Just In
অবচেতন মনকে বশে আনবেন কীভাবে?
আমাদের সচেতন মনে আমরা যা চাই সেটা পাওয়ার জন্যে বা করার জন্যে অবচেতন মন আদেশ পালন করতে থাকে। আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে সেই ভাবে চালিত করতে থাকে।
আমরা ভাবি আমরা আমাদের নিজেদেরকে চালনা করি। যা কিছু ইচ্ছা, অনিচ্ছা সব কিছুই আমাদের সচেতন মনের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা সেইমত কাজ করতে থাকি। ভালো, মন্দ, ঠিক বা ভুল, সব সিদ্ধান্তের জন্যে আমরা সেটাই করি যা আমাদের সচেতন মন থেকে সাড়া দেয়। কিন্তু আমরা আসলে ভুল ভাবি। আমরা যা কিছু করি তার অনেকটা জুড়ে থাকে অবচেতন মন। আমাদের সচেতন মনে আমরা যা চাই সেটা পাওয়ার জন্যে বা করার জন্যে অবচেতন মন আদেশ পালন করতে থাকে। আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে সেই ভাবে চালিত করতে থাকে। অনেক সময় এটা হয়ে থাকে যে আমরা হঠাৎ করে কিছু একটা করি অথচ বুঝে উঠতে পারি না কেনো করলাম; কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি, "মনে হলো তাই"। এই মনে হওয়াটা আসলে অবচেতন মনের সর্বক্ষণের করতে থাকা আদেশ পালন।
১. কী এই অবচেতন মন?:
মনস্তত্ত্ববিদ পিয়েরে জনেটের কথায়, " আমাদের সচেতন মনের জটিল বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার যে প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তার অনেক গভীরে থাকে অবচেতন মনের প্রক্ষেপণ।" সহজ ভাষায় বলতে গেলে সচেতন মন যদি আপনার মালী হয় তাহলে অবচেতন মন হলো আপনার বাগান।" সচেতন মন আপনার ইচ্ছাকে বাড়াতে থাকে আর অবচেতন মন সেই ইচ্ছাকে ভিতরে ও বাইরে পূরণ করার চেষ্টা কে বাস্তবায়িত করতে থাকে। যখন আপনার মনে কোনো ইচ্ছা আসছে যা হয়ত নয় কিন্তু কোনোভাবেই আপনি দমাতে পারছেন না, হতে পারে তা আপনার অবচেতন মনের প্রকাশ।
২. কেন এই অবচেতন মনের উপস্থিতি? :
মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আসতেই পারে যে তাহলে কেনো এই অবচেতন মনের উপস্থিতি? যখন সচেতন মন তার বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারে? বিজ্ঞানীরা বলছেন সব কিছুর যেমন ভালো দিক থেকে, তেমনি খারাপ দিক থাকে। আমাদের মনের ক্ষেত্রেও তাই। সচেতন মন যাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অনবরত করতে থাকি, সেটা বাদ দিয়ে যা পড়ে থাকে তাই অবচেতন মন। এই অবচেতন মনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সমাজের তথাকথিত নিয়মের বাইরের বেরিয়ে কাজ করার ইচ্ছা, হয়তো কোন কষ্টের মুহূর্ত, যা ক্রমাগত আমরা ভুলে থাকতে চাই। কিংবা কোনো অনুভূতি যা আমরা মেরে ফেলতে চাই।
৩. কী করে অবচেতন মনকে তৈরি করা যায়? :
আমাদের মন কখনো একই সময়ে একটা জিনিস নিয়ে ভাবতে পারে না। ঘটনার যোগসূত্র বিচার করতে করতে সে নানা বিষয়ে ভাবতে থাকে। যার জন্যে আমরা কখনো একটা জিনিস নিয়ে ভেবে শেষ করি অন্য কোনো ভিন্ন জিনিস নিয়ে। এই ভাবনার জন্যে যে বিশ্লেষণ, তা করতে গেলে অসংলগ্ন চিন্তাভাবনাকে সরাতে হবে। 'mental house cleaning' বা মনের ঘর পরিষ্কার বলে একটা কথা আছে। মন কে পরিষ্কার করতে হবে অহেতুক জিনিসের বিষয়ে না ভেবে। নিজের কোনো কিছু করার জন্যে একটা লক্ষ্য স্থির করুন। পাহারাদারের মত প্রতিদিন একই সময়ে, একই ভাবে সেই লক্ষ্যকে দেখুন, ভাবুন। স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার অবচেতন মন কিছুদিন পর নিজে থেকেই সেই কাজ করা শুরু করবে। প্ল্যান করুন কিভাবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। একটা সময় পরে সচেতন মন ঠিক যেমন ভাবে আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে বাধ্য করবে, অবচেতন মন লক্ষ্য হাসিল করার জন্যে সমস্ত সম্ভাব্য বা অসম্ভব পথ আপনাকে দেখাতে আরম্ভ করবে।
৪. অবচেতন মনের ক্ষমতা:
এতক্ষণে
হয়তো
এটা
বোঝা
গিয়েছে
যে
আমাদের
অবচেতন
মন
আমাদের
কাজের
বা
কোনো
ভাবনার
ক্ষেত্রে
কতটা
গুরুত্ব
রাখে।
কিন্তু
ঠিক
কতটা
কার্যকরী
এই
অবচেতন
মন?
ঠিক
কতটা
প্রভাব
ফেলে
আমাদের
উপর?
বিজ্ঞানীরা
এবং
মনস্তত্ত্ববিদরা
অনেকদিনের
পরীক্ষা
-
নিরীক্ষার
পর
বলছেন
যে
অবচেতন
মন
শুধু
আমাদের
শরীরের
উপর
প্রভাব
ফেলে
না
বা
আমরা
কি
করবো
তাই
শুধু
ঠিক
করে
দেয়
না,
আমাদের
অনেক
অজানা
প্রশ্নের
বা
সমস্যার
সঠিক
উত্তর
অব্দি
দিতে
জানে।
এবং
তার
পুরোটাই
নির্ভর
করে
অবচেতন
মন
কখন
কিসের
সম্মুখীন
হচ্ছে
আর
সে
কিভাবে
তাকে
শোষণ
করে
নিচ্ছে
নিজের
বিশ্লেষণের
জন্যে।
আমরা যদি আমাদের কোনো সমস্যার সবসময় পজিটিভ সমাধান খুঁজতে থাকি তাহলে আমাদের অবচেতন মন সেই ভাবেই আমাদেরকে চালিত করতে থাকে যাতে আমরা আমাদের কাম্য সমাধান পেতে পারি। অনেক সময় অনেক সমস্যার জন্যে আমাদের জীবনে স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা ক্রমাগত বাড়তে থাকে যা আমাদের শরীরের উপর ক্রমশ ক্ষতি করতে থাকে, হার্ট দুর্বল হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন অবচেতন মনকে দিয়ে যদি এই উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তার সঠিক সমাধান খোঁজা যায় অভ্যেস এর দ্বারা, তাহলে আখেরে লাভ আমাদেরই।
বিজ্ঞানীদের কথায়, আমাদের মস্তিষ্ক যা কাজ করে তার ৯৫% আমাদের সচেতন মনের ক্ষমতার বাইরে, যা আমাদের অবচেতন মনের বিশ্লেষণ আর ইশারায় হতে থাকে।