Just In
শ্রাবণ মাসে শিব ঠাকুরের পাশাপাশি হনুমানজির আরাধনা করলে কী কী উপকার মিলতে পারে জানা আছে?
শ্রাবণ মাসে শিব ঠাকরের পুজো করলে যে একাধিক উপকার মেলে, সে বিষয়ে নিশ্চয় জানা আছে । কিন্তু একথা জানেন কি শ্রাবণ মাস চলাকালীন সোমবার শিব ঠাকুরের এবং মঙ্গলবার হনুমানজির পুজো করলে কী কী উপকার মিলতে পারে
শ্রাবণ মাসে শিব ঠাকরের পুজো করলে যে একাধিক উপকার মেলে, সে বিষয়ে নিশ্চয় জানা আছে । কিন্তু একথা জানেন কি শ্রাবণ মাস চলাকালীন সোমবার শিব ঠাকুরের এবং মঙ্গলবার হনুমানজির পুজো যদি করতে পারেন, তাহলে যে কোনও সমস্য়া মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পুরান অনুসারে শিব ঠাকুরের পুজো করলে যে উপকার পাওয়া যায়, সেই একই সুফল মেলে শনি দেব এবং হনুমানজির পুজো করলেও। কারণ শ্রী হনুমান হলেন দেবাদিদেবের দশম অবতার। আর শনি দেবের উপর ভগবান শিবের আশীর্বাদ রয়েছে সারাক্ষণ। এই কারণেই তো তো শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেবের আরাধনা করার পাশাপাশি শ্রী হনুমান নয়তো শনি দেবের পুজো করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, যাদের কুষ্টিতে শনির প্রভাব বেশি রয়েছে, তারা যদি নিয়মিত নীলকষ্ট এবং মারুথির পুজো করেন, তাহলে শনি দেব বেজায় প্রসন্ন হন। ফলে সাড়ে সাতি প্রভাব কমতে সময় লাগে না।
হনুমানজির পুজো করলে শনিদেব কেন প্রসন্ন হন? এই প্রশ্নের উত্তর যদি আরও স্পষ্ট করে পেতে চান, তাহলে হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা প্রাচীন সব বইয়ের দিকে নজর ফেরাতে হবে। আর এমনটা করলে একটা গল্পের সন্ধান পাবেন। কী সেই গল্প জানেন? নব গ্রহের প্রধান সূর্য দেব ছিলেন শ্রী হনুমানের শিক্ষক। জ্ঞান অর্জনের পাঠ শেষ হওয়ার পর হনুমানজি গুরু দক্ষিণা স্বরুপ সূর্য দেবকে কিছু দিতে চাইছিলেন। কিন্তু ছাত্রের গুণে প্রসন্ন শিক্ষক কিছুই নিতে রাজি ছিলেন না। অনেক জোর করার পর সূর্য দেব, শ্রী হনুমানকে অনুরোধ করেন যদি তার পক্ষে সম্ভব হয তাহলে যেন তিনি তার ছেলে শনিদেবকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। আর সেটাই হবে গুরু দক্ষিণা। গুরুর এমন কষ্ট দেখে হনুমানজি রাজি হয়ে যান। সেই মতো পৌঁছে যান শনির ডেরায়। এদিকে শিব ঠাকুরের আশীর্বাদে চরম ক্ষমতবান শনিদেব বাড়ি ফিরতে অরাজি হওয়ায় হনুমানজি তাঁকে অনুরোধ করতে শুরু করেন। কিন্তু মারুথির কথায় কর্ণপাত করা তো দূর, শনিদেব পবনপুত্রের লেজ নিয়ে মজা করতে শুরু করে দেন। এক সময়ে গিয়ে হনুমানজি এই অপমান সহ্য করতে না পেরে লেজ দিয়ে শনিদেবকে বেঁধে ফেলেন। এমনটা করায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা শনি দেব রাজি হয়ে যান বাড়ি ফিরতে। কিন্তু এমন যন্ত্রণায় দেব বাড়ি ফিরবেন কীভাবে? তাই হনুমানজি অল্প পরিমাণে তিল এবং সরষের এনে শনিদেবের শরীরে মালিশ করে দেন। সেই শুরু থেকেই শনির পুজো মানেই তিল এবং তেল পরিবেশন করা হবেই হবে। এবার বুঝেছেন তো হনুমানজির আরাধনা করলে শনিদেব কেন প্রসন্ন হন!
এখন প্রশ্ন হল সারা শ্রাবণ মাস জুড়ে প্রতি মঙ্গলবার হনুমানজির পুজো করলে কী কী উপকার মিলতে পারে?
১. নেগেটিভ শক্তি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:
একথা অনেকেই বিশ্বাস করেন যে আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করা আত্মা বা নেগেটিভ এনার্জি নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। এমন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত হনুমান চল্লিশা পড়া উচিত। কারণ হনুমানের ভয়ে যে কোনও ধরনের নেগেটিভ শক্তি দূরে থাকতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের খারাপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতেও হনুমান চল্লিশা সাহায্য করে থাকে। এবার বুঝতে পরেছেন তো দৈনন্দিন জীবনের টানাপোড়েনের মাঝেও সুখে থাকতে হনুমানের সঙ্গ নেওয়ার প্রয়োজন কতটা!
২. বুদ্ধির বিকাশ ঘটে:
শাস্ত্র মতে হনুমান জি-এর পুজো করা শুরু করলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে বুদ্ধির বিকাশ ঘটতেও সময় লাগে না। আর বুদ্ধির ধার বাড়তে শুরু করলে চাকরি হোক কী ব্যবসা, যে কোনও ক্ষেত্রেই সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. কর্মক্ষেত্রে পদন্নতি ঘটে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় এই বিশেষ মাসে হনুমান চল্লিশা পাঠ করার মধ্যে দিয়ে যদি নিয়মিত শ্রী হনুমানের অরাধনা করা যায়, তাহলে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ফলে মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতার স্বাদ পাওয়া যায়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে চোখে পরার মতো।
৪. শনির সাড়ে সাতির প্রভাব কমবে:
একথা তো সবারই জানা আছে যে শনির মহাদশা চললে জীবনে কোনও কিছুই ঠিক মতো চলে না। একের পর এক বাঁধায় দুর্বিসহ হয়ে ওঠে জীবন। এমন পরিস্থিতিতে সুখের সন্ধান দিতে পারে একমাত্র হনুমানজি। যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে নিয়মিত হনুমান চল্লিশা পড়া শুরু করলে শনির দশা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ বাঁধার জাল থেকেও মুক্তির সন্ধান মেলে।
৫. মনের জোর বাড়ে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে শ্রাবণ মাস চলাকালীন প্রতি মঙ্গলবার দেবের পুজো করার পাশাপাশি যদি হনুমান চল্লিশা পাঠ করা যায়, তাহলে মনের অন্দরে লুকিয়ে থাকা ভয় কাটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মনের জোর এতটা বেড়ে যায় যে কোনও বাঁধা পেরতেই সময় লাগে না। ফলে চলার পথটা বেজায় সহজ হয়ে যায় বৈকি।
৬. মনের সব ইচ্ছা পূরণ হয়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতি মঙ্গলবার হনুমান জি-এর পুজো করলে যে মনের ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, নিয়মিত দেবের আরাধনা করলে মনের মতো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
৭. গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে উঠবে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে শ্রাবণ মাসে প্রতি মঙ্গলবার হনুমান জির পুজো করা শুরু করলে খারাপ ভাগ্যের দোষ কাটতে শুরু করে। ফলে গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর এমনটা হলে চরম সাফলতার স্বাদ পেতে সময় লাগে না!
৮. যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক সমস্য়া মিটে যায় :
হনুমান জি তাঁর ভক্তদের বেজায় ভালবাসেন। তাই তো তাঁর পুজো করলে যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক কষ্ট কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পরিবারে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির আগমণ ঘটে। প্রসঙ্গত, অনেকেই আমাদের উপর খারাপ দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। এই কু-দৃষ্টির প্রভাব কাটতে সময় লাগে না যদি নিয়মিত হানুমান চল্লিশা পাঠ করা যায় তো। শুধু তাই নয়, জীবনের যে কোনও বাঁকে কেনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।