Just In
কোভিড-১৯ : সদ্য মা হয়েছেন? সুস্থ থাকতে মেনে চলুন এই ডায়েট প্ল্যান
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সারা বিশ্বের মানুষ এক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। বিশেষ করে যেসকল মানুষ অসুস্থ, গর্ভবতী বা সদ্য মা হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে সময়টা সত্যি খুব কঠিন। এই অবস্থায় কীভাবে নিজেদের সুস্থ রাখবেন সেই চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে। কারণ, বাচ্চা জন্মানোর পর মায়েদের শরীর অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায়। সেই দুর্বলতাকে কাটিয়ে তোলা খুবই প্রয়োজন। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, এই দুর্বলতাকে কাটিয়ে আবার সুস্থ হয়ে উঠতে ডায়েট একটা বড় ভূমিকা পালন করে। তাই, আজ আমরা এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছি, যেগুলি সদ্য মা হয়েছেন এমন মহিলাদের সুস্থ থাকতে খুবই সহায়তা করবে। দেখে নিন খাবারের তালিকা -
স্যালমন মাছ
সদ্য মায়েদের জন্য পুষ্টির পাওয়ার হাউস হল স্যালমন। এটি এমন একটি মাছ যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্যালমন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায়, এটি মস্তিষ্কের বিকাশে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ও শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। তাই প্রত্যেক মায়েদের এই মাছটি ডায়েটে রাখা খুবই প্রয়োজন। তবে এই মাছটি কত পরিমান খাবেন, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
সবুজ শাকসবজি
অনেকেই শাকসবজি খেতে পছন্দ করে না। কিন্তু সদ্য মায়েদের সুস্থ থাকতে সবুজ শাকসবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন শাকসবজি। ফুলকপি, ব্রকলি, পালং শাক, মেথি শাক ইত্যাদি রাখলে আরও ভালো।
ডাল
ডালে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ থাকার কারণে তা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সহজে হজম হয় এবং খেতে সুস্বাদু হয়। ডাল শরীরে ফ্যাট জমা হতে বাধা দেয়।
দুগ্ধজাত দ্রব্য
ভারতবর্ষের ৭০ শতাংশ মহিলার মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত বহু সমস্যা দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় এবং মা হওয়ার পরে এই সমস্যা আরও বেশি হতে থাকে। তাই এই ঘাটতি পূরণ করতে খান দুধ এবং দই। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে দই খুবই উপকারি।
ডিম
ডিম শরীরে প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। ডিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস্ এবং প্রোটিন, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই রোজ সকালে, দুপুরে এবং রাতে যেকোনও সময় দুটো করে সেদ্ধ ডিম খান।
বাদাম
বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মায়েদের শরীরের অনেক চাহিদাকে পূরণ করতে সহায়ক। রোজকার ডায়েটে রাখুন খেজুর, পেস্তা বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট, আমন্ড ইত্যাদি। এগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তবে, যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে তারা খাবেন না।
রসুন
রসুনে অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি শরীরে শ্বেত রক্ত কোষের উৎপাদন করতে সাহায্য করে, যা অনাক্রম্যতা বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারি। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রোজ দুপুরের খাবারে এক কোয়া করে রসুন খান।
ব্লুবেরি
গর্ভাবস্থার পরে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য এর বিকল্প আর নেই। ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ এই ফল শারীরিক এনার্জি বৃদ্ধি করার জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
হলুদ
হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতেও খুবই সহায়ক। তাই ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খান। আবার সকালে হাফ চা চামচ মধুর সঙ্গে অল্প একটু কাঁচা হলুদের টুকরোও খেতে পারেন।
ওটস্
আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এই খাবার মায়েদের জন্য খুবই উপকারি। এটি জিঙ্কের একটি অত্যন্ত ভালো উৎস, যা ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ফাইবার, বিটা-গ্লুক্যান, ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই ব্রেকফাস্টে ওটস্ খান।
গর্ভাবস্থায় নিজেকে সুস্থ রাখতে বর্ষাকালে এই নিয়মগুলি মেনে চলুন
মাংস
আয়রন, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি শরীরে শক্তির স্তর বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও মাংস জিঙ্কের একটি প্রধান উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। তাই সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন মাংস খেতে পারেন, তবে বেশি পরিমাণ খাবেন না। আবার খাসি মাংসে কোলেস্টেরল এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই খাসি মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংস খেতে পারেন।
জল
শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়েদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই, আপনার শক্তির স্তর এবং দুধ উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণ জল পান করুন। এছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও জলের ভূমিকা অপরিসীম।
ফল
সুস্থ এবং ফিট থাকতে প্রতিদিন ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ফলে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন বেরি জাতীয় ফল, আপেল, কমলালেবু, তরমুজ, আঙুর, ডালিম, পীচ ইত্যাদি খান।
মাশরুম
মাশরুমকে বলা হয় সুপার ফুড। যার কারণে চিকিৎসকরা ডায়েটে মাশরুম খাওয়ার কথাও উল্লেখ করে থাকেন। লো ক্যালোরি যুক্ত মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক। রোজকার ডায়েটে এই খাবারটি থাকলে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ হতে পারে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলস্ শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।