Just In
বাড়িতে থেকেই সুস্থ হতে পারে করোনা রোগী, কীভাবে? দেখে নিন
ভারতবর্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিন দিন বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠছে যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড পাওয়া যাচ্ছে না, অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই প্রত্যেককে হাসপাতলে ভর্তি করা সম্ভব নয়, কেবলমাত্র যে সমস্ত করোনা রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা এবং স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিচ্ছে। আর যাদের রিপোর্ট পজিটিভ কিন্তু উপসর্গ তেমন নেই, কিংবা হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ আছে, তাদেরকে বাড়িতেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সবার থেকে আলাদা থাকতে বলা হচ্ছে।
লক্ষণগুলির দিকে নজর দিন
করোনা রোগের লক্ষণগুলি যদি প্রথমদিকে ঠিকভাবে সনাক্ত করা যায় তাহলে রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা সম্ভব। আপনি কোভিড আক্রান্ত কিনা তা সনাক্ত করতে হলে কিছু বিশেষ লক্ষণের উপর নজর রাখতে হবে। যেমন -
১) জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর হওয়া
২) কাশি হওয়া
৩) শরীরে ব্যথা এবং মাথা ব্যথা
৪) শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাওয়া বা ক্লান্তি
৫) স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া
৬) পেট খারাপের লক্ষণ দেখা দেওয়া
৭) গলায় ব্যথা হওয়া
৮) শ্বাস নিতে সমস্যা
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলেই সাথে সাথে করোনা পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখুন। নিজেকে বাড়িতে আলাদা করে নিন। করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
যদি তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা না হয়, তবে হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। বাড়িতে করোনা রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত দেখে নিন -
১) করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্ততপক্ষে ১৪ দিনের জন্য নিজেকে একটি আলাদা ঘরে আইসোলেট করে রাখতে হবে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
২) যে ঘরে থাকবেন সেই ঘরটি যেন গুমোট ও বদ্ধ না হয়, হাওয়া বাতাস চলাচল করার উপযুক্ত ব্যবস্থা যেন থাকে।
৩) যিনি রোগীর সেবা করছেন তিনি যেন অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস এবং পিপিই পরে থাকেন। সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করা অনিবার্য।
৪) ওষুধ এবং খাবার গ্রহণের সময় পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে আসবেন না।
৫) করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাসন, তোয়ালে, বিছানা এবং সমস্ত ব্যবহার্য জিনিস যাতে পরিবারের কেউ না ছোঁয়। কারুর সঙ্গে শেয়ার করবেন না। ব্যবহার করা বাসন গরম জলে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৬) সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারিত ওষুধ সময়মতো খাওয়াতে হবে।চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না।
৭) করোনা আক্রান্ত রোগীর সর্বদা আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা উচিত। তবে ঘরে যদি একটাই বাথরুম থাকে, তবে রোগীর ব্যবহারের পরে ওয়াশরুমটি ভালো করে পরিষ্কার করুন। সবার ব্যবহারের পর তাকে ব্যবহার করতে দিন।
৮) সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কত তা বারবার লক্ষ্য রাখতে হবে। ৯৪-এর নীচে যদি অক্সিজেনের মাত্রা নেমে আসে কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আরও বেড়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সময় থাকতে থাকতে বাড়িতেই অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।বেশি বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতালে নিয়ে যান।
৯) সংক্রমিত ব্যক্তির পোশাক এবং যিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সেবা করছেন তার পোশাক ডেটল বা স্যাভলন জাতীয় জীবাণুনাশক দিয়ে রোজ পরিষ্কার করে নিতে হবে। বাড়ি ভালো করে বারে বারে স্যানিটাইজ করা এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও করোনার কোনও লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা তা নজর রাখা খুব জরুরি।
১০) বারে বারে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি বা কাশি পেলে অবশ্যই রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে।
১১) করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন এবং তরল খান। হালকা গরম জল পান করতে পারলে খুব ভাল।আর ভালভাবে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
১২) সময়মতো গার্গল করুন এবং স্টিম নিন।
এই খাবারগুলি দিন
কোভিড রোগীকে অতিরিক্ত মশলাদার বা ভাজাভুজি জাতীয় খাবার দেবেন না। ফ্রেশ এবং সাধারণ খাবার দিন। লাঞ্চ ও ডিনারে তাকে প্রোটিনযুক্ত খাবার দিন। এছাড়া, টাটকা ফল খাওয়ান। এই সময় এমন কিছু ফল খাওয়া দরকার যার মধ্যে ভিটামিন-সি রয়েছে। সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে ভিটামিন-সি। খাবারে আদা, রসুন এবং হলুদ জাতীয় মশলা ব্যবহার করুন।
বাড়িতে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করবেন কীভাবে? জেনে নিন সঠিক পদ্ধতি
রোগীর মনোবল ভাঙতে দেওয়া চলবে না। এই সকল বিশেষ বিষয়গুলোর উপর নজর রাখলে একজন করোনা রোগী খুব সহজেই বাড়িতেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।