Just In
(ছবি) মহাভারতের নানা অজানা ঘটনা, যা আপনি শোনেননি
মহাভারত ভারতের সেরা দুই মহাকাব্যের অন্যতম। বেদব্যাসের লেখা এই মহাকাব্য হিন্দুত্বের মূর্ত প্রতীক।
মহাভারত বললেই আমাদের মনে বহু ঐতিহাসিক চরিত্র এসে ভিড় করে। একদিকে পাণ্ডবদের জীবন সংগ্রাম ও অন্যদিকে প্রভাবশালী কুরু বংশের নানা কীর্তি। এবং সবশেষে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
মহাভারতের পরতে পরতে লেগে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের এক অনবদ্য ছোঁয়াচ। মহাভারত বহু ছোট-বড় ঘটনাকে মিলে তৈরি হয়েছে। এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা এখনও অনেকেরই অজানা থেকে গিয়েছে। নিচের স্লাইডে দেখে নিন মহাকাব্য মহাভারতের কিছু অজানা ঘটনা।
দুর্যোধনের বর
পাণ্ডবরা যখন আত্মগোপন করে ছিল তখন গান্ধর্ব্যদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন দুর্যোধন। সেখানে আটকে রাখা হয় তাঁকে। সেইসময় অর্জুন গিয়ে লড়াই করে দুর্যোধনকে মুক্ত করেন।
ক্ষত্রীয় হিসাবে সেই ঘটনায় খুশি হয়ে অর্জুনকে বর দিতে চান দুর্যোধন। যখন খুশি তা চেয়ে নিতে পারেন অর্জুন সেটাই ঠিক হয়।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়, পিতামহ ভীষ্ম ছিলেন দলনায়ক। পাণ্ডবদের হত্যা করতে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, দুর্যোধন এমন অভিযোগ করলে পঞ্চপাণ্ডবকে খতম করতে পাঁচটি মন্ত্রপুতঃ তির তুলে নেন ভীষ্ম।
অর্জুনের সারথি কৃষ্ণ এই ঘটনা জানতে পেরে অর্জুনকে সেই বর চাইতে বলেন। বর হিসাবে দুর্যোধনের কাছে সেই পাঁচটি তির চান অর্জুন। ক্ষত্রীয়রা কথা দিতে ফেরাতে পারে না। এইজন্য সেই তিরগুলি দিতে বাধ্য হন দুর্যোধন। পরে ভীষ্মের কাছে তিনি জানতে পারেন, ওরকম তির আর পিতামহের ঝুলিতে নেই, বেঁচে যায় পঞ্চপাণ্ডব।
ইরাবনের আত্মত্যাগ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে মা কালীর কাছে কাউকে আহূতি দিতে হত যাতে যুদ্ধে জেতা নিশ্চিত হয়। অর্জুন পুত্র ইরাবন নিজের প্রাণ তাতে উৎসর্গ করেন। তবে ইরাবনের ইচ্ছা ছিল বিয়ের আগে বিয়ে করার।
এই ইচ্ছা পূর্ণ করা কঠিন ছিল কারণ কোনও মহিলাই বিয়ের পর বিধবা হতে রাজি ছিল না। ফলে শ্রীকৃষ্ণ মোহিনীর বেশে হাজির হয়ে ইরাবনকে বিয়ে করেন।
তামিলনাড়ুর কোভাগম গ্রামে প্রতিবছর ইরাবনকে মাথায় রেখে উৎসব হয়। ১৮ দিনের এই উৎসবে রূপান্তরকামীরা জড়ো হয়ে একদিনের জন্য ঈশ্বরকে বিয়ে করেন।
উডুপির রাজা
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ে সব রাজারাই কোনও না কোনও পক্ষে যোগদান করেছিলেন। তবে একমাত্র উডুপির রাজা নিরপেক্ষ ছিলেন। তিনি জানান, যুদ্ধে ব্যস্ত দুপক্ষকেই তিনি খাবার সরবরাহ করবেন।
যুদ্ধ শুরু হলে দেখা যায়, কোনও দিনই খাবার কম পড়ে না, আবার বেশিও হয় না। ফি দিন বহু সৈন্য মারা যাচ্ছে অথচ সবার জন্য একেবারে ঠিকঠাক খাবারের আয়োজন কিভাবে সম্ভব ছিল?
জিজ্ঞাসা করা হলে রাজা জানিয়েছিলেন, প্রতিদিন রাতে তিনি ভগবান কৃষ্ণকে এক বাটি বাদাম ভোগ দেন। তারমধ্যে থেকে ১০টি বাদাম ভগবান গ্রহণ করা মানে তিনি বুঝে যেতেন পরের দিন ১০ হাজার সৈন্য মারা যাবে। সেই অনুযায়ী পরের দিন তিনি সৈন্যদের জন্য খাবার বানাতেন।
দাতা কর্ণ
মহাবীর কর্ণ 'দাতা কর্ণ' রূপেও পরিচিত। বহুরূপী ইন্দ্রকে তিনি কবচ ও কুণ্ডল দান করেছিলেন তা সবাই জানেন। তবে এটা অনেকেই জানেন না যখন কুরুক্ষেত্রে শেষ নিঃশ্বাস পড়ছে কর্ণের তখন ভগবান কৃষ্ণও ব্রাহ্মণের বেশে হাজির হন কর্ণের সামনে। তাঁর কাছে একটু সোনার দাবি করেন। তা শুনে কর্ণ তাঁর সোনা বাঁধানো দাঁত দিতে চান। ব্রাহ্মণ হয়ে দাঁত ভেঙে তা নিতে অস্বীকার করেন শ্রীকৃষ্ণ। তখন কর্ণ নিজে থেকে পাথর দিয়ে দাঁত ভেঙে দেন। তাতে রক্ত লেগে থাকায় তাও নিতে অস্বীকার করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
তখন আকাশে তির মেরে বৃষ্টি নামিয়ে তাতে দাঁত ধুয়ে তা কৃষ্ণকে দেন দাতা কর্ণ। এরপর ভগবান নিজের বেশে হাজির হয়ে কর্ণকে বর চাইতে বলেন। জীবনের শেষ লগ্নে ভগবানের দেখা পাওয়াই সবচেয়ে বড় বর, এই জবাব দিয়েই কর্ণ মারা যান।
দুর্যোধনের বিশ্বাস
দুর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতী ও কর্ণ একদিন পাশা খেলছিলেন। কর্ণ বসেছিলেন দরজার দিকে পিছন করে। খেলায় হেরে যান ভানুমতী। সেইসময়ই দুর্যোধন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই ভয় পেয়ে ভানুমতী পালিয়ে যেতে যান। সেসময়ে পরপুরুষের সঙ্গে সময় কাটানো অলৌকিক ব্য়াপার ছিল।
দুর্যোধন য়ে ঘরে এসে গিয়েছে, কর্ণ তা না বুঝেই পালাতে যাওয়া ভানুমতীর হাত চেপে ধরতে যান। তখন ভানুমতীর গলার মতির হার ছিঁড়ে ছত্রাকার হয়ে যায়। দুর্যোধন সব দেখেও না দেখার ভান করে মতি কুড়োতে ব্যস্ত হয়ে যান। কারণ কর্ণকে তিনি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন এবং জানতেন তিনি কোনও খারাপ কাজ করতে পারেন না।