Just In
বাচ্চার ওজন কম? ক্যাঙারু কেয়ার এর সহজ সমাধান
ক্যাঙারু কেয়ারের যেমন ফিজিওলজিক্যাল সুবিধা আছে, তেমনই আছে বেশকিছু সাইকোলজিক্যাল সুবিধাও। এই কেয়ার মা ও সন্তান দুইয়ের মনেই পজিটিভ প্রভাব ফেলে।
ক্যাঙারু কেয়ার ঠিক কী জিনিস? পশুদের মধ্যে একমাত্র ক্যাঙ্গারুই এমন প্রাণী যে নিজের পেটের সঙ্গে যুক্ত চামড়ার থলিতে তার সন্তানকে রেখে প্রতিপালন করে। বাইরের খারাপ আবহাওয়া থেকে সন্তানকে রক্ষা কররতেই এমন ব্যবস্থা তাদের শরীরে। এমনকি সন্তান যদি রুগ্নও হয় তবে ক্যাঙ্গারুর এমন দেখভালেই সে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে পায়। ঠিক একইরকম কেয়ারের কথা বলেন ডাক্তাররা। সদ্যজাত শিশুর শরীর যদি কোনও কারণে দুর্বল হয় তবে এই ক্যাঙ্গারু কেয়ারই সন্তানকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে। শিশুকে খালি বুকে শুইয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে স্কিন-টু-স্কিন যোগাযোগের মাধ্যমে শিশুকে পালন করার পদ্ধতিকে ক্যাঙ্গারু কেয়ার বলে।
ক্যাঙারু কেয়ারের যেমন ফিজিওলজিক্যাল সুবিধা আছে, তেমনই আছে বেশকিছু সাইকোলজিক্যাল সুবিধাও। এই কেয়ার মা ও সন্তান দুইয়ের মনেই পজিটিভ প্রভাব ফেলে।
১। ওজন বৃদ্ধি
অনেকসময় মায়েরা খারাপ পরিস্থিতির কারণে প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্ম দিতে বাধ্য হন। প্রিম্যাচিউর শিশুদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল কম ওজন। এই শিশুদের ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেক ডাক্তার পরামর্শ দেন ক্যাঙারু কেয়ারের। বুকের মধ্যে শিশুকে শুইয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দুতিন ঘন্টা প্রতিদিন নিয়ম করে যত্ন নিলে শিশু ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ও কিছুসপ্তাহের মধ্যেই ওজন বেড়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
২। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
অনেকসময় দেখা যায় শিশুর ওজন ঠিক থাকলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে তলানিতে। ফলে শিশু দুর্বল হয় ও সহজেই বাইরের হাওয়ায় থাকা জীবণু তাকে আক্রমণ করে। এ থেকে শিশুর যে কোনওরকমের রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্যাঙারু কেয়ারের সুবিধা হল, মায়ের বা বাবার বুকের সংস্পর্শে থাকায় তাকে বাইরের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে হয় না। ইতিমধ্যে আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর শরীর প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে থাকে।
৩। ব্রেন ও স্নায়ুকোশের উন্নতি
ক্যাঙারু কেয়ারের ফলে শিশুর মস্তিষ্কের কোশ ও স্নায়ুকোশ সহজে উন্নত ও পুষ্ট হয়।
৪। স্ট্রেস কমায়
সদ্যজাত শিশুদের প্রায়ই মুড সুইং করে কান্নাকাটি স্বাভাবিক। ক্যাঙারু কেয়ারের ফলে শিশুর সঙ্গে তার মায়ের বা বাবার বন্ডিং দৃঢ় হয়, পাশাপাশি কান্নাকাটি কমিয়ে শিশু সহজে শান্ত হয়।
৫। উষ্ণতা ঠিক রাখা
প্রিম্যাচিউর শিশুদের পক্ষে নিজের দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয় না। ক্যাঙারু কেয়ারের ফলে শিশু তার বাবা বা মায়ের উষ্ণতা সরাসরি পায় ও উষ্ণতার ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারে। শিশুর শরীরের উষ্ণতা ঠিক না থাকলে শরীরের আন্তঃক্রিয়াগুলি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৬। ঘুম
ক্যাঙ্গারু কেয়ার শিশুকে ভালো ঘুমেও সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা মায়ের বা বাবার হার্টবিট শুনতে শুনতেই ঘুমে ঢলে পড়ে। প্রিম্যাচিউর শিশু ছাড়াও সাধারণ শিশুদের জন্য গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের কোশের বৃদ্ধির জন্য একান্ত প্রয়োজন।
৭। স্তনদুগ্ধ উৎপাদন
শুধুই সন্তানের ক্ষেত্রে যে এর প্রভাব আছে তা নয়, বরং মায়েদের ক্ষেত্রে বেশকিছু পজিটিভ পরিবর্তন আনে এই কেয়ার। ক্যাঙারু কেয়ারের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ডিং এর পাশাপাশি মায়ের স্তনদুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতেও এটি সাহায্য করে।
৮। প্রসবের পরের স্ট্রেস কমানো
ক্যাঙারু কেয়ার যেমন সন্তানকে দেয় শান্তির অনুভূতি তেমনই মাকেও মুক্তি দেয় অত্যাধিক স্ট্রেসের কবল থেকে। সন্তান জন্ম দেওয়ার তার প্রতিপালন নিয়ে মা থাকেন সবথেকে বেশি চিন্তার মধ্যে। এই কেয়ার মায়ের সঙ্গে সন্তানের আবেগ অনুভূতির একটি যোগসূত্র স্থাপন করে যা মায়ের স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে।
৯। স্তনদুগ্ধ পান করানো
ক্যাঙারু কেয়ারের ফলে সন্তান ঠিক কতটা দুধ খেয়ে শান্ত হতে পারে, বা দুধ খাওয়ার পরেও সে কেন কাঁদছে তা বুঝতে সমস্যা হয় না।
ক্যাঙারু কেয়ার সন্তান আর মা বা বাবাকে সবচেয়ে কাছাকাছি আনে ফলে দুজনের মধ্যেই দুজনের প্রতি অনুভূতি গড়ে ওঠে, গড়ে ওঠে মানসিক যোগ। এর জন্যই সন্তানের কোনওরকম সমস্যা না থাকলেও ডাক্তাররা এই কেয়ার নেওয়ার পরামর্শ দেন।