Just In
হিন্দুরা দীপাবলির সময় প্রদীপ জ্বালায় কেন?
দিওয়ালি একটি খুবি জনপ্রিয় হিন্দু উৎসব। এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভারতীয় উৎসব যা অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পালিত হয়। আক্ষরিক অর্থে দীপাবলি মানে "আলোর সারি"। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে আলো বা প্রদীপ এই উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দীপাবলিতে, প্রতিটি বাড়ি তেল বা ঘি-এর প্রদীপ, মোমবাতি ও ইলেক্ট্রিক লাইট দিতে সাজানো হয়। প্রথাগতভাবে, মাটির প্রদীপে তুলোর তৈরী সলতে দিয়ে বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর আলোকিত করা হয়ে থাকে। যদিও এই পরিবর্তনশীল আধুনিক সময়ে অনেক ঘরেই মোমবাতি মাটির প্রদীপের জায়গা নিয়ে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও, এই আলোর উৎসবের ধারনা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
আপনার কি মনে হয়েছে যে হিন্দুরা দীপাবলির সময়ে কেন এতো আলো এবং প্রদীপ জ্বালায়? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রদীপ জ্বালানোর পিছনে কিংবদন্তী
ভারতের উত্তর অংশে, বিখ্যাত আখ্যান অনুযায়ী, এটি সেই সময় যখন ১৪ বছর নির্বাসনের পর প্রভু রাম তার স্ত্রী ও ভাইকে সাথে নিয়ে অযোধ্যা ফিরে এসেছিলেন। মানুষ প্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে তাদের রাজার প্রত্যাবর্তন উদযাপন করেছিলেন। এইভাবেই, দীপাবলিতে প্রদীপ জ্বালানোর ঐতিহ্য প্রচলিত হয়ে আসছে।
ভারতের দক্ষিণ অংশে, মানুষ কুখ্যাত দৈত্য, নারকাসুরের ওপর দেবী দুর্গার বিজয় কে উদযাপন করে। অত:পর, নরকা চতুর্দশীর দিনে দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা অশুভের ওপর শুভ, অন্ধকার উপর আলোর জয়জয়কার কে চিহ্নিত করতে প্রদীপ জ্বালান।
প্রদীপ জ্বালানোর তাৎপর্য
হিন্দুধর্মে আলো তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আলো পবিত্রতা, সদগুণ, সৌভাগ্য এবং পরাক্রমকে সূচিত করে। আলোর উপস্থিতি অর্থাৎ অন্ধকার এবং অপশক্তির অনুপস্থিতি। যেহেতু, দীপাবলি অমাবস্যার রাতে পালন করা হয় তাই চারদিকে নিকষ অন্ধকার থাকে আর এই অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে মানুষ সর্বত্র লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে রাখে। বিশ্বাস করা হয়, নিকষ অন্ধকারেই অশুভ আত্মা ও অশুভ শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই এই অশুভ শক্তিকে দুর্বল করতে ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় বাতি বা প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে।
দীপাবলিতে প্রতিটি দরজার বাইরে প্রজ্বলিত আলো এটিই নিদর্শিত করে যে আমাদের মনের আভ্যন্তরিন আধ্যাত্মিক আলোকেও একইভাবে আমাদের বাইরে অবশ্যই প্রতিফলিত করতে হবে। এছাড়াও, এটি ঐক্যের একটি গ্রুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। একটি প্রদীপ নিজের আলোকে প্রভাবিত না করেও একাধিক প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে পারে। অত:পর, দীপাবলির সময় প্রদীপ প্রজ্বলিত করা, একইসাথে আধ্যাত্মিকভাবে ও সামাজিকভাবে সমগ্র মানবজাতীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।