Just In
মীরাবাঈ চানুর হাত ধরে টোকিও অলিম্পিক্সে খাতা খুলল ভারত, জেনে নিন তাঁর সাফল্যের গল্প
মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মীরাবাঈ চানুর হাত ধরে টোকিও অলিম্পিক্সে খাতা খুলল ভারত। ভারোত্তোলনে দ্বিতীয় পদক অর্থাৎ রুপো জিতলেন চানু। মহিলাদের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপো জিতেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইট করে ভারতের প্রথম পদক এবং চানুর সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অলিম্পিক্সে ভারোত্তোলনে রেকর্ড গড়ে প্রথম হলেন চিনের ঝিহুই হউ। তিনি মোট ২১০ কিলোগ্রাম ওজন তোলেন। মীরাবাঈ মোট ২০২ কিলোগ্রাম ওজন তুলেছেন। তৃতীয় স্থানে ইন্দোনেশিয়ার উইন্ডি কান্টিকা আইসাহ, তিনি তুলেছেন ১৯৪ কিলোগ্রাম। আসুন জেনে নেওয়া যাক মীরাবাঈ চানু সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
১৯৯৪ সালে ৮ অগস্ট মণিপুরের ইম্ফলের নংবক কাকচিং গ্রামে জন্ম হয় মীরাবাঈ চানু-র। ছোট থেকেই তাঁর মধ্যে ভারী জিনিস খুব সহজেই তুলে ফেলার ক্ষমতা, বাড়ির লোকের চোখ এড়ায়নি। জ্বালানির জন্য বনে কাঠ কাটতে যেত চানুর পরিবার। ভারী কাঠের বোঝা তাঁর দাদারা তুলতে পারতেন না, কিন্তু চানু অনায়াসেই তা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসতেন। চানুর শারীরিক শক্তি যে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর বাবা-মা। কাঠকুড়ানি সেই মেয়েই বিশ্ব দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করলেন।
ভারোত্তলনে ভারতের হয়ে একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মীরাবাঈ চানু। তাঁর দিকেই তাকিয়ে ছিল সারা দেশ। দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করলেন তিনি। ভারত্তোলোক মীরাবাঈ চানুর হাত ধরে রুপো জিতল ভারত। টোকিও অলিম্পিক্সে প্রথম পদক জয় হল ভারতের। মহিলাদের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপো জিতলেন মীরাবাঈ।
স্ন্যাচে প্রথম প্রচেষ্টায় ৮৪ কেজি এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ৮৭ কেজি ভারোত্তলন করেন চানু। তৃতীয় বার ৮৯ কেজির জন্য চেষ্টা করে সফল হননি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে প্রথম প্রচেষ্টায় ১১০ কেজি এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ১১৫ কেজি ভারোত্তলন করেন। কিন্তু তৃতীয় প্রচেষ্টায় ১১৭ কেজি তোলার চেষ্টা করে সফল হননি।
তাঁর প্রথম পছন্দের খেলা ছিল তিরন্দাজি। কিন্তু বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই তিনি ভারোত্তোলনে ভর্তি হন। ইম্ফলের খুমান লাম্পাক স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন চানু। সেখান থেকে মণিপুরের স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-য়। ছত্তিশগড়ে যুব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন চানু। ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে জীবনের প্রথম বড় সাফল্য পান চানু। ৪৮ কেজি বিভাগে রুপো জেতেন।
সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থও হয়েছেন বহুবার, কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি, বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান গেমস-এ খালি হাতে ফেরেন। এরপর ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক্সেও ব্যর্থ হন। তারপর, ২০১৭ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা, ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতেন চানু।
এবছর আমেরিকার সেন্ট লুইসে টানা দু'মাস কঠোর অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। টোকিও-তে ভারতকে পদক এনে দেওয়ার আশা রেখেছিলেন তিনি। অলিম্পিক্সের আগেও সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি পদক জিতবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন সফল হল। ২০১৮ সালে তিনি পদ্মশ্রী এবং রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কার পান।