Just In
দুর্গা পূজা ২০১৯ : জেনে নিন দিনক্ষণ ও পুজোর গুরুত্ব
"আশ্বিনের
মাঝামাঝি,
উঠিল
বাজনা
বাজি,
পূজার
সময়
এল
কাছে।"
পুজোর সময় আগত। মা আসছেন... আনন্দে, উচ্ছাসে মুখরিত আকাশ-বাতাস। আর মাত্র ক'টা দিন অপেক্ষা। তারপরই, বাজবে ঢাক, ভেসে আসবে ধুনোর গন্ধ, শুরু হবে মন্ত্র পাঠ, শাড়ি আর পাঞ্জাবির মিলনে একাকার। মর্ত্যের রুপ এক অনন্য মাত্রায় ফুটে উঠবে। প্রত্যেক বাঙালীর জীবনে প্রেম, ভালোবাসা, নতুন সম্পর্ক এই সব কিছুরই শুভারম্ভ হয় দুর্গা পুজোর মাধ্যমে। এই উৎসবে রাগ, অভিমান সব ভুলে সবাই সবাইকে আপন করে নেয়। বলা যায়, মা দুর্গাই সাবর মধ্যে সবার মিলন ঘটায়।
'মা আসছেন' এই শব্দটিতেই বাঙালির সমস্ত আবেগ যেন মিশে আছে। ফের ভোরের রেডিও খুললেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সুমধুর কণ্ঠস্বরের স্তোত্রপাঠ শুরু হবে। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, ঢাকের তালে মাতবে বাঙালি। এখন প্রত্যেকেই ব্যস্ত পুজোর শপিং, প্ল্যানিং নিয়ে। পুজো প্যান্ডেলগুলোর কাজ প্রায় শেষ মুহূর্তে। প্রতিমা গড়ার কাজও প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবছর বাংলা ক্যলেন্ডার অনুযায়ী আশ্বিন মাসে দুর্গা পুজো পড়ে এবং ইংরাজী ক্যালেন্ডারে দুর্গা পুজোর দিন ক্ষণ প্রায়ই পাল্টায়। কোনও বছর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর আবার কোনও বছর নভেম্বরেও পড়ে। দেখে নেওয়া যাক ২০১৯ সালের দুর্গাপুজোর দিনক্ষণ ও জেনে নিন এই পুজোর গুরুত্ব।
মহালয়া
মহালয়ার আর বেশি দেরি নেই। কারণ, এই মাসের শেষেই পড়েছে মহালয়া, অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯। প্রতি বছরের মতো এবছরও ভোরবেলায় প্রত্যেক বাঙালির ঘরে বাজবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সুমধুর কণ্ঠস্বরের সেই চিরাচরিত স্তোত্রপাঠ "আশ্বিনের শারদপ্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর।" এইদিন বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রত্যেকেরই কান,মন স্থির থাকে রেডিওর দিকে, ভোরের এই স্তোত্রপাঠ শোনার জন্য। এই স্তোত্রপাঠের মাধ্যমেই শুরু হয় দুর্গাপুজো।
পঞ্চমী ও ষষ্ঠী
কিছু কিছু প্যান্ডেলে পঞ্চমীর আগেই বেদী আলো করে প্রতিমা স্থান পায়। আবার, কিছু কিছু প্যান্ডেলে পঞ্চমী দিনই প্রতিমা আসে। ২০১৯ সালের মহাপঞ্চমী পড়েছে ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার এবং শাস্ত্র মতে মহাষষ্ঠী পড়ছে ৪ অক্টোবর, শুক্রবার। মহাষষ্ঠীর দিন থেকেই আসল পূজা-অর্চনা শুরু করেন পুরোহিতরা।
সপ্তমী ও অষ্টমী
২০১৯ সালের মহাসপ্তমী শুরু হবে ৫ অক্টোবর, শনিবার এবং মহাঅষ্টমী পড়েছে ৬ অক্টোবর, রবিবার। অষ্টমী মানেই বাঙালির কাছে পুজোর দিনগুলির মধ্যে সবথেকে প্রিয় দিন। এইদিন বেশিরভাগ মেয়েদের পরনে থাকে শাড়ি ও ছেলেরা পরে পাঞ্জাবী। সকাল সকাল প্রত্যেকে সেজে-গুজে মন্ডপের দিকে রওনা দেয় মহাঅষ্টমীর অঞ্জলির জন্য। এইদিন দুপুর থেকেই শুরু হচ্ছে সন্ধিপুজো অর্থাৎ অষ্টমীর দুপুর ১:৫৭ মিনিটে সময় শুরু হচ্ছে সন্ধিপুজো , আর শেষ হচ্ছে ২ :৪৫ মিনিটে।
নবমী ও দশমী
২০১৯ সালের মহানবমী পড়েছে ৭ অক্টোবর, সোমবার এবং মহাদশমী পড়েছে ৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার। এর সঙ্গেই শেষ হতে চলেছে ২০১৯ সালের দুর্গাপুজোর পর্ব। বিকেলের মন কেমনের সূর্যাস্তে সিঁদুর খেলার আনন্দে গা ভাসিয়ে উমাকে বিদায় জানাবে বাঙালি । আর তার মধ্যে দিয়েই শুরু হবে আবার পরের বছরের পুজোর অপেক্ষা। আরও একটা বছরের অপেক্ষা। আর বোল উঠবে 'আসছে বছর আবার হবে। '
গুরুত্ব বা তাৎপর্য
কথিত আছে, ভগবান ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে মহিষাসুর নামক এক অসুর দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে। দেবরাজ ইন্দ্রসহ সব দেবতা মিলিত হয়ে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের কাছে যান সাহায্য প্রার্থী হয়ে। মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনী শুনে সব দেবতারা একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গাকে। অসুর বা অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য তিনি আবির্ভূত হন। যেখানেই তিনি অন্যায় দেখেন সেখানেই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
তিনি দুর্গারূপে জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁর এক নাম 'দুর্গতিনাশিনী'। আবার, তিনি মহিষাসুরকে নিধন করেছিলেন বলে তিনি 'মহিষাসুরমর্দিনী '। এছাড়া, সাধারণ ঘরের মেয়ে হিসেবে তিনি উমা, গৌরি, মৃন্ময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বলা হয়, পুজোর ক'টা দিন তিনি সপরিবারে মর্ত্যে তাঁর বাবার বাড়িতে ঘুরতে আসেন। দশমীর দিন তিনি আবার সপরিবারে তাঁর স্বামীর বাড়ি ফিরে যান। ভারতবর্ষে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এই দেবীশক্তির পূজা চলে আসছে। তবে বঙ্গদেশে এর প্রসার ও প্রচার সর্বাধিকভাবে লক্ষ্য করা যায়।