Just In
বাড়িতে যদি শঙ্খ রাখেন তাহলে কিন্তু এই নিয়মগুলি মেনে চলা জরুরি! নাহলে...
বাড়িতে শঙ্খ রাখলে কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। কারণ এই নিয়মগুলি না মানলে ভাল হওয়ার থেকে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে শঙ্খের যোগ আজকের নয়। সেই কোন কাল থেকে পুজো-অর্চনার কাজে লেগে আসছে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। শাস্ত্র মতে নিত্য পুজো শুরু করার আগে এবং পরে যদি নিয়ম করে শঙ্খ বাজানো যায়, তাহলে গৃহস্থের অন্দরে শুভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ভাগ্যও ফিরে যায়। ফলে জীবন সুখ-শান্তিতে এবং আনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, শুভ শক্তির উপস্থিতির কারণে কু-দৃষ্টি এবং কালো যাদুর প্রভাবও কাটতে শুরু করে। এই কারণেই তো প্রতিদিন শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বাড়িতে শঙ্খ রাখলে কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। কারণ এই নিয়মগুলি না মানলে ভাল হওয়ার থেকে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
এক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই পাবেন, তবে তার আগে শঙ্খের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। পুরাণে এমনটা উল্লেখ পাওয়া যায় যে সমুদ্রমন্থনের সময় মহাসমুদ্রের গর্ভ থেকে উঠে এসেছিল শঙ্খ, যা পরে জায়গা পায় ভগবান বিষ্ণুর হাতে। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে চন্দ্র, সূর্য এবং বরুণ দেব শঙ্খের একেবারে নিচে অবস্থান করেন। মধ্যভাগে থাকেন প্রজাপতি এবং বাকি অংশে অবস্থান করেন মা গঙ্গা এবং সরস্বতী। এই কারণেই তো বাড়িতে শঙ্খ রাখলে এই সব দেব-দেবীর আশীর্বাদ পাওয়া লাভ করা সম্ভব হয়। ফলে জীবন বদলে যেতে সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও একথা মেনে নিয়েছে যে নিয়মিত শঙ্খ বাজালে তার থেকে সৃষ্টি হওয়া শব্দ তরঙ্গের কারণে গৃহস্থের অন্দরে বাসা বেঁধে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা মারা পরে। ফলে রোগ-ভোগের আশঙ্কা যায় কমে।
এবার ফিরে আসা যাক প্রথম প্রশ্নে, যে বাড়িতে শঙ্খ রাখলে কী কী নিয়ম মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল...
১. বাজানোর এবং পুজোর শঙ্খ আলাদা হতে হবে:
খেয়াল করে দেখবেন পুজো শুরু এবং শেষ করার পর যে শঙ্খ বাজানো হয়, তাতে কিন্তু পুজো চলাকালীন দেবকে জল নিবেদন করা হয় না। এক্ষেত্রে একটি ছোট শঙ্খে জল ভরে তা দেবের সামনে আরতি করা হয়। আসলে এমনটা করার পিছনে একটি কারণ আছে। কী কারণ? দেবেকে যা কিছুই নিবেদন করা হয়, তা শুদ্ধ এবং পবিত্র হেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু যে শঙ্খ আমরা বাজাই, তা আমাদের সংস্পর্শে আর শুদ্ধ থাকে না। তাই তো এই নিয়মটি মেনে চলতে ভুলবেন না যেন!
২. ঠাকুর ঘরের দরজা খোলার আগে শঙ্খ বাজাতেই হবে:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিদিন সকালে স্নান সেরে নিত্য পুজো শুরু করার আগে শঙ্খ বাজানো একান্ত প্রয়োজন। কারণ শঙ্খ না বাজিয়ে ঠাকুর ঘরের দরজা খুললে নাকি দেবের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সেই সঙ্গে গৃহস্থের অন্দরে খারাপ শক্তির প্রবেশ ঘটার আশঙ্কা যায় বেড়ে। তাই তো এই বিষয়টি মাথায় রাখতে ভুলবেন না যেন! প্রসঙ্গত, বরাহ পুরাণেও এই নিয়মটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই তো এবার থেকে ঠাকুর ঘরের দরজা খোলার আগে কম করে তিনবার শঙ্খ বাজিয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার পাবেনই।
৩. ভগবান বিষ্ণুর আগমণ ঘটে:
শাস্ত্র মতে শঙ্খ বাজানোর সময় সেই স্থানে শ্রী বিষ্ণুর আগমণ ঘটে। ফলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের দুঃখ দূর হয়। সেই সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে সামাজিক এবং কর্মজীবনেও সম্মান বৃদ্ধি পায়। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তা হল শঙ্খ বাজানোর পর তা ভাল করে ধুয়ে নিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ের উপর রাখবেন। ভুলেও অপরিষ্কার জয়গায় কিন্তু শঙ্খ রাখবেন না। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি শ্রী বিষ্ণুর হাতে শোভা পায়, তাই শঙ্খের ঠিক মতো দেখভাল করাটা জরুরি!
৪. ভুলেও বাড়িতে শঙ্খনি রাখবেন না যেন!
কী এই শঙ্খনি? আসলে শঙ্খ মূলত দু ধরনের হয়, পুরুষ শঙ্খ এবং মহিলা শঙ্খ। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে বাড়িতে মহিলা শঙ্খ বা শঙ্খনি রাখা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এমনটা করলে নেগেটিভ শক্তির প্রভাব বাড়তে শুরু করে। ফলে একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যায় বেড়ে। শুধু তাই নয়, শাস্ত্র মতে শঙ্খনি একেবারেই পবিত্র বস্তু নয়, তাই এ জিনিস বাড়িতে রাখলে গৃহস্থের প্রতিটি কোন অপবিত্র হয়ে যায়। ফলে দেব-দেবীদের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। আর এমনটা হলে কী কী ক্ষতি হতে পরে, তা নিশ্চয় আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
৫. আরও যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:
এক্ষেত্রে আরও কতগুলি নিয়ম মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন: শঙ্খের মুখ যেন সব সময় দেবতাদের দিকে থাকে। এমনটা করলে তবেই কিন্তু বাড়িতে পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরও যে যে বিষযগুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল- ঠাকুর ঘরে দুটো বাজানোর শঙ্খ ভুলেও রাখবেন না, শঙ্খে জল ভরে শিব লিঙ্গের উপর ফেলবেন না এরং যে শঙ্খ বাজানোর জন্য ব্যবহার করছেন, তা ভুলেও পুজোর কাজে লাগাবেন না যেন!