Just In
দশমীর আগে 'বিজয়া' শব্দটি কেন ব্যবহৃত হয়? কেনই বা সিঁদুর খেলায় মাতেন সকলে?
বিজয়া দশমী মানেই মন খারাপের দিন। এই দিনে ঘরের মেয়ে উমা তার বাপের বাড়ি ছেড়ে পুনরায় পাড়ি দেন কৈলাসে। স্বভাবতই মন খারাপ থাকে আপামর বাঙালির। কেউই চায় না উমা কে বিদায় দিতে। কিন্তু কালের নিয়মে মা দুর্গাকে বিদায় জানাতেই হবে, ফিরতে হবে কৈলাসে। তাই চোখে জল, হাজারো মন খারাপের মাঝে হাসি মুখে সিঁদুর খেলা ও মিষ্টিমুখ করার মাধ্যমে উমাকে বিদায় জানান সকলে। কারণ, মা দুর্গা দেবী রূপে পূজিত হলেও, বিদায় নেন কন্যা রূপে।
তবে বিজয়া দশমী ও তার রীতিকে ঘিরে মানুষের মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। এই যেমন, দশমীর আগে কেন ' বিজয়া ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়? সিঁদুর খেলার গুরুত্ব কী? আবার বিজয়ায় বিসর্জনের তাৎপর্য কী? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সমূহ।
'বিজয়া ' শব্দ ব্যবহারের কারণ কী?
দুর্গাপূজার অন্ত চিহ্নিত হয় 'বিজয়া দশমী'-র মাধ্যমে। এই 'দশমী' কথাটির সাধারণ অর্থ কিন্তু খুবই সহজ। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে মা দূর্গা পাড়ি দেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। সেই কারণেই এই তিথিকে 'দশমী' বলা হয়। কিন্তু দশমিকে বিজয়া বলা হয় কেন? কোন 'বিজয়’-কেই বা চিহ্নিত করে দিনটি? তার কারণ খুঁজতে গেলে অনেক পৌরাণিক ব্যাখ্যা উঠে আসবে সামনে।
পুরাণে মহিষাসুর-বধ কাহিনিতে লেখা রয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে মা দুর্গার ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ হওয়ার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। নারী শক্তির এই জয়লাভকেই 'বিজয়া' বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আবার শ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুযায়ী, দেবী আবির্ভূত হন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী-তে এবং মহিষাসুরকে বধ করেন শুক্লা দশমীতে। তাই দশমীতে এই বিজয়কেই চিহ্নিত করে বলা হয় 'বিজয়া দশমী'।
কেন সিঁদুর খেলা হয়?
বিজয়ার দিনে সিঁদুর খেলা দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান দিনে যে বিবাহিত নারীর সিঁথির সিঁদুর অন্য সময়ে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, তাকেও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিতে দেখা যায়। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, বর্তমান নারীদের কাছে সিঁদুর খেলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
হিন্দু বিবাহ রীতিতে সিঁদুরদান একটি লৌকিক আচার মাত্র। কিন্তু সুপ্রাচীন কাল থেকে বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গলকামনায় সিঁথিতে সিঁদুর পরতেন। সিঁদুরকে তাঁরা খুব পবিত্র বলে মনে করতেন। আর দেবী দূর্গা যেহেতু বিবাহিত, তাই তাঁর বিদায় বেলায় তাঁকে সিঁদুর পরিয়ে ও মিষ্টি মুখের মাধ্যমে বরন করা হয়। দুর্গা পুজোয় যে সব উপচার দেবীকে দান করতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল সিঁদুর।
'ভবিষ্য পুরাণ’ মতে, সিঁদুর ব্রহ্মের প্রতীক। বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরার মাধ্যমে পরম ব্রহ্মকে আহ্বান করেন স্বামী এবং নিজের মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনায়। মনে করা হয়, পরমব্রহ্ম সংসারের সকল দুঃখ কষ্ট দূর করে সুখ দান করেন ভক্তদের। তাই আজও দশমীর দিনে সিঁদুর খেলা হয়ে থাকে। যদিও বর্তমান দিনে কুমারী মেয়েরাও সিঁদুর খেলায় মত্ত হন।
বিসর্জন এর তাৎপর্য
বিজয় দশমীর দিন আরেক অনুষ্ঠান হল দেবীর বিসর্জন। সনাতন ধর্ম অনুসারে, মানুষের দেহ যেমন আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি এই পঞ্চতত্ত্বের উপাদান দিয়ে তৈরি, তেমনি প্রতিমার ক্ষেত্রেও এক। তাই মাটির প্রাণহীন মূর্তিতে উপসনার জন্য প্রতিমা তৈরি করে তাকে সাকার রূপ দেওয়া হয়। আর পুজোর শেষে দেবীকে বিদায় দেওয়ার সময় প্রতিমাটি আবার প্রাণহীন মূর্তি হয়ে যায়। তাই মূর্তিকে আবার পঞ্চতত্ত্বের একটি, অর্থাৎ জলেই বিসর্জন দেওয়া হয়। জলের মাধ্যমেই প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়। এই কারণেই দশমীর দিন বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে।