Just In
দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নয়টি প্রথা
দুর্গাপুজোর কথা তো আপামর ভারতবাসী সবাইই জানেন, কিন্তু দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতঃপ্রোত জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন আচার-নিয়মগুলির কথা হয়তো অনেকেই জানেন না। দুর্গাপুজোর সময়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠানগুলি পালন করা হয়, তার প্রত্যেকটির বিশেষ তাৎপর্য আছে। যদি আপনি জানতে চান যে দুর্গাপুজো কেন বিশেষ নিয়ম মেনে পালন করা হয়, তাহলে দুর্গাপুজো্র পিছনে যে পৌরাণিক কাহিনী আছে, তা আপনাকে জানতে হবে। দুর্গাঠাকুর প্রতি বছর এই সময়ে কৈলাস থেকে মর্ত্যে তাঁর পিতৃগৃহে আসেন।
দেবী পিতৃগৃহে আসার সময় তাঁর সঙ্গে আসেন তাঁর চার পুত্রকন্যা - লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গণেশ। দেবী দুর্গা এবং তাঁর সন্তান এই চার দেবদেবীকে নিয়েই কিন্তু দুর্গাপুজোর প্রতিটি নিয়ম বা আচার-অনুষ্ঠান। দেবীপক্ষ এবং দুর্গাপুজোর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মহালয়া থেকে। মহালয়ার দশদিন পরে দশমীতে শেষ হয় দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় মহাষষ্ঠী থেকে, মহালয়ের ছয়দিন পরে।
মহাঅষ্টমী শেষ হয় দীর্ঘ সন্ধিপুজোর মধ্যে দিয়ে, অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয় বলেই এর নাম সন্ধিপুজো। পুজোর শেষদিন বা দশমীর দিনে একটি মজার অনুষ্ঠান থাকে - সিঁদুরখেলা। এই সিঁদুরখেলা অনুষ্ঠানে বিবাহিত মহিলারা মা দুর্গাকে সিঁদুর দিয়ে বরণ করেন এবং তারপরে একে অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। দুর্গা পুজোর যাবতীয় সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানের তালিকা নীচে দেওয়া হল। আপনি যদি সত্যিই জানতে চান যে দুর্গাপুজো কেন পালন করা হয়, তাহলে এই পুজোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের তাৎপর্য এখান থেকে জেনে নিন।
তর্পণঃ মহালয়া
অমাবস্যা মহালয়া থেকে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এই দিনে দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে যাত্রা শুরু করেন। এই দিনে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাঁদের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয়, একে বলা হয় তর্পণ। পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে এই পুণ্যতিথি থেকেই হয় দুর্গোৎসবের সূচনা।
কল্পারম্ভঃ মহাষষ্ঠী
মহাষষ্ঠীতে দেবী এবং তাঁর পুত্রকন্যারা মর্ত্যভূমিতে পা রাখেন। তাই বিভিন্ন দুর্গামূর্তির মুখের আবরণ সরিয়ে দেবীর মুখমন্ডলের উন্মোচন এই দিন করা হয়। কল্পারম্ভ পুজোর মাধ্যমে মূল পুজোর শুরু হয়। কল্পারম্ভের পরে হয় দেবীর বোধন এবং তারপরে অধিবাস।
কলাবৌ স্নানঃ মহাসপ্তমী
একটি কলাগাছের চারাকে গণেশের স্ত্রী কলাবৌ রূপে কল্পনা করা হয় ও সাজানো হয়। মহাসপ্তমীর ভোর হওয়ার আগেই কলাবৌকে স্নান করানো হয় এবং নতুন লালপাড় সাদাশাড়ি পরিয়ে গণেশের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
নবপত্রিকা স্থাপনঃ মহাসপ্তমী
মহাসপ্তমীতে আরেকটি আচার পালন করা হয়। দেবী দুর্গার নয়টি রূপের প্রতীক হিসাবে নয়ধরণের গাছ এনে নবপত্রিকা স্থাপন করে পুজো করা হয়।
কুমারী পূজাঃ মহাষ্টমী
মহাষ্টমীর সকালে যেসব বালিকারা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায় নি, তাঁদের দেবীরূপে পুজো করা হয়। কোনো কোনো প্যান্ডেলে, ৭ থেকে ৯ বছরের মধ্যে দেবী সাজে সাজিয়ে তাদের পুজো করা হয়। এই প্রথাটিকে কুমারী পূজা বলা হয়।
সন্ধিপূজাঃ মহানবমী
মহাষ্টমী শেষ হয়ে মহানবমী শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা করা হয়। এই সন্ধিপূজাই হল দেবী দুর্গার আরাধনার প্রধান পুজো। মহাষ্টমী শেষ হওয়ার আগের শেষ ২৪ মিনিট এবং মহানবমী শুরু হওয়ার পরের ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ। ঠিক এই সময়ে দেবী দুর্গা চন্ড এবং মুন্ড নামের দুই পরাক্রমী অসুরকে বধ করেছিলেন।
সিঁদুর খেলাঃ মহাদশমী
পুজোর শেষ দিনে চোখের জলে দেবীকে বিদায় জানানো হয়। সমস্ত বিবাহিত মহিলারা দুর্গা মূর্তির সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং দেবীমূর্তির মুখে মিষ্টি গুঁজে দিয়ে মাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় জানান। এই প্রথাটির নাম ঠাকুরবরণ। এরপরে বিবাহিত মহিলারা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে সিঁদুরখেন্দুরমেতে ওঠেন।
বিসর্জন
সব আনন্দোৎসবের শেষে এবার দেবী দুর্গার স্বর্গে কৈলাসধামে ফিরে যাওয়ার সময়। দেবী দুর্গার মূর্তি জলে ভাসিয়ে দিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের আগে দেবীমূর্তিকে শোভাযাত্রা করে গঙ্গার পাড়ে নিয়ে আসা হয়, দেবীর মূর্তি ঘিরে ভক্তবৃন্দের নাচ এবং "আসছে বছর আবার হবে"র জয়ধ্বনির মাধ্যমে দিয়ে চিন্ময়ী দেবীকে পরের বছর আবার আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে গঙ্গার জলে মৃণ্ময়ী দেবীকে ভাসিয়ে দিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়।
বিজয়া দশমীঃ
দেবী দুর্গা এবং তাঁর পুত্রকন্যারা কৈলাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে, গঙ্গায় মূর্তি ভাসিয়ে দিয়ে বিসর্জনের পর শুরু হয় বিজয়াদশমী। বিজয়াদশমীতে বড়দের প্রণাম করে তাঁদের আশীর্বাদ নেওয়া, ছোটদের আশীর্বাদ করা এবং সমবয়সীদের কোলাকুলি করে মিষ্টিমুখ করার রীতি।