Just In
শিব ঠাকুরকে রাগিয়ে জীবনকে নরক বানাতে না চাইলে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না যেন!
শিব ঠাকুরকে প্রসন্ন করা বেজায় সহজ। কারণ ভোলা বাবা কখনও তাঁর ভক্তদের কষ্ট দেন না। কিন্তু একবার যদি রেগে যান, তাহলে কিন্তু বিপদ!
শিব ঠাকুরকে প্রসন্ন করা বেজায় সহজ। কারণ ভোলা বাবা কখনও তাঁর ভক্তদের কষ্ট দেন না। কিন্তু একবার যদি রেগে যান, তাহলে কিন্তু বিপদ! সেক্ষেত্রে একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠতেও সময় লাগে না। ফলে প্রতিটা দিন কাটানো যে কতটা কষ্টকর হয়ে ওঠে, তা নিশ্চয় আর বলে বোঝাতে হবে না।
এখন প্রশ্ন হল শিব ঠাকুরকে প্রসন্ন করতে কী কী কাজ করা যেতে পারে? এক্ষেত্রে এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলি ভুলেও সেদিন খাওয়া চলবে না, যেদিন শিব ঠাকুরের পুজো করছেন! শুধু তাই নয়, প্রতি সোমবার যদি দেবের আরাধনা করে থাকেন, তাহলেও কিন্তু একই নিয়ম মেনে চলতেই হবে। সেই সঙ্গে মেনে চলতে হবে আরও কতগুলি নিয়ম। যেমন ধরুন...
১. পুজোর দিন বেগুন ভাজা খাবেন না:
শুনে নিশ্চয় অবাক হয়ে গেছেন! কিন্তু একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে সোমবার বেগুন খাওয়া একেবারেই উচিত নয়, বিশেষত যারা দেবের ভক্ত, তাদের তো একেবারেই নয়। প্রসঙ্গত, কী কারণে সোমবার বেগুন খেতে মানা করা হয় অথবা দেবাদিদেবের আরাধনা করার সঙ্গে বেগুন খাওয়ার কী সম্পর্ক? এই সব প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে সঠির কোনও তথ্য় হাতে আসেনি ঠিকই। কিন্তু তাই বলে অকারণ চান্স নেওয়ার কি কোনও প্রয়োজন আছে? মনে তো হয় না!
২. দুগ্ধজাত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে:
সোমবার শিব ঠাকুরের পুজো করবেন, এমনটা যদি ভেবে থাকেন, তাহলে ভুলেও দুধ দিয়ে তৈরি কোনও খাবার খাওয়া চলবে না। কারণ শাস্ত্র মতে দুগ্ধজাত কোনও খাবার খাওয়া মাত্র আমাদের দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন বতে শুরু করে যে তার প্রভাবে মন স্থির করে ওঠা সম্ভব হয় না। আর এক মনে দেবাদিদেবের আরাধন করতে না পরলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে বোঝাতে হবে না! প্রসঙ্গত, শিবের পুজো করার সময় দুধের কোনও জিনিস খাওয়া না গেলেও সেগুলি দেবকে নিবেদন করতেই পারেন। যেমন ধরুন ঠান্ডা দুধ দিয়ে শিব লিঙ্গকে স্নান করালে সর্বশক্তিমান কিন্তু বেজায় পসন্ন হন।
৩. এদিন শাক-সবজিকেও বাদ দিতে হবে:
শাস্ত্র মতে শিব ঠাকুরের পুজো করার সময় এক মনে দেবের আরাধনা করা উচিত। তাই তো সোমবার সবুজ শাক-সবজি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে এমন ধরনের খাবার খেলে আমাদের পিত্ত দোষে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এমনটা হলে শরীরের ভিতর এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে মনকে স্থির রাখা একেবারেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর যেমনটা অপনারা ইতিমধ্যেই জেনে ফেলছেন যে বিচলিত চিত্তে দেবের আরাধনা করা একেবারেই উচিত নয়। তাই শিবের আশীর্বাদে যদি জীবনকে সুন্দর করে তুলতে চান, তাহলে ভুলেও সোমবার সবুজ শাক-সবজি খাবেন না যেন! প্রসঙ্গত, এই নিয়মগুলি মেনে চলার পাশাপাশি আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন...
৪. ভুলেও তুলসি পাতা নিবেদন করা চলবে না:
যে কোনও পুজো তুলসি পাতা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু শিবের পুজো করার সময় ভুলেও তুলসি পাতা নিবেদন করা উচিত নয়। কারণ শিব পূরাণে একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে জলন্ধর রাক্ষসকে মারাতে তাঁর স্ত্রী তুলসির সতীত্ব ক্ষুন্ন করার প্রয়োজন ছিল। তাই তো ভগবান বিষ্ণু, শিব ঠাকুররে নির্দেশে এই ঘৃণ্য কাজটি করেছিলেন এবং এর পর পরই দেবাদিদেব মেরে ফেলেছিলেন জলন্ধরকে। এই ঘটনার পর তুলসা মা এতটাই ভেঙে পরেছিলেন যে তিনি কাঁদতে কাঁদতে শিব ঠাকররে অভিষাপ দিয়েছিলেন যে দেবের পুজো কখনই পবিত্র তুলসি পাতা দিয়ে করা হবে না। এই কারণেই তো শিবের পুজো করার সময় ভুলেও তুলসি পাতা নিবেদন করা উচিত নয়।
৫. প্রসাদ হিসেবে ডাবের জল নৈব নৈব চ:
ভগবান শিবের পুজো করার সময় যা কিছু, বিশষত যেসব ফল এবং খাবার নিবেদন করা হয়, তা ভক্তদের মধ্যে সাধারণত বিতরণ করা হয় না। কারণ শিবকে নিবেদন করা খাবারকে শাস্ত্রে "নির্মাল্য" বলা হয়ে থাকে। আর ভুলেও গ্রহন করা উচিত নয়। এদিকে ডাবের জল যদি পুজো করার সময় নিবেদন করা হয়, তাহলে তা পান করা মাস্ট! কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু এমনটা করা যায় না। তাই তো দেবের পুজো করার সময় ভুলেও ডাবের জল নিবেদন করতে নেই। তবে ইচ্ছা হলে নারকেল নিবেদন করতেই পারেন। তাতে কোনও ক্ষতি নেই।
৬. দেবের ছবি বা মূর্তিতে হলুদ লাগাবেন না:
মেয়েরা তাদের রূপচর্চা করার সময় যেহেতু হলুদ ব্যবহার করে থাকেন। তাই শিবের ছবি বা লিঙ্গে হলুদ লাগাতে মানা করা হয়। এই কারমেই শিবের পুজো করার সময় ভুলেও হলুদ নিবেদন করবেন না যেন। পরিবর্তে চন্দনের পেস্ট ভাল করে লিঙ্গের গায়ে লাগিয়ে পুজো করতে হবে। কারণ এমনটা করলে শিব লিঙ্গ ঠান্ডা থাকে। ফলে সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
৭. ভুলেও সিঁদুর নয়:
বিবাহিত মহিলারা যেহেতু তার স্বামীর মঙ্গল কমনার কথা ভেবে সিঁদুর পরে থাকেন, তাই এ জিনিস কখনই শিব ঠাকুরকে নিবেদন করা উচিত নয়। মধ্যা কথা মহিলারা যে যে জিনিস নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করে থাকেন, তা ভুলেও শিব ঠাকুরের ধারে কাছে আনা চলবে না।
এক্ষেত্রে আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কী বিষয়? খেয়াল করে দেখবেন প্রায় প্রতিটি বাঙালি বাড়িতেই শিব ঠাকুরের মূর্তি বা ছবি থাকে। কিন্তু একথা জানা আছে কি দেবাদিদেবের মূর্তি বাড়িতে প্রতিষ্টিত করার সময় কী কী নিয়ম মেনে চলা জরুরি? প্রসঙ্গত, শাস্ত্র মতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়েম মেনে যদি দেবকে ঠাকুর ঘরে এনে না রাখেন, তাহলে উপরে আলোচিত নিয়মগুলি মানলেও কিন্তু মনের মতো ফল পাবেন না। তাই দেবকে প্রতিষ্টিত করার সময় যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল...
১.কোথায় প্রতিষ্টিত করতে হবে দেবের ছবি:
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে শিব ঠাকুরের ছবি রাখতে হবে বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে মুখে করে। কারণ এই জায়গায় দেবাদিদেবের ছবি রাখলে সারা বাড়িতে পজিটিভ শক্তির বিকাশ ঘটে। ফলে খারাপ কোনও ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তা হল ঠাকুরের ছবি মাটিতে রাখা চলবে না। আর যদি একান্তই রাখতে হয়, তাহলে একটি পরিষ্কার কাপড়ের উপর রাখতে হবে। আর জায়গাটি হতে হবে পবিত্র।
২. ধ্যানরত শিবের মূর্তি বা ছবি:
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে ধ্যানে মগ্ন দেবাদিদেবের ছবি বাড়িতে রাখা বেজায় শুভ। কারণ এমন ছবি গৃহস্তের অন্দর থাকলে পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মন শান্ত হয় এবং রাগ দূরে পালায়। ফলে কোনও ধরনের মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। প্রসঙ্গত, ভুলেও বাড়িতে নটরাজের মূর্তি রাখবেন না যেন! কারণ বাস্তুশাস্ত্র মতে এমন মূর্তি বা ছবি রাখলে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৪. পুজো করার নিয়ম?
প্রতিদিন সকাল এবং বিকালবেলা স্নান সেরে ভগবান শিবের পুজো করতে হবে। এই সময় ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে "ওম নমঃ শিবায়", এই মন্ত্রটি জপ করতে হবে। আর সোমবার খেয়াল করে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হবে দেবাদিদেবকে। প্রসঙ্গত, ভগবান শিবের পুজো শুরুর আগে মনে করে গণেশ ঠাকুরের পুজো করতে ভুলবেন না। এই নিয়মগুলি মেনে যদি দেবের আরাধনা করতে পারেন, তাহলে সুখের ঝাঁপি যে কখনও খালি হবে না, সে কথা হলফ করে বলা যেতেই পারে।