Just In
কেন ১৪ শাক খাওয়া হয় ভূত চতুর্দশীতে? কেনই বা ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়?
কথায় আছে, বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। বছরের বেশিরভাগ দিনই কোনও না কোনও উৎসব লেগেই থাকে। প্রতিটি উৎসবের আচার-রীতি হয় ভিন্ন। ঠিক সেরকমই একটি রীতি হল ভূত চতুর্দশী। সাধারণত কালীপুজোর আগের রাতে বা দীপান্বিতা অমাবস্যার আগে চতুর্দশী তিথিতেই বাঙালীর ঘরে ঘরে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী।
ভূত চতুর্দশী নামটার মধ্যেই বেশ গা ছমছম করে ওঠে। এই দিন বিশেষ রীতি হল বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো এবং ১৪ রকমের শাক খাওয়া। আপনি কি জানেন এই দিন কেন আমরা ১৪টি প্রদীপ জ্বালাই বা ১৪ শাক খাই? জেনে নিন এই রীতি মানার আসল কারণ।
ভূত চতুর্দশীর রাতে কেন ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়?
প্রচলিত কথা অনুযায়ী, রাক্ষস রাজ বলি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল নিজের দখলে রাখার জন্য প্রবল অত্যাচার শুরু করে। দেবতারাও বাদ যাননি। এই পরিস্থিতি ঠিক করতে বামনের ছদ্মবেশে রাক্ষসরাজ বলির কাছে বিষ্ণু তিন পা জমি ভিক্ষা চান। এতে বলি রাজি হতেই, বিষ্ণু দুটি পা একটি মর্ত্যে ও একটি স্বর্গে রাখেন। আর আরেকটি পা তাঁর নাভি থেকে বেরিয়ে আসে এবং সেটি তিনি রাখেন পাতালে। এই ছলনার পর বলিকে করুণা দেখিয়ে ভগবান বিষ্ণু বলেন, প্রতি বছর রাক্ষস রাজ ও তার সাঙ্গপাঙ্গের পুজো হবে পৃথিবীতে। আর সেই পুজোর তিথিই হল ভূত চতুর্দশী।
পুরাণ মতে, এই ভূত চতুর্দশীর রাতেই দানব রাজা বলি ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। আর অমাবস্যা রাতের অন্ধকারে বলি ও তার সঙ্গীরা যাতে পথ ভুলে বাড়িতে ঢুকতে না পারেন, তার জন্য প্রদীপ জ্বালানো হত।
কার্তিক মাসের শেষ চতুর্দশী তিথিতে পালন করা হয় এটি। যেহেতু চতুর্দশীর দিন এই রীতি পালন করা হয়, তাই ১৪ সংখ্যাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই দিনে সমস্ত অন্ধকার ঘোচাতে বাড়িতে ১৪টি আলো বা প্রদীপ জ্বালানো হয়। এছাড়া বিশ্বাস করা হয় যে, এই প্রদীপগুলি ভূত-প্রেত, অশুভ শক্তি বা অশুভ আত্মাকে দূরে করে রক্ষা করবে পরিবারের সকলকে। অনেকেই আবার বলে থাকেন, এই প্রদীপ পূর্বপুরুষদের গত ১৪ প্রজন্মের স্মরণে জ্বালানো হয়।
এই দিন ১৪ রকমের শাক কেন খাওয়া হয়?
কথিত আছে যে, কালীপুজোর আগের রাতে এই পূর্বপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে। তাই প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি ভূত চতুর্দশীতে ওল, নটে, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী, নিম, হেলঞ্চা, সজনে, পলতা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুলফা, শুশনি, এই চোদ্দ ধরনের শাকও খাওয়ার রীতি আছে।
বিশ্বাস করা হয়, মৃত্যুর পর দেহ পঞ্চভূতে (আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি) বিলীন হয়ে যায়। এই পাঁচ উপাদানের মধ্যেই মিশে থাকেন পূর্বপুরুষরা। তাই প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা ১৪ রকমের শাক মৃত ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এই চোদ্দ শাক ধোওয়া জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির প্রতিটি কোণে। এর ফলে অশুভ শক্তি দূর হয় ও বাধা-বিঘ্ন কেটে যায়।