Just In
গর্ভাবস্থায় দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভুগছেন? আপনার ঘরেই আছে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপাদান
গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মায়েরাই নিজের প্রতি বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকেন যাতে, কোনও খারাপ প্রভাব তার বাচ্চার শরীরে না পড়ে। কিন্তু, কখনও কখনও বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও শারীরিক কারণের জন্য মুখোমুখি হতে হয় বহু সমস্যার। এই নানবিধ সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল দাঁতের ব্যাথা ও রক্ত ক্ষরণ। গর্ভাবস্থায় এটি হলে শরীরের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়ে।
আমরা জানি যে, গর্ভাবস্থায় ক্রমাগত হরমোনের পরিবর্তন হতে থাকে। যে কারণে, প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে দাঁতের মাড়ি নমনীয় হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে, ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে এবং দাঁতের ব্যাথা বাড়তে পারে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের খারাপ প্রভাব গর্ভাবস্থায় নানান সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে, নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় আপনিও যদি এই সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হন, তবে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া সহজ পদ্ধতি আছে, যা আজ আমরা আপনাদের জানাব। এগুলি ব্যবহার করলে ভাল প্রতিকার পেতে পারেন। বিভিন্ন দাঁতের রোগ, যেমন - জিঞ্জিভাইটিস, পেরিওডন্টাইটিস এবং ব্লিডিং পার গাম প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করুন নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলি -
১) লবঙ্গ
ঘরে থাকা সবচাইতে সহজলভ্য একটি বস্তু, যা দাঁতের ব্যাথা ও মাড়ির সমস্যা দূর করতে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক। গোটা লবঙ্গ বা লবঙ্গ তেল অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাথা ও রক্ত ক্ষরণ রোধ করতে সাহায্য করে। লবঙ্গে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান মাড়ির রক্ত ক্ষরণ দ্রুত বন্ধ করে এবং দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করে। দ্রুত উপশম পেতে লবঙ্গকে চিবান অথবা দাঁত এবং মাড়িতে তুলোর সাহায্যে ব্যাথা জায়গাগুলিতে লবঙ্গ তেল ঘষুন।
২) অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার নানা ঔষধি গুণাগুণের কথা আমরা সকলেই জানি। এই বহু গুণী শক্তিশালী উদ্ভিদটি গর্ভাবস্থায় দাঁতের ব্যথা ও রক্ত ক্ষরণের প্রতিকারে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার রস বা জেল ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে মাড়িতে ঘষে নিন এবং তা ৩ থেকে ৫ মিনিট মুখে রাখার পর কুলি করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
৩) নিম পাতা
মাড়ির প্রদাহজনিত সমস্যা ও রক্ত ক্ষরণের চিকিৎসায় নিম পাতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিম পাতার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি দাঁতের ভিতরে জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধ করে এবং মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরণও বন্ধ করতে সাহায্য করে।
দাঁত বা মাড়ির এই জাতীয় সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন খাবার পর দুটি বা তিনটি করে নিম পাতা চিবোতে পারেন। এর রস মাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। কেনা মাউথ ওয়াস ব্যবহার না করে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন নিমের একটি মাউথ ওয়াস। রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ব্যবহার করুন এটি। ফল পাবেন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই।
৪) বেদানার রস
বেদানা স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য খুব পরিচিত। বেদানার রস দাঁতের ওপর জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া বা ডেন্টাল প্ল্যাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় বেদানার রস পান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই রস ব্লিডিং পার গামের মত রোগকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যেকোনও সময় বা খাওয়ার পর বেদানার রস নিয়ে কুলকুচি করে পরিষ্কারভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন, এই রসটি যেন তাজা থাকে এবং এটির সাথে যেন কোনও কিছুই যোগ না করা হয়।
৫) মধু
মধুতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যাকে সমাধান করতে সাহায্য করে। রোজ যেকোনও সময় আঙুলের ডগায় মধু নিয়ে তা মাড়ির ক্ষত স্থানে হালকা মালিশ করলে উপকার পাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, মধু যেন দাঁতে না লাগে। কারণ, এতে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬) গ্রিন টি
গ্রিন টি-তে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, মাড়ির রক্ত ক্ষরণ ও দাঁতের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন টি অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। এক দিন আগে পরিষ্কার জলে গ্রিন টি ভিজিয়ে দিন এবং সেই জল দিয়ে রোজ কুলকুচি করুন। এটি মাড়িতে থাকা জীবাণুকে মারার পাশাপাশি মাড়ির রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও সাহায্য করবে।
৭) রসুন
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রসুন অত্যন্ত কার্যকর একটি উপাদান। দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। রসুনে অ্যালিসিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক থাকায় এটি দাঁতের ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলে এবং যন্ত্রণাকে কমায়।
এক কোয়া রসুন নিয়ে সেটি চেবান অথবা সরাসরি ক্ষত স্থানে রসুন থেকে নির্গত রসটি লাগান। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। রসুন ব্যবহারে কোনওরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না।
৮) বেকিং সোডা
গর্ভাবস্থায় পেইন কিলার এবং অ্যান্টিবায়টিকগুলি থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এই জাতীয় সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করুন বাড়িতে থাকা বেকিং সোডা। এই বেকিং সোডা মুখের ভেতরে তৈরি হওয়া অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে দাঁতের ক্ষয়কে রোধ করে। একই সঙ্গে মাড়ির একাধিক সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে।
সামান্য উষ্ণ জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে নিন অথবা ভেজা টুথ ব্রাশটিকে সামান্য বেকিং সোডার মধ্যে বুলিয়ে তা দিয়ে দিয়ে দাঁত মাজুন। রোজ খাবার খাওয়ার পর এটি করুন।
৯) হলুদ
হলুদ যেকোনও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হলুদে থাকা কারকিউমিন মাড়ির প্রদাহ এবং রক্ত ক্ষরণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়োর সাথে একটু সরষের তেল এবং এক চিমটি নুন মিশিয়ে পেষ্ট বানিয়ে নিন। এবার এই পেষ্টটি আপনার ক্ষত স্থানে ব্যবহার করুন এবং মাড়িতে ধীরে ধীরে মালিশ করুন। সারাদিনে যতবার খুশি ব্যবহার করতে পারেন। হলুদে থাকা এই কারকিউমিন মুখের ক্যান্সারের বৃদ্ধি কমাতেও কার্যকর।
১০) দুধ ও ফল
দুধে থাকে উচ্চমানের ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম। এটি মাড়িকে শক্তিশালী করতে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি আপেল, পেয়ারা, গাজর, পেঁপে ইত্যাদি ফল মাড়ির জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এইসব ফল খাওয়ার ফলে দাঁতের মাড়ির ভেতরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা দূর হয়। তাই, রোজ ফল ও গরম দুধ খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ভাল উপকার পেতে গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পান করুন। তবে, দুধ পান করার পর অবশ্যই দাঁত মাজবেন। অন্যথায় দাঁতে ব্যাক্টেরিয়া জন্ম নিতে পারে।