Just In
শুভ মহালয়া : সুখে শান্তিতে থাকতে চাইলে আজকের দিনে ভুলেও এই কাজগুলি করবেন না যেন!
আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ এবং মাতৃপক্ষের সূচনা কাল। তাই তো আজ পিতৃপক্ষের এই শেষ লগ্নে সবাই তাঁদের পূর্ব পুরুষদের জল দান করে থাকেন।
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এমনটা করলে যে প্রিয়জনেরা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের আশীর্বাদে জীবনে সুখ-শান্তির ছোঁয়া তো লাগেই, সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়, যেমন ধরুন...
১. জীবনে কখনও দুঃখের মুখ দেখতে হয় না:
শাস্ত্র মতে আজকের দিনে পূর্ব পুরুষদের পিন্ড দান করলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগে। ফলে দুঃখের মার পরার আশঙ্কা যায় কমে। শুধু তাই নয়, বড়দের আশীর্বাদে মনের সব ইচ্ছা পূরণের পথও প্রশস্ত হয়। তাই তো বলি বন্ধু, বাকি জীবনটা যদি আনন্দে এবং নিরাপদে কাটাতে হয়, তাহলে আজ যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, একটু সময় বার করে তর্পন করতে ভুলবেন না যেন!
২. অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! আমাদের প্রিয়জনেরা তো সদা চান যে আমাদের উন্নতি হোক, তাই এমন বিশেষ দিনে তাঁদের প্রতি একটু সম্মান এবং মর্যাদা পদর্শন করলে তাই ক্ষতি কি বলুন! এই কারণেই তো মাহালয়ার দিন সব নিয়ম মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করলে পূর্ব পুরুষেরা এতটাই খুশি হন যে তাঁদের অশীর্বাদে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা সমস্যাও মিটে যায়। এবার বুঝছেন তো শাস্ত্রে মহালয়ার দিনটিকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কেন!
৩. রোগ-ব্যাধি সব দূরে পালায়:
আজ, পিতৃ পক্ষের অবসান কালে কোনও জলাধারের সামনে দাঁড়িয়ে বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে সেই সব প্রিয়জনেদের নাম স্মরণ করুন, যারা কোনও না কোনও না আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সেই সঙ্গে পিন্ড দান করুন। এমনটা করলে দেখবেন প্রিয় মানুষদের আশীর্বাদ এবং ভাসবাসার ছোঁয়ায় শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে উঠবে যে কোনও ধরনের রোগ-ব্যাধিই ছুঁতে পারবে না। শুধু তাই নয়, কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কাও যাবে কমে।
তর্পনের সময় যে যে মন্ত্রগুলি পাঠ করা জরুরি:
শাস্ত্র মতে পূর্ব পুরুষদের জল দান করার সময় যদি "পিতৃ গায়েত্রী মন্ত্র" পাঠ করা যায়, তাহলে সবথেকে বেশি উপকার মেলে। মন্ত্রটি হল: "ওম দেবাতাভুয়া পিতৃভয়াসচ মহায়োগ্যিভব চ, নমহ সোয়াহা সধায় নিত্য়মেব নমো নমহ"। প্রসঙ্গত, এই মন্ত্রটি ছাড়াও আর যে যে মন্ত্রগুলি পাঠ করতে পারেন, সেগুলি হল-
ক. "ওম কেশব্য নমহ, ওম মহাভায়া নমহ, ওম নারায়ণা নমহ"।
খ. "ওম দর্ম রাজ্য নমহ"
গ. "ওম অনন্তকায়া নমহ"
ঘ. "এম সর্ব ভূতা কাশ্য নমহ"
মহালায়ার দিন যে যে নিয়মগুলি মেনে চলা জরুরি:
তর্পন করুন বা না করুন মহালয়ার দিন কতগুলি নিয়ম মেনে চলা এতান্ত প্রয়োজন। কারণ শাস্ত্র মতে এই দিনটি বেজায় গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো এই নিয়মগুলি না মানলে নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই, সেই সঙ্গে পিতৃ দোষে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। কী এই পিতৃ দোষ? মহালয়ার দিন ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে না চললে পূর্ব পুরুষেরা বেজায় রুষ্ট হন। ফলে নানাবিধ সমস্যা যেমন মাথা চাড়া দিযে ওঠে, তেমনি মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার ভয়ও থাকে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে কোনও বিপদ ঘটার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এক কথায় প্রতিটি দিন এতটাই কষ্টে কাটে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু এমমন কঠিন সময়ের সম্মুখিন হতে না চাইলে আজ ভুলেও আমিষ খাবার খাবেন না যেন! সেই সঙ্গে আরও যে যে বিষযগুলি মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন, সেগুলি হল- পূর্ব পুরুষদের জল দান করার সময় স্টিল, লোহা, প্লাস্টিক অথবা কাঁচের জিনিস ব্যবহার করবেন না। পরিবর্তে মাটির জিনিস ব্যবহার করতে হবে, আজ ঠাকুর ঘরে ঘন্টা বাজাবেন না এবং পরিবারের বয়স্ক মানুষদের যথাযথ সম্মান করবেন। তবে প্রশ্ন হল কোনও কারণে যদি কেউ পিতৃ দোষে আক্রান্ত হন, তাহলে বোঝা যাবে কীভাবে? এক্ষেত্রে উপরে আলোচিত সমস্যাগুলি তো মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেই, সেই সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেবে। যেমন ধরুন- নানা কারণে পরিবারের অন্দরে নান ঝামেলা এবং কলহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে, নানা কারণে বারে বারে সম্মনহানী হতে পারে, বাচ্চার মারাত্মক শরীর খারাপ হতে পারে অথবা বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং বৈবাহিত জীবনে নানা ঝামেলা দেখা দিতে পারে।
পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি লাভের উপায়:
এখন প্রশ্ন হল কেউ পিতৃ দোষে আক্রান্ত হলে খারাপ সময় থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? এক্ষেত্রে বেশ কতগুলি নিয়ম মেনে চললে তবে উপকার মেলে। যেমন ধরুন...
১. পিন্ড দান মাস্ট:
কোনও পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ তিথি দেখে পূর্ব পুরুষদের জল এবং পিন্ড দান করতে হবে। সেই সঙ্গে কয়েকজন ব্রাহ্মণকে খাবার খাওয়ালে উপকার মিলতে দেখবেন সময় লাগে না।
২. অমাবস্যার মাহাত্ম্য:
যে প্রিয়জনেরা আপনাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাঁদের মৃত্যুর দিন যদি জানা না থাকে, তাহলে যে কোনও অমাবস্যার দিন পিন্ড দান করতে পারেন। আসলে এমনটা করলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তা হল, যে দিন পিন্ড দান করছেন, সেদিন কয়েটি ঘুটে পুড়িয়ে তার উপরে ক্ষির নিবেদন করতে হবে। তারপর ঘুটের উপর জল ছিটিয়ে পূর্ব পুরুষদের নাম নিয়ে তাঁদের আশীর্বাদ চাইতে হবে। এমনটা করলে দেখবেন পিতৃ দোষ কেটে যেতে সময় লাগবে না।
৩. সূর্য দেব এবং গায়েত্রী মন্ত্র:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে পূর্ব পুরুষদের যে দিন পিন্ড দান করা হবে, সেদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, স্নান সেরে সূর্য দেবকে জল দান করতে করতে যদি গায়েত্রী মন্ত্র পাঠ করা যায়, তাহলে পিতৃ দোষ কেটে যেতে সময় লাগে না।
৪. অশ্বত্থ গাছে জল দান করা মাস্ট:
নিয়মিত এক ঘটি গঙ্গা জলে ফুল, দুধ এবং কালো তীল মিশিয়ে অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় ডালতে হবে এবং মনে মনে পূর্ব পুরুষদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। শুধু তাই নয়, মনে মনে তাঁদের নাম নিয়ে নিজের কষ্টের কথা জানাতে হবে। এইভাবে কয়েকদিন অশ্বত্থ গাছে জল দান করলেই দেখবেন সব সমস্যা মিটে যেতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পূর্ব পুরুষদের আশীর্বাদে জীবন অনন্দে ভরে উঠবে।
৫. গরুকে গুড় খাওয়াতে হবে:
পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে প্রতি শনিবার গরুকে গুড় খাওয়াতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে কিন্তু বাস্তবিকই উপকার পাওয়া যায়।