Just In
- 27 min ago আপনার কি ক্রমাগত কান চুলকাচ্ছেন? অজান্তেই ডেকে আনচ্ছেন বড় বিপদ
- 4 hrs ago মসুর ডাল খেতে ভালোবাসেন? কিন্তু অতিরিক্ত খেলে হতে পারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!
- 5 hrs ago অনলাইন গেমে বাচ্চারা ঘরকুঁনো! জানেন কি স্বাস্থ্যের জন্য় কতটা উপকারি আউটডোর গেম?
- 5 hrs ago সূর্যগ্রহণের সময় ঘটবে মা দুর্গার আগমন, তবে কি গ্রহণকালে পড়বে মায়ের পূজায় বাধা?
প্রতি সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন? আর এমনটা করলে কী কী উপকারই বা পাওয়া যায়?
প্রতিদিন যদি শিব লিঙ্গের উপর জল ঢালা হয়, তাহল কিন্তু বাস্তবিকই নানা উপরকার মেলে। আর যদি সোমবার এই প্রথা মেনে দেবাদিদেবের অরাধনা করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই!
এ প্রথা শত বছর ধরে চলে আসছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন যে সপ্তাহের এই বিশেষ দিনে শিব লিঙ্গের উপর জল ঢালার পর ফুল,চন্দন এবং বেলপাতা সহকারে যদি দেবের অরাধনা করা হয়, তাহলে মনের সব ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না। কিন্তু এই ধারণা কতটা সত্যি, তারই সুলুক সন্ধান করার চেষ্টা করা হবে এই প্রবন্ধে। তবে শুরুতেই একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত যে প্রতিদিন যদি শিব লিঙ্গের উপর জল ঢালা হয়, তাহল কিন্তু বাস্তবিকই নানা উপরকার মেলে। আর যদি সোমবার এই প্রথা মেনে দেবাদিদেবের অরাধনা করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! কারণ শাস্ত্র মতে সোমবার হল শিব ঠাকুরের আরাধনা করার দিন। তাই তো এদিন সর্বশক্তিমানের অরাধনা করলে আরও বেশি মাত্রায় উপকার পাওয়ার সম্ভবনা যায় বেড়ে।
এখন প্রশ্ন হল শিব লিঙ্গের মাথায় জল ঢালার প্রথা শুরু হল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে শিব পুরাণে উল্লেখিত একটা গল্পের দিকে নজর ফেরাতে হবে। কী গল্প! পূরাণ মতে এক সময় ভগবান বিষ্ণু এবং লর্ড ব্রহ্মার মধ্যে ভিষণ বিবাদ দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে লড়াই প্রায় বাঁধে বাঁধে। সেই সময় হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলতে থাকা একটা কালো পিলার দুই দেবাতার মাঝে আর্বিভাব হয়। এই পিলার হঠাৎ করে এল কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্রহ্মা ঠিক করেন পিলারের উপরের দিকে গিয়ে দেখবেন কোথায় এর শেষ, আর বিষ্ণু দেব যাবেন নিচের দিকে। সেই মতো দুজনে বেরিয়ে পরলেন। কিন্তু কোটি বছর কেটে যাওয়ার পরেও কেউই পিলার শুরু অথবা শেষ প্রান্ত খুঁজে উঠতে পারলেন না। অবশেষ বিষ্ণু দেব ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল এই কালো স্তম্ভ হল অনন্ত। অর্থাৎ এর না আছে শুরু, না শেষ। কিন্ত অন্যদিকে পিলার উপরের দিকে চলতে চলতে ব্রহ্মা দেখতে পেলেন একটা কেতকী ফুল পরে রয়েছে। কোটি বছরে চলে ক্লান্ত ব্রহ্মা দেব ঠিক করলেন কিছু সময় ওকটু জিরিয়ে নেবেন এবং এমন আজব স্থানে কেতকী এল কীভাবে তাও জেনে নেবেন। সেই মতো তিনি কেতকীকে প্রশ্ন করাতে জবাব এল, "আমি ভগবান শিবের মাথায় ছিলাম। এক সময় আমার মনে হল আমার থেকে শক্তিশালী আর কেউ না, কারণ আমার স্থান দেবাদিদেবর মাথায়।" আর ঠিক সে সময়ই শিব ঠাকুর মাথা দোলাতে কেতকি ফুল পরে গেলেন সর্বশক্তিমানের মাথা থেকে। সেই থেকেই এই স্থানে পরে রয়েছে কেতকী ফুল। ঘটনাটা শুনতে শুনতেই ব্রহ্মার মাথায় একটা প্ল্যান খেলে গেল। তিনি কেতকীকে বললেন ফুলটি যদি তাঁর সঙ্গে যায় এবং বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বলে যে ব্রহ্মা এই পিলারের শেষ প্রান্ত খুঁজে পেয়েছেন, তাহলে ব্রহ্মা দেব স্বয়ং কেতকীকে আশীর্বাদ করবেন। ব্রহ্মার কথা শুনে ফুলটি রাজি হয়ে গেলে এবং বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বললো, কেতকী সাক্ষী ছিল যখন ব্রহ্মা পিলারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ছিলেন। কিন্তু বিষ্ণু দেব নিজ অসফলতা মেনে নিলেন। আর ঠিক তখনই দেবাদিদেবের আর্বিভাব ঘটল। ব্রহ্মা এবং কেতকীকে মিথ্যা কথা বলতে দেখে দেবাদিদেব এতটাই রেগে গেলেন যে ভৈরব অবতারে এসে ব্রহ্মার পঞ্চম মাথা কেটেই ফেললেন। আর কেতকীকেও চরম শাস্তি দিলেন। আর সত্যের সাথে থাকার জন্য ভগবান বিষ্ণুকে দু হাত ভরে আশীর্বাদ করলেন দেবাবিদেব।
আসলে অগুনে জ্বলতে থাকা ওই কালো থামটি ছিস শিব লিঙ্গ। যার মধ্যে উপস্থিত রয়েছে এ জগতের অনন্ত শক্তি। আর এত মাত্রায় শক্তি যেখানে মজুত রয়েছে তাকে ঠান্ডা রাখতে না পারলে যে বিপদ! আর ঠিক এই কারণেই শিব লিঙ্গের মাথায় জল ঢালার প্রথা শুরু হয়। আর যদি আপনিও প্রতিদিন লিঙ্গের শরীরে জল ঢালতে পারেন, তাহলে দেবাদিদেব বেজায় প্রসন্ন হন, সেই সঙ্গে আশেপাশে পজেটিভ শক্তির মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তার প্রভাবে নানাবিধ উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে। যেমন ধরুন...
১. শরীর এবং মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিদিন শিব লিঙ্গের উপর জল ঢাললে খারাপ শক্তির প্রভাব যেমন কমতে থাকে, তেমনি মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেসের মাত্রায় হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, পজেটিভ শক্তির প্রভাবে ছোট-বড় নানা রোগও দূরে পালায়। ফলে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে ভারতীয় যুব সমাজের একটা বড় অংশ স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের শিকার, যে কারণে আত্মহত্যার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেবাদিদেবের আরাধনা করার পাশাপাশি শিব লিঙ্গে জল ঢালার প্রয়োজন যে বেড়েছে সে বিষয়ে কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই!
২. পরিবেশ শুদ্ধ হয়ে ওঠে:
শাস্ত্র মতে শিব লিঙ্গের অন্দরে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পজেটিভ শক্তি, যা জল ডালা মাত্র আশেপাশে ছড়িয়ে পরে। ফলে পরিবেশ যেমন শুদ্ধ হয়ে ওঠে। তেমনি পজেটিভ শক্তির প্রভাবে নানাবিধ দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটতেও সময় লাগে না। সেই সঙ্গে সুখের ঝাঁপিও ভরে ওঠে।
৩. সুখ এবং সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে:
নিয়মিত শিব লিঙ্গে জল ঢালা শুরু করলে দেবাদিদেব তো প্রসন্ন হনই, সেই সঙ্গে দেবের পুত্র গণেশ ঠাকুরও বেজায় খুশি হন। ফলে বাপ্পার আশীবার্দে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি জীবন পথে চলতে চলতে সামনে আসা যে কোনও সমস্যা এবং বাঁধার পাহাড় সরে যেতেও সময় লাগে না।
৪. মনের সব ইচ্ছা পূরণ হয়:
মনের মণিকোঠায় সযত্নে সাজিয়ে রাখা প্রতিটি স্বপ্ন এ জন্মেই পূরণ হোক, এমনটা যদি চান, তাহলে শিব লঙ্গে জল এবং দুধ ঢালতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে ভোলেনাথ এতটাই খুশি হন যে মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগে না।
৫. জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত মেলে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত দেবের অরাধনা করা শুরু করলে স্বর্গের দরজা খুলে যায়। শুধু তাই নয়, জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকেও মুক্তি মেলে। ফলে মোক্ষ লাভের পথ প্রশস্ত হয়।
৬. গ্রহ দোষ কেটে যায়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিদিন শিব লিঙ্গে জল ঢালার মধ্যে দিয়ে ভোলানাথের অরাধনা করলে জন্মকুষ্টিতে থাকা গ্রহ-লক্ষত্রের খারাপ প্রভাব কেটে যেতে সময় লাগে না। ফলে জীবন পথে চলতে চলতে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখিন হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
৭. প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটে:
আজকের দুনিয়ায় যেখানে বেশিরভাগই নিজেদের ভাল ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। সেখানে আমাদের ক্ষতি করতে চায়, এমন লোকের সংখ্যা যে নেহাতই কম নয়, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তাই তো বলি বন্ধু, নিজেকে যদি প্রতিপক্ষদের মার থেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়, তাহলে দেবের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না যেন। আসলে শ্রাস্ত্র মতে প্রতি সোমবার শিবের অরাধনা করার পাশাপাশি জল, দুধ এবং মধু লিঙ্গে ঢাললে দেবের আশীর্বাদ লাভ হয়। ফলে প্রতিপক্ষদের নিকেশ ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কালো যাদুর প্রভাবও কেটে যায়। ফলে কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে।
৮. কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতার স্বাদ মেলে:
৩০ পেরতে না পেরতেই কি বাড়ি, গাড়ি এবং মোটা মাইনের চাকরি পেতে চান, তাহলে বন্ধু, সোমবার করে শিব লিঙ্গে জল ঢালতে বুলবেন না যেন! সেই সঙ্গে পঞ্চকশরা স্তোত্রটি পাঠ করবেন, তাহলেই দেখবেন কেল্লাফতে! কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করলে সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ লাভ হয়। ফলে মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ তো হয়ই, সেই সঙ্গে কর্মজীবনে চরম সফলতার স্বাদ মিলতেও সময় লাগে না।
৯. মনের জোর বাড়ে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে শিবের মাথায় জল ঢাললে দেবের আশীর্বাদে মনের জোর এতটা বেড়ে যায় যে ভয়ের পাহাড় পেরতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, মানসিক অবসাদ এবংদুশ্চিন্তা কমতেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু মনের জোরকে সঙ্গী করে যদি জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে বিজয় পতাকা স্থাপন করতে হয়, তাহলে এই প্রথাটি মেনে শিব ঠাকুরের আরাধনা করতে ভুলবেন না যেন!