For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

আচ্ছা এই পৃথিবীতে যদি কাল থেকে একটা মশাও না থাকে তাহলে কী হবে জানেন?

সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫০০ ধরনের মশার প্রজাতি রয়েছে। সবাই যে মানুষ দেখলেই কামড়াতে যায়, এমন নয়। সাধারণত এত সংখ্যক মশার প্রজাতির মধ্যে কম-বেশি ১০০ প্রজাতির মশার এমন বদ অভ্যাস আছে।

By Nayan
|

আপাদ দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের উত্তর বেজায় সহজ, তাই না? একেবারেই! যারা জ্বালাতন করে তাদের তো এই পৃথিবী থেকে মুছে যাওয়াই উচিত। একবার ভাবুন তো একটা মশাও যদি না থাকে তাহলে প্রতি বছর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগগুলি আর হবেই না। ফলে কত লোক বেঁচে যাবেন! এই সেদিনই প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ২৪৭ মিলিয়ান মানুষ, যেখানে এই রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ান বা দশ লাখ। ফলে বুঝতে পারছেন তো ভোঁ ভোঁ শব্দে আমাদের কানের কাছে ঘুরে বেরানো এই জীবটি জীবন এবং ধনের কত ক্ষতি করে। শুধু কী তাই! মশার কারণে কী আর একটা রোগ হয়, ম্যালেরিয়ায় পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং ইয়েলো ফিবারকে ভুলে গেলে চলবে কীভাবে। এই সব রোগের কারণও কত যে মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন, তার হিসেবে সত্যিই অজানা। তাই ডাইনোসরের মতো যদি তাল মশাও অবলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে কোনও ক্ষতি আছে কি?

সত্যিই কি কোনো ক্ষতি নেই!

সত্যিই কি কোনো ক্ষতি নেই!

সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫০০ ধরনের মশার প্রজাতি রয়েছে। সবাই যে মানুষ দেখলেই কামড়াতে যায়, এমন নয়। সাধারণত এত সংখ্যক মশার প্রজাতির মধ্যে কম-বেশি ১০০ প্রজাতির মশার এমন বদ অভ্যাস আছে। আপনারা জানলে হয়তো অবাক হয়ে যাবেন, মশা মানব জাতির যতই বড় "দুশমন" হোক না কেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এদের বাস্তবিকই কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই পৃথিবীতে মশারা প্রায় ১০০ মিলিয়ান বছর ধরে বসবাস করছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে এরা খাদ্য-খাদকের মধ্যকার ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। আর একথা তো সকলেই জানেন যে খাদ্য-খাদকের এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে সমগ্র পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর এর প্রভাব যে মানুষের উপর পরবে না, এই গ্য়ারেন্টি কে দিতে পারে! কেউ কেউ বলতেই পারেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তো অনেক প্রাণীই হারিয়ে গেছে, তাতে মানুষের তো কোনও ক্ষতি হয়নি। একথা ঠিক যে বিজ্ঞান একথা মেনে নেয় যে জীবন চলতেই থাকবে। কোনও প্রাণী থাকলেও চলবে, না থাকলেও চলবে। কিন্তু এই শূন্যস্থান প্রকৃতি কীভাবে পূরণ করবে এবং তার প্রভাব মানব জাতির উপর কীভাবে পরবে তা যদিও অজানা। তবে অনেকেই একথা মনে নিয়েছেন যে সব মশা যেহেতু খারাপ নয়, তাই ভাল মশাদের ছেড়ে যদি রোগ বাহক অ্যানোফিলিশ মশারা বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কোনও ক্ষতি হবে না, বরং মানব জাতিয় সব দিক থেকে ভালই হবে।

যে মশা কমড়ায়, পরিবেশের ভাল-মন্দে তাদেরও ভূমিকা কম নেই:

যে মশা কমড়ায়, পরিবেশের ভাল-মন্দে তাদেরও ভূমিকা কম নেই:

এই পৃথিবী থেকে মশাদের চিহ্ন মুছে গেলে হয়তো উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে বেশি প্রভাব পরবে। কারণ সবথেকে বেশি মশার বাস এই দুই জায়গাতেই। কিন্তু মশার সঙ্গে এই দুই মেরুর পরিবেশর কী সম্পর্ক? পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর যে পরিমাণ পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে তাদের মূল খাদ্য হয় মশা। তাই যদি মশাই না থাকে, তাহলে প্রায় ৫০ শতাংশ পরিযায়ী পাখি আর দুই মেরুতে আসবে না। ফলে সেখানকার পরিবেশে বদল আসতে শুরু করবে। শুধু তাই নয়, এখানে ভিন দেশ থেকেও বাছরের নানা সময় লক্ষাধিক গবাদি পশু এই অংশে মাইগ্রেট হয়ে থাকে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যে জায়গায় মাশার ঝাঁক বেশি থাকে, সে জায়গা এড়িয়ে অন্য পথ বেছে নেয় এই গবাদি প্রাণীরা। এমনটা তারা বহু বছর ধরে করে আসছে। হঠাৎ যদি কোনও এক বছর এই মশার ঝাঁক না থাকে, তাহলে কোন দিকে যেতে হবে, তা তো বুঝতেই পারবে না এই গবাদি পশুরা। ফলে রাস্তা হারিয়ে হয়তো কাতারে কাতারে মারাই যাবে। আর এরা এত সংখ্যায় মারা গেলে মাংসাশী প্রাণীরা কী খাবে? এদের গোবরের মাধ্যে থাকা বীজের কারণে যে গাছেদের জন্ম হয় তো আটকে যাবে। ফলে পরিবেশের স্থিরতা বিঘ্নিত হবে। আর এমনটা হলে যে তার প্রভাব কোনও না কোনও সময় মানুষের উপরও পরবেই, তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে!

খাবারের অভাব দেখা দেবে:

খাবারের অভাব দেখা দেবে:

পরিবেশ সংক্রান্ত একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মশারা না থাকলে তাদের লার্ভাও থাকবে না। ফলে মাছেদের মূল খাদ্যে টান পরবে। আর এমনটা হলে শুধু মশারা নয়, খাদ্যের অভাবে একের পর এক মাছেদের প্রজাতিও বিলুপ্ত হতে থাকবে। প্রসঙ্গত, মশাদের লর্ভা খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীদের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। অনেক পোকা-মাকড়, মাকড়শা, টিকটিকি, এমনকী ব্যাঙেদের মূল খাদ্য হল মশা। তাই মশার না থাকলে মাছেদের মতো এদেরও হয়তো পৃথিবীর বুকে আর দেখা যাবে না।

পাখিদের সংখ্যা চোখে পরার মতো কমবে:

পাখিদের সংখ্যা চোখে পরার মতো কমবে:

সম্প্রতি প্রকাশিত এত সমীক্ষা রিপোর্টে প্রশ্ন করা হয়েছে, যেসব পাখিরা মূলত মশা খেয়ে বেঁচে থাকে তাদের কী হবে। মশারা না থাকলে তো এরাও পর্যাপ্ত খাবার পাবে না। তখন? পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে তখন কিছুটা বাধ্য হয়েই পাখিদের অন্য কিছু খেতে হবে। একই অবস্থা হবে বাদুড়দেরও। এমনটা চলতে থাকলে এক সময়ে গিয়ে মারাত্মক খাবারের অভাব দেখা দেবে। আর এমনটা হলে যে তা প্রাণী জগতের কাছে সুখবর নয়, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

সব শেষে:

সব শেষে:

তুল্য-মূল্য বিচার করে বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে মশারা না থাকলে পরিবেশে মারাত্মত একটা শূন্য়স্থান তৈরি হবে, যার প্রভাব ফুড চেনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত পরবে। কিন্তু কোনও প্রাণীই একমাত্র মশা বা তার লার্ভার উপর ভরসা করে বেঁচে নেই। তাই প্রভাবটা যে মারাত্মত কিছু হবে, তেমন নয়। বরং বহু মানুষ মশার কারণে হওয়া রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যুদ্ধে যেমন কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়, তেমনি মশারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে কিছু প্রাণী হয়তো মারা যাবে, কিন্তু মারাত্মকভাবে লাভবান হবে মানবজাতি। এমন ভবনায় আবার প্রমাণ করে মানুষ কতটা স্বার্থপর। তারা যে নিজের থেকে বেশি কারও কাথা ভাবে না, তা হয়তো আরেকবার প্রমাণ হয়ে যাবে যদি সত্যিই রোনও দিন এই পৃথিবী থেকে মশাদের চিহ্ন মুছে যায়।

English summary

আচ্ছা এই পৃথিবীতে যদি কাল থেকে একটা মশাও না থাকে তাহলে কী হবে জানেন?

There are 3,500 named species of mosquito, of which only a couple of hundred bite or bother humans. They live on almost every continent and habitat, and serve important functions in numerous ecosystems.
Story first published: Thursday, June 1, 2017, 11:55 [IST]
X
Desktop Bottom Promotion