Just In
রাবণ বধের পর শ্রীরাম হনুমানকেও মারতে চেয়েছিলেন! জানুন আসল ঘটনা
বলেন কী? শ্রীরাম মারবেন হনুমানকে! এমনটা হতেই পারে না। জানি পাঠক বন্ধু জানি, এমন ঝটকা খাওয়াটা বেজায় স্বাভাবিক। কারণ আমি যখন প্রথম ঘটনাটা শুনেছিলাম, তখন আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। কিন্ত পরে কতটা আগ্রহের কারণেই প্রাচীন কালে লেখা একাধিক প্রাচীন পুঁথি ঘাটতে শুরু করেছিলাম। আর এমনটা করতে গিয়ে যা জানলাম, তা বেজায় চমকপ্রদ!
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে জানেন?
রাবণ বধের পর শ্রী রামকে অযোধ্যার রাজাধিরাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এবং ১৪ বছর কেটে যাওয়ার কারণে শ্রী রাম, সীতা মা এবং লক্ষণ ফিরে এসেছিলেন অযোধ্যায়। সেই খুশিতে রামের দরবারে নামি-জ্ঞানী ঋষিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর ঠিক তখনই ঘটেছিল সেই ঘঠনাটা।
কী ঘটনা:
সভায় উপস্থিত নারদ মনির হঠাৎই চোখ গেল হনুমানজির উপর। আর তখনই এক দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলে নারদ মনির মনে। তিনি ঠিক করলেন হনুমানজিকে গিয়ে বললেন, সভায় উপস্থিত সমস্ত ঋষি-মুণিদের তিনি যেন প্রণাম করেণ, শুধু ঋষি বিশ্বমিত্রকে ছাড়া। কারণ বিশ্বমিত্র সাধু হওয়ার আগে ছিলেন একজন রাজা। যেই না ভাবা, আমনি হনুমানজিকে সব কথা খুলে বললেন নারদ মনি।
হনুমানজি ছিলেন বেজায় সরল মনের। তাই তো নারদ মণির কথা শুনে সবাইকে প্রণাম করলেও বিশ্বমিত্রকে প্রণাম করলেন না হনুমানজি। তবে তাতে বিশ্বমিত্র একেবারেই রেগে গেলেন না বা দুঃখও পেলেন না। কিন্তু এমনটা দেখে ক্ষেপে গেলেন নারদ মনি। আর তারপর...
কী করলেন নারদ মণি?
হনুমানজিকে ফাঁসানোর প্ল্যান ফেল হতে দেখে নারদ মনি নিজ আসন ছেড়ে বিশ্বমিত্রর কাছে গিয়ে হনুমানজির নামে নানা খারাপ কথা বলতে শুরু করলেন। সেই সব শুনে বিশ্বমিত্র এতটাই রেগে গেলন যে রামকে আদেশ গিলেন হনুমাজিকে মেরে ফেলার জন্য।
আর রাম কী করলেন জানেন?
কী আর করবেন। তাঁকে বিশ্বমিত্রর কথা শুনতেই হত। কারণ বিশ্বমিত্র ছিলেন শ্রী রামের গুরু। আর গুরুর কথা অমান্য করবে এমন সাধ্য কার। তাই গুরুর কথা শুনে শ্রী হনুমানকে আক্রমণ করলেন রাম। কিন্তু যাকে সারা জীবন ভগবান রূপে মেনে এসেছেন তাঁকে প্রতি আক্রমণ করবেন কীভাবে! তাই আক্রমণ না করে শ্রী হনুমান কী করলেন জানেন?
কী, কী করলেন হনুমান?
রামের সামনে বসে এক মনে "রাম নাম" জপ করতে শুরু করলেন। আর রামের নাম নেওয়ার সময় শ্রী হনুমানের চারিপাশে একটা বলয় তৈরি হয় গেল, যে বলয় ভেদ করে শ্রী রামের একটাও তীর হনুমানজিকে আঘাত করতে পারলো না। এদিকে এমনটা দেখে শ্রী রাম অবশেষে ব্রহ্মাস্ত্র চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আর ব্রহ্মাস্ত্রের মারে কেউ বাঁচতে পারবে না একথা সবারই জানা ছিল। তাই সভায় উপস্থিত বাকি ঋষিরা হই হই করে উঠসেন। সবাই শ্রী রামকে অনুরোধ করতে লাগলেন যে দয়া করে তিনি যেন ব্রহ্মাস্ত্রের প্রয়োগ না করেন হনুমানজির উপর। কিন্তু রাম সেই অনুরোধ শুনবেন কীভাবে, গুরুর আদেশ যে তাঁকে মানতেই হবে। তাই আবশেষে ব্রহ্মাস্তের প্রয়োগ করেই দিলেন শ্রী রাম...
তারপর, তারপর কি হল?
ব্রহ্মাস্তের মার থেকে কেউ বাঁচতে পারে না ঠিকই। কিন্তু সেদিন এক আশ্চর্য ঘঠনা ঘটল। "রাম নাম" এর মধ্যে এতটাই শক্তি ছিল যে ব্রহ্মাস্ত্রও বিফলে গেল, আর হনুমানজির শ্রী রামের প্রতি এমন শ্রদ্ধা দেশে নারদ মনি এতটাই প্রসন্ন হলেন যে বিশ্বমিত্র কাছে গিয়ে নিজের ভুলের ক্ষমা চেয়ে চেয়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন যে তিনি যেন রামকে থামান। সব শুনে বিশ্বমিত্র রামকে আদেশ দিলেন এবং শ্রী রাম আবশেষে নিজ আক্রমণ থামিয়ে হনুমানজিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
এ জীবনে খুশি থাকতে রাম নাম করুন:
কী বুঝলেন বন্ধু! রাম নামের মধ্যে এমন ক্ষমতা রয়েছে যে স্বয়ং রামের আক্রমণকে থামিয়ে দিতে পারে। তাই তো প্রতিদিন রাম নাম করলে বাকি জীবনটা আনন্দে কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা য়ায় বেড়ে। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু সুফল মেলে। যেমন ধরুন...
১. বৈবাহিক জীবন আনন্দে ভরে ওঠে:
নিয়মিত রামের নাম নিলে গৃহস্থে দেবের আগমণ ঘঠে। আর যে স্থানে স্বয়ং শ্রী রাম বিরাজমান হন, সেখানে যেমন কোনও দুঃখ-কষ্ট ঘেঁষতে পারে না, তেমনি পরিবারের কোনও সদস্যদের মধ্যে কোনও ধরনের ঝামেলা বা কলহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, দেবের আশীর্বাদে স্বামী-স্ত্রী মধ্যেকার সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটে।
২. গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয় যে এই মন্ত্রটি পাঠ করা মাত্র চারিপাশে পজেটিভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে একদিকে যেমন খারাপ শক্তির মাত্রা কমতে শুরু করে, তেমনি গুড লাক রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে। আর ভাগ্য যখন একবার রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে, তখন মনের ছোট থেকে ছোটতর ইচ্ছা পূরণ হতে যে সময় লাগে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
৩. স্ট্রেস, মানসিক চাপ এবং অনিদ্রার মতো সমস্যা সব দূরে পালায়:
শুনতে আজব লাগলেও একথা সত্যি যে নিয়মিত রাম নাম নেওয়া শুরু করলে মানসিক অশান্তি দূর হয়। ফলে মন এতটাই শান্ত হয়ে ওঠে যে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যার প্রকোপ কমতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি অনিদ্রার মতে রোগও দূরে পালায়। ফলে হারিয়ে যাওয়া সুখ-শান্তি তো ফিরে আসেই, সেই সঙ্গে ঘুম ঠিক মতো হওয়ার কারণে নানাবিধ রোগের খপ্পরে পরার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৪. অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে:
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে যাচ্ছেন, এদিকে না পদন্নতি, না মাইনে বৃদ্ধি, কোনও কিছুই কি হচ্ছে না? তাহলে বন্ধু টানা ৪০ দিন এক মনে রাম নাম নিন, দেখবেন আপনার পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবেই আসবে। কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত রাম নাম নেওয়া শুরু করলে কর্মক্ষেত্রে পদন্নতির সুযোগ তো বৃদ্ধি পায়ই, সেই সঙ্গে চরম অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানাবিধ ঝামেলা বা ধার-দেনাও মিটে যায় চোখের পলকে। তাই তো বলি বন্ধু, ৩০ পেরতে না পেরতেই যদি অনেক অনেক টাকার মালিক হয়ে উঠতে চান, তাহলে রাম নাম জপ করতে ভুলবেন না যেন!
৫. আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো:
নানা রোগের জ্বালায় কি জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? তাহলে একবার বিশ্বাসকে সঙ্গ করে রাম নাম নেওয়া শুরু করুন। তারপর দেখুন কী হয়! আসলে অনেকেই এমনটা বিশ্বাস করেন যে এই মন্ত্রটি এতটাই শক্তিশালী যে পাঠ করা মাত্র আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের অন্দরে পজেটিভ শক্তির বিকাশ ঘটতে শুরু করে, যার প্রভাবে ছোট-বড় সব রোগ দূরে পালায়। ফলে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো।