Just In
বাচ্চার জন্য দাদু-ঠাকুমা কেন গুরুত্বপূর্ণ? দেখে নিন কারণগুলি
দাদু-দিদা বা ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের প্রত্যেকের কাছেই স্মৃতির মতো। এই স্মৃতিগুলি আমাদের জীবনে অনেক কিছু শেখায়। অতীতে বেশিরভাগ একান্নবর্তী পরিবার থাকায় ছোটরা দাদু-ঠাকুমার সাহচর্যেই বেড়ে উঠত কিন্তু, বর্তমানে বেশিরভাগ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হওয়ায় বা কর্ম সূত্রে মা-বাবা বাইরে থাকায় ছোটদের দাদু-ঠাকুমার সাহচর্য পাওয়া বড় কঠিন হয়ে উঠেছে। খুব কম সময়ই বাচ্চারা তাদের দাদু-ঠাকুমাকে কাছে পায়।
বিজ্ঞান মতে, একটা বাচ্চার সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শুধু বাবা-মা নয়, পাশাপাশি দাদু-ঠাকুমার সাহচর্যও সমান জরুরি এবং যে শিশু দাদু-দিদার সঙ্গে বড় হয় তারা সাধারণত অন্য শিশুদের চেয়ে আলাদা হয়। এই বাচ্চারা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে বাঁচতে শেখে, অন্যকে সম্মান করে এবং প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। কেবল এটিই নয়, বাচ্চাদের আচরণগত বিকাশের পাশাপাশি দাদু-ঠাকুমার স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সুখকর এবং নিরাপদ
সাধারণত যে বাবা-মায়েরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকে সেই বাচ্চাদের লালন-পালন করার জন্য দাদু-ঠাকুমা থাকা খুব জরুরি। তাঁরা সবরকমভাবে বাচ্চার খেয়াল রাখেন এবং যত্ন করেন। বাবা-মা যখন হাজার কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন দাদু-ঠাকুমাই নাতি-নাতনির কাছে সেরা বন্ধু হয়ে ওঠে। দাদু-দিদা কেবল বাচ্চাদের বড় হতে সহায়তা করে না, তাদের নিরাপদ পরিবেশও প্রদান করে।
তাঁরা অনেক কিছু শেখায়
দাদু-ঠাকুমার কাছ থেকে বাচ্চারা তাদের পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, এর থেকে অনেক রকম শিক্ষাও পায়। ন্যায়-নীতি, সামাজিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, আবেগ এই সবকিছুর প্রথম পাঠ বাচ্চারা দাদু-ঠাকুমার কাছ থেকেই শেখে, যা বড় হয়ে তাদের সঠিক পথ চিনতে সাহায্য করে এবং মানসিকতা গড়ে তোলার কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক বিকাশ
বাচ্চারা যখন ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে বেশি সময় ব্যয় করে, তখন তাদের মানসিক বুদ্ধি বাড়ে। তাই, এই শিশুদের সাধারণত কোনও ধরনের আচরণগত সমস্যা হয় না। বয়সের সাথে সাথে এই বাচ্চারা সহজেই সব ধরনের পরিস্থিতি সামলে নিতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা প্রমাণ করেছে যে, দাদু-দিদার কাছে যে শিশুরা বড় হয় তারা একাকীত্ব, রাগ এবং হতাশার বোধ অনুভব করে না। এই জাতীয় শিশুরা প্রতিটি উপায়ে নতুন করে বাঁচতে শেখে এবং সব ধরনের সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়।
ভালোবাসাই পারে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ দ্রুততর করতে, জেনে নিন পদ্ধতিগুলো
নৈতিকতা
প্রতিটি পিতা-মাতার তাদের সন্তানের প্রতি প্রথম প্রাথমিক দায়িত্ব থাকে, তাদেরকে ভাল অভ্যাসগুলি শেখানো। এতে দাদু-দিদার ভূমিকাও অপরিসীম হয়। তাঁরা বাচ্চাদের অনেক নীতিমূলক গল্প বলেন, যার মাধ্যমে তাঁরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল এবং কেন আমাদের জীবনে অনেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শিশুরা একটি সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠে এবং তার দাদু-দিদার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।
দাদু-ঠাকুমাও খুশি থাকে
বাচ্চাদের সঙ্গে দাদু-দিদা থাকলে তা কেবল শিশুদের জন্যই ভাল নয়, পাশাপাশি দাদু-দিদার স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। নাতি-নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারলে দাদু-ঠাকুমাও বয়সজনিত অবসাদে ভোগে না এবং একাকিত্ব অনুভব হয় না। কারণ, নাতি-নাতনির সঙ্গ তাঁদের একা বোধ করতে দেয় না। তাঁরাও শিশুদের সঙ্গে থেকে শিশু হয়ে ওঠে। বয়সের সাথে সাথে তাঁরা বিভিন্ন রোগের শিকার হন, এই সমস্ত রোগগুলি কেবল একাকীত্বের কারণেই ঘটে। তাই, এই সময় বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটালে তাঁরা সুস্থ ও সুখী থাকেন।