Just In
কালী পুজোর আগের দিন সকাল সকাল গঙ্গা স্নান করা উচিত কেন জানা আছে?
কালী পুজোর আগের দিন, মানে নরক চতুর্দশির দিন সূর্য ওঠার আগে যদি গঙ্গা স্নান করা যায়, তাহলে আমাদের জীবনে ঘটতে থাকা নানা সমস্য়া মিটে যেতে সময় লাগে না।
কথায় বলে হিন্দু শাস্ত্র হল সেই খনি যেখানে "এক সে বারকার এক" রত্ন মজুত রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল কখনও অধুনিকতার নাম নিয়ে, তো কখনও অবিশ্বাসের অন্ধকারে অন্ধ হয়ে আমরা সেই সব রত্নকে পায়ে ঠেকাই। তাই তো হাতের কাছেই সব দুঃখ, দুর্দাশা থেকে মুক্তির পথ থাকলেও আমরা সে পথে চলতে চাই না, বরং অজান্তেই এই দুঃখের চোরা বালিতে আরও, আরও ভেতরে চলে যেতে থাকি। আর এক সময় দম বন্ধ হয়ে, ডিপ্রেশন নামক খাদে ঝাপ মারি। এইভাবেই শেষ হয়ে যায় এক একটা জীবন। কিন্তু তবু আমরা একবারও আমাদের বিশ্বাসকে সঙ্গী করে শাস্ত্রের দেখানো পথে এগতে চাই না। কিন্তু কেন, কেন এত অবিশ্বাস...? কই খ্রিষ্টানরা তো বাইবেলের লেখা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে না, করে না মুসমিলরাো। তাহলে আমরা কেন!
আজ সকাল সকাল এত কথা বলে আপনাদের "বোর" করছি কেন জানেন? কারণ এই লেখায় আজ এমন এক প্রাচীন রীতির উপর আলোকপাত করা হবে, যা শুনলে আপনারা বলবেন, "এ সবই অন্ধবিশ্বাস"। তাই তো এতো কথা বলা। একথা ঠিক যে হিন্দু ধর্মের উপর লেখা প্রাচীন সব বইয়ে যা যা লেখা রয়েছে সব হয়তো সত্যি নয়, কিন্তু তাই বলে পুরো সংস্কৃতিটাকে মিথ্য়া প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়! এই কারণেই তো সত্যিটুকুর সুলুক সন্ধান করতে হবে আমাদের। আর এমনতা করতে হবে কতকটা নিজের স্বার্থেই...!
কী রীতির কথা বলছি তাই ভাবছেন তো? আসলে বন্ধু এমন বিশ্বাস রয়েছে যে কালী পুজোর আগের দিন, মানে নরক চতুর্দশির দিন সূর্য ওঠার আগে যদি গঙ্গা স্নান করা যায়, তাহলে আমাদের জীবনে ঘটতে থাকা নানা সমস্য়া মিটে যেতে সময় লাগে না। কারণ শাস্ত্র মতে এদিনই শ্রী কৃষ্ণ, নরকাশুর নামে এক রাক্ষসকে বধ করেছিলেন। তাই এই বিশেষ দিনে খারাপের পরাজয় ঘটেছিল। এই কারণেই তো এমন বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে যে এমন দিনে ভক্তি ভরে গঙ্গা স্নান করলে আমাদের আশেপাশে উপস্থিত খারাপ শক্তির প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ ঘঠনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি খারাপ সময়ও কেটে যেতে শুরু করে। আর একবার যখন ভাগ্য সহায় হয়, তখন আর কিসের ভয়! তবে নরক চতুর্দশির দিন গঙ্গা স্নান করলে যে কেবল খারাপ শক্তির হাত থেকে মুক্তি মেলে এমন নয়, আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. সারা শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়:
সকাল সকাল গায়ে সরষের তেল মেখে গঙ্গায় ডুব মারলে সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। আর এমনটা যখন হয়, তখন সারা শরীর যেমন চাঙ্গা হয়ে ওঠে, তেমনি একাধিক রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষমতাও বাড়ে।
২. মন ঠান্ডা হয়:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নরক চতুর্দশির দিন গঙ্গা স্নান করলে আমাদের শরীর এবং মন পবিত্র হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে মন এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না। আর সব দুশ্চিন্তা যখন দূরে পালায়, তখন জীবনে আনন্দের ঘাটতি যে আর কখনও হয় না, তা তো বলাই বাহুল্য! তাই তো বলি বন্ধু, সব দুশ্চিন্তা এবং সমস্যাকে পিছনে ফেলে যদি একটা আনন্দময় জীবন কাটাতে হয়, তাহলে একবার মনে বিশ্বাস নিয়ে গঙ্গায় ডুব লাগাতে ভুলবেন না যেন!
৩. কালো যাদুর প্রভাব কেটে যায়:
আজকের দুনিয়ায় সবাই যেখানে কেবল নিজের কথা ভাবে, সেখানে বহু মানুষ যে আপনার ক্ষতি চায়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! আর ক্ষতি করার বাসনায় অনেকেই যে আজও কালো যাদুর উপর ভরসা করে থাকে, তা তো বলাই বাহুল্য! তাই তো বলি বন্ধু, এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচাতে নরক চতুর্দশির দিন গঙ্গা স্নান করতে ভুলবেন না যেন! আসলে এমনটা মানা হয় যে এমন বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নান করলে কালো যাদুর প্রভাব কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে শুভ শক্তির প্রভাবে নানাবিধ বিপদ ঘটার আশঙ্কাও যায় কমে।
৪. জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি মেলে:
শাস্ত্রে বলে মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে শুধু শরীর ধ্বংস হয়। আত্মা তো এক শরীর থেকে আরেক শরীরে এসে বাসা বাঁধে। এইভাবেই চলতে থাকে অনন্তকাল। আচ্ছা এই জন্ম-মৃত্যুর খেলা থেকে কি মুক্তি মেলা সম্ভব নয়? কে বললে সম্ভব নয়! আলবাৎ সম্ভব। তবে তার জন্য নরক চতুর্দশির দিন গঙ্গা স্নান করাটা মাস্ট! আসলে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এমন দিনে গঙ্গায় ডুব দিলে জাগতিক সব পাপ ধুয়ে যায়। সেই সঙ্গে জন্ম-মৃত্যুর এই বৃত্ত থেকেও মুক্তি মেলে।
৫. শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা মারা পরে:
বিখ্যাত ব্রিটিশ ফিজিশিয়ান ডাঃ ই হনবিউরি বহ্যনকিনের করা এক স্টাডি অনুসারে সূর্যোদয়ের আগে গঙ্গা স্নান করলে আমাদের শরীরে উপস্থিত নানাবিধ ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে নানাবিধ ক্রণিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। কি বন্ধু এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন এমন বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নানের যেমন স্পিরিচুয়াল মাহাত্ম রয়েছে, তেমনি শারীরিক সুফলগুলিকেও অবজ্ঞা করাও সম্ভব নয়।
গঙ্গা স্নানের নিয়ম:
নরক চতুর্দশির দিন এই গঙ্গা স্নানকে শাস্ত্রে "অভয়াং স্নান" বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কতগুলি নিয়ম মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন-
১. এমন বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নান করতে হবে সূর্য ওটার আগে। তাই এদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে ভুলবেন না যেন!
২. স্নানের পূর্বে এক মনে গঙ্গা মায়ের নাম নিতে হবে। সেই সঙ্গে মনে মনে নিজের সব ইচ্ছা সম্পর্কে মাকে জানাতে হবে। এরপর স্নানের পালা।
৩. স্নান সেরে বাড়ি পৌঁছে সারা বাড়িতে গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। এমনটা করলে গৃহস্থে উপস্থিত খারাপ শক্তির প্রভাব যেমন কমবে, তেমনি সারা বাড়ি পবিত্র হয়ে উঠবে।
৪. এবার রাঙ্গলী বা আলপোনা দেওয়ার পালা। স্নান সেরে বাড়ি ফেরার পর সারা বাড়িতে রাঙ্গলী বা আলপোনা দিয়ে এক মনে মা কালীর নাম স্মরণ করতে হবে। সুযোগ থাকলে মায়ের পুজোর আয়োজনও করতে পারেন। কারণ এমনটা করলে নানাবিধ সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে।