Related Articles
সন্ধিপূজার বিভিন্ন নিয়ম এবং প্রথা
মা দুর্গার আরেক রূপ হল মহিষাসুর-মর্দিনী। মহিষাসুর মর্দিনী অর্থাৎ তিনি এই অসুরের নিধন করেছিলেন। কিন্তু দুর্গা পুজোর পিছনে আরো অসুরবধের কাহিনী আছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্ধিপূজা। অষ্টমী শেষ হয়ে যখন নবমী তিথি শুরু হয়ে তখন সন্ধিপূজার মাধ্যমে মায়ের আরাধনা করা হয়। এই সন্ধিপূজা হল সেই সন্ধ্যার প্রতীক যখন মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে বধ করেছিলেন।
সন্ধিক্ষণ কখন?
অষ্টমী তিথি শেষ হয়ে যাওয়ার শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ । ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টি প্রতিবছরই পরিবর্তিত হতে থাকে। কোনো বছর এই সন্ধিক্ষণ রাত ৮টাতেও হতে পারে আবার কোনো বছর ভোররাতেও হতে পারে।
Image Courtesy: Chinmayi Purohit
পৌরাণিক কাহিনী
সন্ধিক্ষণের পিছনের পৌরাণিক কাহিনীটি অনেকটা এইরকম। দেবী দুর্গা এক অপরূপা সুন্দরী রূপে দুর্দমনীয় মহিষাসুরের সামনে আবির্ভূতা হন । ঠিক এই সময়েই দেবী দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরের নিধন করেছিলেন। এই ঘটনাটি মনে রাখার জন্যই প্রতি বছর অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপূজা করা হয়। চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই সময়টি প্রতিবছরই পরিবর্তিত হতে থাকে। কোনো বছর এই সন্ধিক্ষণ রাত ৮টাতেও হতে পারে আবার কোনো বছর ভোররাতেও হতে পারে। সেই সময় দেবীর গাত্রবর্ণ বা গায়ের রঙ ছিল স্বর্ণাভ বা সোনালী এবং তিনি হলুদ শাড়ি পরে অবতীর্ণ হন। তাঁর দশ হাত সজ্জিত ছিল দশ ধরণের অস্ত্রে। যখন মহিষাসুরের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধে তিনি ব্যস্ত, সেইসময় মহিষাসুরের দুই বন্ধু চন্ড এবং মুন্ড পিছন থেকে দেবীকে আক্রমণ করে। রণনীতির চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় দেবী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং রাগে তাঁর মুখ নীল হয়ে যায়। দেবী তাঁর ত্রিনয়ন উন্মীলিত করেন এবং চামুন্ডা রূপ ধারণ করেন। ঘনীভূত রক্তের কালীরই অন্য রূপ হল চামুন্ডা রূপ। চামুন্ডা রূপে দেবী দুর্গা চন্ড এবং মুন্ডের মাথা কেটে নেন তাঁর হাতের খড়গ দিয়ে। দেবীর এই চামুন্ডারূপেরই আরাধনা করা হয় সন্ধি পূজার মাধ্যমে।
Image Courtesy: Chinmayi Purohit
সন্ধিপূজার নৈবেদ্য
নবমীর পুজোই মাকে নৈবেদ্য দেওয়ার শেষ সুযোগ। তাই সন্ধিপূজার আয়োজনও সাড়ম্বরে করা হয়। সন্ধিপূজায় দেওয়া হয় ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। নৈবেদ্যয় দেওয়া হয় গোটা ফল (লাল রঙের ফল থাকা বাঞ্ছনীয়), জবা ফুল, শাড়ি, সাদা চাল, গহনা (যদি দিতে চান) এবং বেলপাতা। প্রতিটি পারিবারিক পুজোয় এবং বারোয়ারি পুজোয় যে যার নিজের মত করে সাজিয়ে দেন ই নৈবেদ্যগুলি, কিন্তু ১০৮টি পদ্ম এবং ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার নিয়মটি কিন্তু চিরাচরিত, এর কোনো অন্যথা হয় না ।
সন্ধিপূজার বিভিন্ন আচার-নিয়ম এবং প্রথা
সন্ধিপূজার সঙ্গে নানারকম আচার এবং প্রথা জড়িয়ে আছে। রাজপরিবার এবং জমিদারপরিবারের দুর্গা পুজোয় সন্ধিপূজার সময়ে কামান দেগে তোপধ্বনি করা হত, অনেক জায়গায় সন্ধিপূজার সময় ঢাক বাজানো হত। এমনকি আজকের দিনেও সন্ধিপূজার সময়ে সবাই একটু ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, কারণ এই পুজোই মায়ের প্রধান পুজো, তাই কেউই এই পুজোর আয়োজনে কোনো ফাঁক রাখতে চান না। দুর্গোৎসব হল ব্রহ্মান্ডব্যাপী মাতৃশক্তির আরাধনা, অশুভশক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির জয়।