Just In
Don't Miss
শরীর যদি সব কাজ করে, তবে আত্মার কাজ কী?
পুরনো শাস্ত্র বলে যে একজন মানুষের শুধুমাত্র দুটো দিক আছে গঠনগতভাবে যার মধ্যে একটা হল তার শরীর যা পার্থিব এবং আরেকটা হলো তার আত্মা যা অবিনশ্বর।
আজকের দিনে মনে করা হয় যে এই পৃথিবী সব থেকে শ্রেষ্ঠ ভগবানের সৃষ্টি হল মানুষ। ভগবান কর্তৃক মানুষ জীব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে তার নিজস্ব গুনাগুন এর জন্য। মানুষের নিজস্ব স্বকীয়তা, বিচারবুদ্ধি, খারাপ এর থেকে ভালো কে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা মানুষকে বরাবরই বাকি সমস্ত প্রাণীকুলের থেকে আলাদা করে রেখেছে। রক্তমাংসের এই মানুষ বাইরে থেকে দেখতে একই হলেও বা বলা ভালো যে গঠনগত দিক থেকে সমস্ত মানুষ দেখতে একই হলেও সূক্ষ্ম বিচারে এবং মননশীলতায় একজন অপরজনের থেকে আলাদা। পুরনো শাস্ত্র বলে যে একজন মানুষের শুধুমাত্র দুটো দিক আছে গঠনগতভাবে যার মধ্যে একটা হল তার শরীর যা পার্থিব এবং আরেকটা হলো তার আত্মা যা অবিনশ্বর। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এবং নিজের সামগ্রী চাহিদা মেটানোর জন্য নশ্বর দেহ ক্রমাগত কাজ করে যেতে থাকে। অপরদিকে অবিনশ্বর আত্মা শুধুমাত্র এই নশ্বর দেহ কে চালিত করতে থাকে চালনা শক্তির যোগান দিতে থাকে এবং একটা সময় পরে যখন নশ্বর দেহের অবসান হয় তখন এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হয় ঠিক যেভাবে প্রকৃতির নিত্যতা সূত্র মেনে শক্তি এক রূপ থেকে আরেক রূপে পরিবর্তিত হয়। তাই আলোচনা সাপেক্ষে ধরে নেওয়া যেতে পারে আত্মা আমাদের এই শরীরের মূল চালনা শক্তি যা নষ্ট হয় না।মনে করা যেতে পারে যে আমাদের মস্তিষ্ক এবং আমাদের মনন এই দুটোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত করে এই অবিনশ্বর আত্মা।
তাহলে অনেকেই মনে করেন বা করতে পারেন যে আত্মার তাহলে কাজ কোথায়। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া অবদি এই সমস্ত কাজ সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সমস্ত বাধা কে জয় করার যাবতীয় গুরু দায়িত্ব যখন আমাদের এই নশ্বর দেহ পালন করে থাকে প্রকৃতিকে বুঝবার ক্ষমতা যখন এই নশ্বর দেহ দিয়ে থাকে তাহলে আত্মা ঠিক কি করে। এটা বোঝানো খুবই সহজ কিন্তু তার জন্য আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে আমাদের দেহ এবং আমাদের আত্মার মধ্যে পার্থক্যটা কোথায় এবং এই পৃথিবী এবং এই প্রকৃতির ডাকে কে কিভাবে সাড়া দেয়।
আমাদের দেহ হলো জগৎ - সংবেদনশীল। অর্থাৎ আমাদের দেহ এই জগতে আমাদের শরীরের উপর বা আমাদের মানব দেহের উপর পার্থিব যে প্রভাব ফেলে তাতে আমাদের দেহ সাড়া দেয়। রোদ ঝড় জল শীত বা গরমে প্রকৃতি আমাদের উপর যে প্রভাব ফেলে, রোগ ব্যাধি আমাদের শরীরকে যেভাবে বিনষ্ট করে এই সব কিছুতে আমাদের দেহ সাড়া দিতে থাকে। প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি করে আমাদের দেহ। তাই এই পার্থিব ও দুনিয়ার যাবতীয় প্রভা এবং তার প্রতিফলন আমাদের শরীরে এসে পড়তে থাকে। ফলে অনেক সময় অনেকেই বলে থাকেন যে শরীর বুড়িয়ে এসেছে। এই কথার অর্থ আসলে আমাদের নশ্বর দেহের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। যে কারণে অল্প বয়সে থাকাকালীন আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে কারণ আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমান ভাবে কাজ করতে থাকে যাদের বাইরের কোন ওষুধের বা প্রতিকার এর দরকার হয় না। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে বেঁচে থাকার তাগিদে অনিয়ম যখন বাসা বাড়িতে থাকে সেই সময় আমাদের শরীরের কাজ করার ক্ষমতা আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে থাকে। শরীরে বাসা বাঁধে থাকে নানা রকম রোগ যার মধ্যে কিছু কিছু আছে যা ক্রমাগত শরীরকে ক্ষয় করে যেতে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের কারণে বাইরে থেকে এই রাস পাওয়ার ঘটনা বা ক্ষতি হওয়ার ক্রমাগত বা প্রতিনিয়ত পদ্ধতিতে ওষুধের দ্বারা সাময়িকভাবে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করা হয় এবং একটা সময় আসবে যখন আমাদের এই নশ্বর দেহ আর নিতে পারে না তখন এ দুনিয়া তে কাজ করা বন্ধ করে দেয় যাকে আমরা সহজ কথায় বলে থাকি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া বা মারা যাওয়া।
কিন্তু আমাদের আত্মা বা মন এই শরীরের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর কোন ক্ষয় নেই, এ বিনষ্ট হয় না, বা বৃদ্ধ হয় না। তাই অনেক সময় অনেকে অল্প বয়সে প্রবীণ হয়ে যান। আবার অনেকে বৃদ্ধ বয়সেও তরুণ। এ সব আমাদের আত্মার চালনা। আত্মা আমাদের ভিতরের বোধ বা চেতনা শক্তিকে জাগ্রত করে। যা আমাদের চালনাশক্তি। এই শক্তি যেমন আমাদের মনোবল উন্নত করে ঠিক তেমনি ভিতর ভিতর ভাঙতে থাকে। শরীর যদি জগৎ সংবেদনশীল হয় তাহলে আত্মা হলো চেতনা সংবেদনশীল। কোনো কিছু দেখে ভালো লাগা, বা ভালোবাসা কিংবা রাগ ক্রোধ দুঃখ এই সব চেতনাই আমাদের মধ্যে আত্মা এনে দেয়। শরীর শুধু সেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।