Just In
ধনতেরাস ২০১৮: এই উপকারগুলি পেতে ধনতেরাসের দিন যমরাজের পুজো করা মাস্ট...!
ধনতেরাসের দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করার পাশাপাশি সোনা-রুপোর জিনিস অথবা বাসনপত্র কিনলে সারা বাড়িতে পজেটিভ শক্তির মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তার প্রভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময় লাগে না।
বাঙালিদের মধ্যে ধনতেরাস পুজোর একেবারেই চল নেই। তারা শুধু বাকিদের দেখে ধনতেরাসের দিন গয়নার দোকানের লম্বা লাইন পেরিয়ে সোনা-গয়না, নয়তো কখনও সখনও বাসনপত্র কিনেই ক্ষান্ত থাকেন। কিন্তু বন্ধু, হিন্দু শাস্ত্রের দিকে যদি নজর ফেরান, তাহলে জানতে পারবেন, ধনতেরাসের দিন সোনা-রূপোর গয়না কেনার পাশপাশি যদি বিশেষ পুজোর আয়োজন করা যা, তাহলে একাধিক উপকার মেলে, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আগামী ৫ নভেম্বর ধনতেরাস। এদিন যমরাজের পুজোর আয়োজন করার পাশাপাশি পকেট সঙ্গ দিলে সোনার গয়না, রূপোর গয়না অথবা বাসনপত্র কিনতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এমন বিশেষ দিনে যমরাজের পুজোর আয়োজন করলে অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে কোনও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যায় কমে। শুধু তাই নয়, এমন বিশেষ পুজোর আয়োজন করলে ধনদেবতা কুবের যেমন প্রসন্ন হন, তেমনি গৃহস্থে আসন পাতেন মা লক্ষ্মী। ফলে দেব-দেবীদের আশীর্বাদে একদিকে যেমন টাকা-পয়সা সংক্রান্ত নানা ঝামেলা মিটে যায়, তেমনি পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধির ছোঁয়া লাগতেও সময় লাগে না।
ধনতেরাসের দিন হঠাৎ যমরাজের পুজো করা হয় কেন? আসলে একাধিক প্রাচীন বই ঘেঁটে একটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়। কী সেই ঘটনা? হীমা নামে এক রাজা ছিলেন এদেশে। তাঁর পুত্র সত্নান জন্ম নেওয়ার পর জ্যোতিষীরা রাজাকে সাবধান করে বলেছিলেন এ ছেলের যেদিন বিয়ে হবে, তার ঠিক চারদিন পরেই মৃত্যু ঘঠবে। একথা শুনে রাজা এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে ছেলে বড় হওয়ার পর তাঁকে কোনও মেয়ের সামনেই আসতেই দিতেন না। কিন্তু ঘটনা চক্রে রাজপুত্র একদিন এক রাজকন্যার দেখা পান। প্রথম দেখাতেই প্রেম, পরে বিয়ে।
বিয়ের দিন রাজার মুখে সব শুনে সেই রাজকন্যাও বেজায় ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু একই সঙ্গে নিজেকে কথা দিলেন, যে করেই হোক তাঁর স্বামীকে সে বাঁচাবেই বাঁচাবে। চতুর্থ দিন রাত্রি বেলা বড়ির সদর দরজার সামনে রাজকন্যা তাঁর সমস্ত গয়না খুলে রেখে তার চারিদিকে প্রদীপ দ্বালিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে রাজপুত্রকে ঘুমতে দিলেন না। মাঝরাতে সাপের বেশ ধারণ করে যমরাজ প্রাসাদের সদর দরজার সামনে আসতেই সোনার গয়নার ঝলকানিতে তাঁর চোখ এমন ধাঁদিয়ে যায় যে কিছু দেখতে না পেয়ে প্রাসাদে না ঢুকেই ফিরে যান। ফলে রাজপুত্রের জীবন বেঁচে যায় রাজকন্যার এই প্রয়াসে।
যে রাতে এই ঘটনাটা ঘটেছিল, সেই দিনটি ছিল অশ্বিন মাসের ১৩ তম দিন, উপরন্তু কৃষ্ণপক্ষ। সেই থেকেই এমন বিশ্বাস যে আশ্বিন মাসের ১৩ তম দিনে, কৃষ্ণপক্ষে যমরাজের পুজো করলে হঠাৎ মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা যায় কমে। প্রসঙ্গত, পরবর্তীকালে এই বিশেষ দিনটিই ধনতেরাস নামে পরিচিত হয় সারা দেশ।
শাস্ত্র মতে ধনতেরাসের দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করলে যমরাজ এবং মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে যে যে সুফলগুলি মেলে, সেগুলি হল...
১. রোগ-ব্যাধি সব দূরে পালায়:
এমন বিশ্বাস রয়েছে যে ধনতেরাসের দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করার পাশাপাশি সোনা-রুপোর জিনিস অথবা বাসনপত্র কিনলে সারা বাড়িতে পজেটিভ শক্তির মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তার প্রভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে যমরাজ এবং মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে ছোট-বড় রোগ-ব্যাধিও সব দূরে পালায়। ফলে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো। তাই তো বলি বন্ধু, সুস্থ শরীরে যদি বহুদিন বাঁচার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এবছর ধনতেরাসের দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না যেন!
২. বাচ্চাদের কোনও ক্ষতি হয় না:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধ, ধনতেরাসের দিন মা লক্ষ্মী এবং যমরাজের নামে পুজো দিলে পরিবারের ছোট সদস্যদের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি নানাবিধ রোগ-ব্যাধিতে বারে বারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যায় কমে।
৩. যে কোনও সমস্যা মিটে যায়:
নানাবিধ সমস্যার কারণে কি জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? তাহলে এবছর ধনতেরাস পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না যেন! কারণ শাস্ত্র মতে এদিন, এমন বিশেষ পুজো করলে মা লক্ষ্মী এবং গণেশ দেব এতটাই প্রসন্ন হন যে জীবন পথে চলতে চলতে সামনে আসা যে কোনও সমস্যা মিটে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে দেব-দেবীদের আশীর্বাদে হারিয়ে যাওয়া মানসিক শান্তিও যেমন ফিরে আসে, তেমনি স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।
৪. টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সব ঝামেলা মিটে যায়:
এমনটা অনেকে বিশ্বাস করেন যে ধনতেরাসের দিনই সমুদ্র মন্থনের কারণে আর্বিভাব ঘটেছিল মা লক্ষ্মীর। তাই তো এদিন বিষ্ণু পত্নীর পুজো করলে দেবী এতটাই প্রসন্ন হন যে গৃহস্থে তাঁর আগমণ ঘটে। আর শাস্ত্র মতে যে বাড়িতে মা লক্ষ্মী আসন পাতেন, সেখানে গণেশ ঠাকুর এবং ধন দেবতা কুবেরেরও প্রবেশ ঘটে। ফলে সেই পরিবারের যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন মিটে যায়, তেমনি অনেক অনেক টাকার মালিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও যায় বেড়ে। তাই তো বলি বন্ধু, বাকি অনেকের মতো আপনিও যদি বড়লোক হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে এ বছর ধনতেরাসের দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না যেন!
ধনতেরাস পুজোর সময়কাল:
আগামী ৫ নভেম্বর ধনতেরাস। আর ত্রয়োদশী তিথি শুরু হচ্ছে ৪ তারিখ রাত ১:২৪ মিনিটে। আর শেষ হচ্ছে ৫ তারিখ রাত ১১:৪৬ মিনিটে। প্রসঙ্গত, ধনতেরাস পুজোর লগ্ন ৫ তারিখ সন্ধ্যা ৬:৩৮ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হচ্ছে রাত ৮:৩২ মিনিটে।
ধনতেরাস পুজোর নিয়ম:
এদিন বিশেষ পুজো শুরু করার আগে প্রথমে গণেশ ঠাকুরের ছবি বা মূর্তি ভাল করে মুছে নিয়ে তাঁকে প্রতিষ্টা করতে হবে। তারপর দেবের সারা শরীরে সিঁদুর এবং চন্দন লাগিয়ে পাঠ করতে গণেশ মন্ত্র। গণেশ পুজোর পর শুরু করতে হবে লক্ষ্মী পুজো। ফুল, চন্দন এবং প্রসাদ নিবেদন করে করতে হবে দেবীর পুজো এবং অবশ্যই পাঠ করতে হবে মহালক্ষ্মী মন্ত্র। সবশেষে সারা বাড়িতে ১৩ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে নাম নিতে হবে যমরাজের। এই নিয়মগুলি মেনে পুজো করলে মা লক্ষ্মী তো প্রসন্ন হবেনই, সেই সঙ্গে গণপতি এবং যমরাজের আশীর্বাদে দেখবেন জীবনটাই বদলে যাবে।