Just In
যার জীবনের গল্প শুনে তৈরি হয়েছিল "থ্রি ইডিয়েটস"!
ফুংসুক ওয়াংরু-কে মনে আছে আপনাদের? আরে সেই বিজ্ঞানী যার নামে চারশোর উপর পেটেন্ট থাকলেও তিনি লে উপত্যকার নির্জন প্রান্তরে পরে থাকতেন শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে। একেবারে ঠিক ধরেছেন ২০০৯ সালে আমির খানের ব্লকবাস্টার হিট ছবি "থ্রি ইডিয়েটস" এই নামই তো ছিল আমিরের। তাই না! একেবারেই। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে, এক মহান ব্যক্তিত্বকে সামনে থেকে দেখে আমির এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে তার জীবনের একটা আংশ তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন থ্রি ইডিয়েটস-এ। তবে বাস্তবের ফুংসুক ওয়ারু-র নাম হল সোনাম ওয়াংচুক। যিনি এক সময় একার হাতে সমগ্র লে উপত্যকার ভৌগলিক ছবিটাকেই বদলে দিয়েছিলেন।
কে এই সোনাম ওয়াংচুক:
১৯৬৬ সালে পয়লা সেপ্টেম্বর জম্মু কাশ্মিরের লে জেলার আলচি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন সোনাম। ৯ বছর পর্যন্ত প্রাথাগত শিক্ষার ধারে কাছেও যেতেও পারেননি তিনি। এরপর হাজারো লড়াইয়ের পর কোনও মতে শুরু হয় তার পড়াশোনা। কিন্তু সোনাম সে সময় শুধু স্থানীয় ভাষাই জানতেন। ফলে তার পক্ষে স্কুলে পড়া বুঝতে বেশ সমস্যা হত। ফলে ক্লাসে সহ্য় করতে হত অপমান। আসলে সে সময় সবার মনে হয়েছিল এ ছেলে জীবনে কিছু করে উঠতেই পারবে না। কিন্তু ভারতের উত্তর প্রান্তের সবথেকে পিছিয়ে পরা অংশের মানচিত্রটাই একদিন বদলে দিয়েছিল সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটা।
Image Source
পালিয়ে আসা দিল্লিতে:
এক সময় আর অপমান সহ্য করতে না কাশ্মির থেকে পালিয়ে দিল্লি চলে আসে সোনাম। সেখানে তাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সব ঘটনা খুলে বলেন। তার পরেই সব বদলে যেতে শুরু করে ছেলেটার জীবনে। সোনাম তার মতো করে পড়াশুনোর সুযোগ পায়। সেই শুরু... তারপর একেক ধাপ পেরিয়ে ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি টেক শেষ করেন।
Image Source
"দা আইস স্তুপা":
বিটেক শেষ করার পর লে এবং লাদাক অঞ্চলে পড়াশোনাকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে নিয়ে কাজ করেন সোনাম। একাধিক এন জি ও- এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুরু করেন একাধিক সোসাল প্রেগাম। সেই সঙ্গে বাকি বিশ্বের সামনে কীভাবে লে এবং লাদাকের সৌন্দর্যকে তুলে ধরা যায় সেই নিয়ে ও চলতে থাকে প্রচেষ্টা। এই করতে করতে ২০১৩ সালে এক অভিনব প্রজেক্টে হাত দেন সোনাম। প্রজেক্টটার নাম দেন "দা আইস স্তুপা"।
Image Source
কী এই আইস স্তুপা?
ভৌগলিক কারণে পশ্চিম হিমালয়ের এই প্রান্তে প্রচণ্ড জল কষ্টে ভুগতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। ফলে চাষবাসে মারাত্মক প্রতিবন্ধকার সম্মুখিন হতে হত। কোনও কোনও সময় এমন অবস্থা হত যে সামান্য পরিমাণ চাষ করাও সম্ভব হয়ে উঠতো না। এই সমস্যার সমাধানের কথা ভেবেই সোনাম ওয়াংচুক একটি অভিনব পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবেন। তৈরি করার চেষ্টা করেন একটা বিশালাকায় কৃত্রিম হিমবাহ। এই হিমবাহটি এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে প্রয়োজনে তা থেকে জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
Image Source
যেমন ভাবনা তেমন কাজ:
হাজার ভাবনার পর স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একযোগে শুরু হয় স্থুপা নির্মানের কাজ। প্রায় ২ বছর সময় লেগে যায় প্রজেক্টটা শেষ হতে। কিন্তু তার পরে যা ঘটেছিল তা ইতিহাস। এই স্থুপাকে কাজে লাগিয়ে লে এবং লাদাকের বিস্তির্ণ অঞ্চলে এখন প্রায় সারা বছরই চাষবাস করা সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, এক সময়ে মরুভূমির মতো প্রাণহীন প্রান্তর এখন সবুজের ছায়ায় ঢাকা। এই সবই সম্ভব হয়েছিল একটা মানুষের অভিনব ভাবনার কারণে। সেই কারণেই তো ২০১৬ সালে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত পুরষ্কার, "রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড" এ সম্মানিত করা হয় সোনাম ওয়াংচুকে। এখন আর কেউ এই পার্বত্য উপত্যকায় না খেয়ে মারা যায় না। সবাই সমানভাবে পড়াশোনার সুযোগ পায়। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে ৫০ বছরের ফুংসুক ওয়াংরি থুড়ি সোনাম ওয়াংচুকের কারণে।
Image Source