Just In
কুম্ভ মেলার তাৎপর্য কী?
কী কারনে এই মেলার জনপ্রিয়তা এত বেশি? কেন এই মেলা শুরু হয়েছিল? কোন পুণ্যলাভ হয় এই সময়?
কিছুদিন আগেই হয়ে গেল কুম্ভমেলা। টিভিতে বা খবরের কাগজে রোজ তার খবর দেখতে পেয়েছি বা জানতে পেরেছি। আমাদের দেশে হিন্দুরা পূজা পার্বণের জন্যে সব সময় বিখ্যাত। তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজাকে কেন্দ্র করে মেলার ঘনঘটাও কম নয়। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় এই কুম্ভ মেলার জনপ্রিয়তা। সারা দেশের কোটি কোটি মানুষ এসে ভিড় করেন এই মেলা তে। শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই মেলার জনসমাগম ছিল দশ কোটির বেশি। জানা যায় এই মেলা কয়েক হাজার বছরের বেশি পুরনো। চিনা পরিব্রাজক জুয়ানজাং এর লেখায় এই মেলার কথা প্রথম জানা যায়। ঠিক কী কারনে এই মেলার জনপ্রিয়তা এত বেশি? কেন এই মেলা শুরু হয়েছিল? কোন পুণ্যলাভ হয় এই সময়? আসুন, আজ জেনে নি আজ সেরকমই কিছু অজানা কথা এই মেলা কে নিয়ে।
কুম্ভ নামকরণ হয়েছে পুরাণের অমৃতকুম্ভ বা অমৃতের পাত্র থেকে। পুরাণ মতে, বৈদিক যুগে দেবতা আর অসুর দের মধ্যে সব সময় বিবাদ লেগে থাকত। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে অসুররা শাপিত হয় এবং দেবতা দের তুলনাতে দুর্বল হয়ে পড়ে। শাপস্খলন করার জন্যে অসুররা যায় প্রজাপতি ব্রহ্মা আর মহাদেব এর কাছে। তারা দুজনেই পরামর্শ দেন শ্রী বিষ্ণুর কাছে যাওয়ার জন্যে। অসুররা বিষ্ণুদেবের কাছে সমাধান পাওয়ার আশায় গেলে তিনি বলেন দুধসাগর মন্থন করে অম্রিতপাত্র বের করে আনতে। কিন্তু এই কঠিন কাজ করা একা অসুর দের পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে তারা দেবতা দের সাথে এক সমঝোতায় আসে। তাদের শর্ত ছিল অমৃতের অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে। মেরু পর্বত কে বানানো হয় মন্থন দণ্ড আর সর্পদেব বাসুকি হন মন্থনের দড়ি। মন্থনে উঠে আসতে থাকে বিষ, ঐরাবত, কল্পবৃক্ষ। অবশেষে, প্রায় হাজার বছর মন্থনের পরে ধন্নন্তরি উঠে আসে অমৃতপাত্র নিয়ে। কিন্তু দেবতারা বুঝতে পারে এই অমৃত পানে অসুররা অমর হলে অনিষ্ট সুনিশ্চিত। তাই ইশারায় সেই অমৃতপাত্র নিয়ে পালান বৃহস্পতি, সূর্যদেব, চন্দ্র, আর শনিদেবের সুরক্ষায় আর ভরসাতে।
অসুররা যখন বুঝতে পারে তাদের কে ঠকানো হয়েছে, শর্তসাপেক্ষ অমৃতের ভাগ তারা পায়নি দেবতা দের থেকে, তারা দেবতাদের পিছু নেয়। বারো দিন, বারো রাত তারা ছুটে চলে দেবতাদের পিছনে। এই সময় চার জায়গায় এই অমৃত পড়ে যায় পাত্র থেকে। চার জায়গা হল এলাহাবাদ, হরিদ্বার, উজ্জইন, আর নাসিক। যেহেতু দেবতা দের হিসাবে, বারো দিন হল মানুষের কাছে বারো বছর, তাই সেই সময় থেকে এই চার জায়গায় বারো বছর অন্তর এই মেলা চলে আসছে। সাথে চলে আসছে পুণ্যস্নান। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দুই গ্রহ মানে বৃহস্পতি, শনি আর সূর্য এবং চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী সংক্রান্তি তে এই পুণ্যস্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। হরিদ্বারে গঙ্গাতে, উজ্জইনে শিপ্রাতে, নাসিকে গোদাভরীতে আর এলাহাবাদে গঙ্গা যমুনার সঙ্গম স্থলে এই পুণ্যস্নান হয়।
নানা মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি, নানান সাধুর আগমন, তাদের আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকলাপ আর তার সাথে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই মেলা কে শুধু আমাদের দেশ এর মানুষের কাছে না, দেশের বাইরেও সমান ভাবে জনপ্রিয়তা আর বিশ্বাস অর্জন করেছে।