ক্যাফেইন মুক্ত
গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি এর তুলনায় আফ্রিকান রেড টি, ক্যাফেইন (Caffeine) মুক্ত। অন্যান্য চায়ে ক্যাফেইন অতিরিক্ত থাকে বলে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, ঘুম এবং মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু, আফ্রিকান রেড টি তে এটি না থাকার ফলে এই ধরনের সমস্যা থেকে অনায়াসেই মুক্তি পাওয়া যায়। এই চা গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্য একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।
২) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান, পাশাপাশি এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া কি ক্ষতিকারক?
২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত কিছু ব্যক্তি ৬ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ৬ কাপ করে এই চা পান করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের পরীক্ষা করে দেখা যায়, অন্যান্য রোগীর তুলনায় তাদের শরীরে কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩) ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে
রুইবস চায়ে উচ্চ মাত্রায় aspalathin, luteolin and quercetin নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রী রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলে এবং এবং স্বাস্থ্যকর কোষগুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৪) হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এই জাতীয় চা ট্যানিন মুক্ত, যা হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রেড চা ডায়রিয়া এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও প্রতিরোধ করে।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রেড টি দেহে অনাক্রম্যতা তৈরি করে এবং শক্তিশালী করে তোলে। এই চায়ের পুষ্টি উপাদান দেহের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৬) হাড়ের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, রুইবস চায়ে বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল (Polyphenols) রয়েছে, যা অস্টিওব্লাস্ট (Osteoblast) এর কার্যকলাপকে উন্নত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকায় এটি হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।
৭) ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি
রুইবস চায়ের আলফা হাইড্রক্সি উপাদান ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে চাঙ্গা করে তোলে, পাশাপাশি এই চা এর নির্যাস চুলে প্রয়োগ করলে চুল খুব স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
৮) ওজন কমাতে সহায়ক
রুইবস চায়ে ক্যালোরির মাত্রা খুবই কম থাকে, যা ওজন হ্রাস করার ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং খিদের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে।
৯) ডায়বেটিস রোধ করে
গবেষণায় দেখা গেছে, রুইবস চা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
রেড টি-এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
রুইবস চা বা রেড টি এর সেই অর্থে কোনও গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে, যদি আপনার লিভার বা কিডনির রোগ হয়ে থাকে বা কেমোথেরাপির চিকিৎসা চলে তাহলে এই চা পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লিকার চা : উপকারিতা, পুষ্টি এবং ঝুঁকি
কীভাবে বানাবেন?
২ কাপ ফুটন্ত গরম জলের সঙ্গে ১ চা চামচ রুইবস চা যোগ করুন। ৫ মিনিটের জন্য চাপা দিয়ে রাখুন এবং স্বাদের জন্য কয়েক ফোঁটা মধু যোগ করুন। এরপর ছেঁকে নিয়ে পান করুন।
দিনে কতবার পান করা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর থাকার সমস্ত সুবিধা পেতে দিনে ৬ কাপ চা পান করতে পারেন। ঠান্ডা খাবারের সঙ্গে এই চা খেতে পারেন।