Just In
আপনার সন্তান কি সারাক্ষণ মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকে? কী করে কমাবেন এই আসক্তি? দেখুন টিপস
এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সঙ্গী হয়ে উঠেছে। মোবাইল ছাড়া এক মুহুর্ত চলার কথাও আমরা ভাবতে পারি না। বিশেষত করোনা কালে বেড়েছে স্মার্টফোনের প্রতি নির্ভরতা। অফিসের বহু কাজ তো বটেই, স্কুল-কলেজের পড়াশোনার অনেকটাই এখন ফোনেই হচ্ছে। ফলে এখনকার বেশিরভাগ বাচ্চাই মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। আবার অনেক অভিভাবকও বাচ্চাদের শান্ত রাখতে স্মার্টফোন বা ট্যাবে গান, কার্টুন কিংবা মজার ভিডিয়ো চালিয়ে দেন। ফলে দিন দিন বাচ্চাদের মোবাইল বা অন্যান্য গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখে পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছে অনেক শিশুর। সেই সব বাদ দিয়েও আরও বহু সময় তারা স্মার্টফোন হাতে নিয়ে কাটাচ্ছে। গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি বাচ্চাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন, বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের মস্তিষ্ককেও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া এর অতিরিক্ত ব্যবহার বাচ্চার চোখেরও ক্ষতি করে। তাই আগে থেকেই প্রত্যেক বাবা-মায়েদের সাবধান হওয়া ভাল। আপনার সন্তানের মোবাইল ফোনের আসক্তি কী করে কমাবেন? দেখে নিন কিছু টিপস।
১) বাচ্চাদের সামনে বেশি ফোন না ব্যবহার করা
বাচ্চারা সাধারণত বড়দের অনুকরণ করতে ভীষণ পছন্দ করে। তাই বাচ্চাদের সামনে যত কম মোবাইল ব্যবহার করবেন ততই মঙ্গল। বাচ্চার সামনে মোবাইল হাতে রাখবেন না, কিংবা মোবাইলে গান শোনা, গেম খেলা, গল্প বা চ্যাট করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলি দেখে বাচ্চাদের মনে মোবাইল সম্পর্কে কৌতুহল বাড়তে থাকে। তাছাড়া ফোন যে কোনও খেলার জিনিস নয়, এটি যোগাযোগের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাধ্যম, তা আপনার বাচ্চাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের হাতের নাগাল থেকে মোবাইল যথাসম্ভব দূরে রাখুন।
২) বাচ্চাদের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত রাখুন
অবসর সময়ে আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। কোনও জিনিস বানানো, গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, নাচ, গান কিংবা খেলাধূলা করা অথবা গাছের পরিচর্যা করা, ঘর গোছানো, ইত্যাদি কাজে তাকে ব্যস্ত রাখুন। বাড়ির কাছাকাছি কোনও পার্কে বা খেলার মাঠে নিয়ে যান খেলাধূলার জন্য। আশেপাশের স্পোর্টস ক্লাবে বাচ্চার নাম নথিভুক্ত করুন। প্রকৃতির সাথে পরিচয় করাতে নিয়মিত বাচ্চাকে নিয়ে হাঁটতে বেরোন। এতেও কমবে ফোনের আসক্তি।
৩) মোবাইলকে কখনোই খেলনা হিসেবে ব্যবহার না করা
অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের শান্ত করতে মোবাইলে গেম, গান, কার্টুন কিংবা মজাদার ভিডিয়ো চালিয়ে দেন। কিন্তু এটা করা একেবারেই উচিত নয়। বাচ্চার হাতে কোনও পরিস্থিতিতেই মোবাইল ফোন বা ভিডিয়ো গেম তুলে দেবেন না। এটি একেবারেই বাচ্চার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভাল নয়। তাছাড়া, এতে আপনার বাচ্চার মোবাইল ব্যবহারের বদভ্যাস তৈরি হতে পারে।
৪) বাচ্চার সঙ্গে বেশি সময় কাটান
এখনকার দিনে বেশিরভাগ মা-বাবাই চাকুরিজীবী। অফিসের খুব ব্যস্ত থাকায় বাচ্চার সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটানো হয়ে ওঠে না। ফলে বাচ্চারা গ্যাজেটের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। অনেক বাচ্চাই একাকিত্বের কারণে মোবাইল ফোনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাই চেষ্টা করুন দিনের কিছুটা সময় আপনার বাচ্চার সঙ্গে কাটানোর। বাচ্চার সঙ্গে যত সময় কাটাবেন, ততই ভাল। বাচ্চারা একা থাকলে খিটখিটে হয়ে যায় এবং বায়নাও বেশি করে। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের মনের কথা জানার চেষ্টা করুন, গল্প বলুন, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান। বাচ্চাদের বকাবকি করে নয়, ভালোবেসে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনার বাচ্চাকে নিয়ে ঘর গোছান, একসঙ্গে রান্না করুন বা বাগান তৈরি করুন। তাহলে দেখবেন আপনার সন্তান একাকীত্ব বোধ করবে না এবং মোবাইল থেকেও দূরে থাকবে।
৫) গ্যাজেট ব্যবহারের সময় বেঁধে দিন
অনলাইন ক্লাসের চাপে বাচ্চাদের আজ গ্যাজেটের ব্যবহার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তাই মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে দিলেও, তার একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন। দিনের কতটা সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে, তা গোড়াতেই ঠিক করুন। অনলাইন ক্লাসের পর আর মোবাইল বা ল্যাপটপ তার হাতে দেবেন না। খাওয়ার সময়, হোমওয়ার্কের সময়, ঘুমানোর সময় এবং বাইরে গিয়ে খেলার সময় তার হাতে মোবাইল দেবেন না। মোবাইল গেমের পরিবর্তে, বিভিন্ন ইনডোর এবং আউটডোর গেমের উপর বাচ্চাদের আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করুন।
৬) আপনার মোবাইলে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন
বাচ্চারা যেন আপনার অনুপস্থিতিতে মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য মোবাইলে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন। সবসময় বাচ্চার আশেপাশে থাকা এবং তাকে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। তাই আপনার ফোনে এমন পাসওয়ার্ড সেট করুন, যাতে আপনি দূরে থাকাকালীনও সে ফোন ব্যবহার করতে না পারে।
৭) মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে দিন
ফোনের কোন কোন অ্যাপ আপনার সন্তান বেশি ব্যবহার করে, সেদিকে নজর রাখুন। দেখা যাবে, এমন বহু অ্যাপ রয়েছে যা ওর কোনও কাজে লাগে না, বিশেষ করে গেমের অ্যাপগুলো। সেগুলি নিয়েই বাচ্চারা সময় কাটায় সবচেয়ে বেশি। তাই ওই অ্যাপগুলি দ্রুত ফোন থেকে মুছে ফেলুন। তাতে কিছুটা হলেও ফোনের প্রতি বাচ্চার আগ্রহ কমবে।