Just In
বিশ্ব টেলিভিশন দিবস ২০১৯ : শিশুদের ওপর টেলিভিশনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব
টেলিভিশন আমাদের অত্যন্ত প্রিয় গণমাধ্যম। প্রতিটি ব্যক্তি ও শিশুর জীবনে টেলিভিশনের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি এবং আমাদের বিনোদন যোগাতেও টেলিভিশন অতুলনীয়। এটি বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
টেলিভিশন চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব গঠন করে, এমনকি আমাদের জীবনে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেরও ক্ষমতা রাখে। একটি শিশু টেলিভিশনে কার্টুন, সিনেমা দেখতে যেমন পছন্দ করে তেমনই তারা নানান শিক্ষামূলক ও নৈতিক আচরণও শেখে। তবে, ভাল গুণাগুণের পাশাপাশি তারা নেতিবাচক দিকগুলোও রপ্ত করে ফেলে। তাই, একটি শিশু টেলিভিশনে কী দেখছে তার উপর নির্ভর করে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবগুলি। তাই, খেয়াল রাখা দরকার যে, শিশুর কোনটি দেখা উটিত এবং কোনটি নয়। আজ আমরা এই প্রভাবগুলি সম্পর্কেই লিখব।
শিশুদের ওপর টেলিভিশনের ইতিবাচক প্রভাব
১) বিনোদন লাভ করতে পারে
প্রত্যেক শিশুই টেলিভিশন দেখতে অত্যন্ত পছন্দ করে এবং এখান থেকে বিনোদন লাভ করতে পারে। বিভিন্ন রিয়েলিটি শো, কার্টুন, সিনেমা, গান এগুলি দেখে শিশুরা অত্যন্ত আনন্দিত হয় এবং এগুলি তাদের বিভিন্ন ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে, মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।
প্রত্যেক শিশুরই মনে কৌতুহল খুব বেশি থাকে, তার যেকোনও কিছু জানার ইচ্ছে অত্যন্ত প্রকট হয়। এক্ষেত্রে টেলিভিশন অনেক সাহায্য করে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শিশুরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত হয়।
২) শিক্ষা লাভ করতে পারে
আমরা জানি, যেকোনও কিছু শুনে শেখার থেকে দেখে তাড়াতাড়ি শেখা যায়। আর, এক্ষেত্রে টেলিভিশন অতুলনীয়। টেলিভিশনে শুধুমাত্র বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানই হয়না, পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানও হয়। তাই, শিশুদেরকে সেই শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানগুলি দেখালে সেখান থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে এবং তাড়াতাড়ি সেগুলি গ্রহণও করতে পারবে।
৩) সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান হয়
শিশুরা টেলিভিশন থেকে নিজের দেশের সমাজ, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য দেশের সমাজ, সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারে। মানুষের ব্যবহার, জীবন যাপন, পোশাক, উৎসব ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে।
৪) সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ হয়
রান্না, আঁকা, সঙ্গীত, থিয়েটার এই ধরনের শো-গুলি দেখে শিশুরা অনেক কিছু রপ্ত করতে পারে এবং নিজেরাও সেগুলি করার চেষ্টা করে। এর ফলে. তাদের নিজস্ব সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।
৫) প্রযুক্তি ও ফ্যাশন সম্পর্কে ধারণা
টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলি থেকে শিশুরা নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে এবং ফ্যাশন ও ট্রেন্ড সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।
শিশুদের
ওপর
টেলিভিশনের
নেতিবাচক
প্রভাব
১) ওজন বেড়ে যায়
দিনের বেশিরভাগ সময় একভাবে বসে টেলিভিশন থাকলে শিশুর ওজন বাড়তে পারে। এরফলে, বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।
২) পড়াশুনায় ক্ষতি হয়
টিভি দেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করার ফলে অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণের অভাব হয়। বাচ্চারা মাঝে মাঝে টিভির দেখার জন্য স্কুলের হোমওয়ার্ক করা এড়িয়ে যায়। ফলে, তাদের পড়াশুনায় অত্যন্ত ক্ষতি হয়।
৩) বাস্তবতাকে প্রভাবিত করে
টিভিতে বাস্তবতাকে অতিরঞ্জিত করে সরবরাহ করা হয়। অতিরিক্ত টিভি দেখতে দেখতে একজন শিশু বাস্তবকে ভুলতে বসে। সে তার চারপাশকে টিভির মতো ঝকঝকে মনে করে। তাই তার বাস্তবটা বুঝতে সমস্যা হয়
৪) হার্ট ও চোখের সমস্যা দেখা দেয়
যেসব শিশু খুব বেশি টিভি দেখে তাদের চোখ ও হার্টের সমস্যা বাড়ে। অল্প দিনেই চোখে চশমা হয়ে যায়।
৫) নেতিবাচক আচরণ দেখা দেয়
গবেষণা অনুসারে, অত্যধিক টিভি দেখা মস্তিষ্কের কাঠামোর পরিবর্তন করতে পারে এবং নেতিবাচক আচরণ দেখা যায়। এর ফলে, শিশুর মনে পরিবর্তন আসে।
উপরিউক্ত কারণগুলি থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, শিশুদের টিভি দেখা যেমন প্রয়োজনীয় তেমনই অতিরিক্ত টিভি দেখা অত্যন্ত খারাপ। তাই পরিবারের বড়দের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে, বাচ্চারা যেন অতিরিক্ত টিভি না দেখে। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, বাচ্চারা যখন টিভি দেখবে তখন যাতে তারা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান বা শিশু সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠানই দেখে।