Just In
সাবধান: পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে এক স্পেস স্টেশন!
দি টিয়াংগং স্টেশন-১ নামে খ্যাত এই চাইনিজ স্পেস স্টেশনটি যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশই বায়ু মন্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে।
মাইকেল বে পরিচালিত আর্মাগেডন মুভিটার কথা মনে পরে। একদল গবেষক পাড়ি জমিয়েছেন মহাকাশের উদ্দেশ্য। লক্ষ একটাই। বিশালাকায় উল্কাকে ধ্বংস করা। কারণ এমনটা না করলে পৃথিবীবাসীর বেজায় বিপদ। কারণ উল্কাটা প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে, তাকে যদি ঠিক সময়ে ধ্বংস করা না যায়, তাহলে তা আছড়ে পরবে পৃথিবীর বুকে। আর তারপর...সব শেষ!
সকাল সকাল হঠাৎ করে আর্মাগেডন সিনেমাটিকে নিয়ে এত শব্দ খরচ করছি কেন করছি তাই ভাবছেন নিশ্চয়! আসলে ছবিটি যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ঠিক একই ধরনের একটা ঘটনা মনে হয় ঘঠতে চলেছে আগামী কয়েক দিনে। মানে!!! আসলে মহাকাশে কাজ করতে থাকা একটা চিনা স্পেস স্টেশন হঠাৎই তার লক্ষ পথ ছেড়ে পৃথিবীর দিকে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে, যাকে ঠিক সময়ে নষ্ট করে দিতে না পারলে যে ভয়ঙ্কর বিপদ, সে কথা মেনে নিয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানিরাও।
দি টিয়াংগং স্টেশন-১ নামে খ্যাত এই চাইনিজ স্পেস স্টেশনটি যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশই বায়ু মন্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু যেটুকু থেকে যাবে, তাতেই বিপদ হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাসার সিনিয়ার বিজ্ঞানীদের মতে এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়। আকছাড়ই মহাকাশ থেকে নানা অবজেক্ট একই ভাবে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তা নীল গ্রহেনর বায়ু মন্ডলের স্থর ভেদ করে নিচে আসতে পারে না। কিন্তু এবারের ঘটনাটা একেবারেই আলাগা। কারণ ১৮০০০ পাউন্ড ওজনের এই চিনা স্পেস স্টেশনটি এত বিশাল যে তার কতটা ধ্বংস হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বিজ্ঞানী মহলে।
তবে আশা এখনও আছে:
স্পেস স্টেশনটির কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও এখনও আশা ছেড়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। কারণ তাদের মতে দি টিয়াংগং স্টেশন-১ যত পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসবে, তত তার গতিবেগ বাড়তে থাকবে। আর একবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে প্রবেশ করে গেলে বায়ুস্থরের সঙ্গে ঘর্ষণ এতটা বৃদ্ধি পাবে যে খুব সামান্যই এসে আছড়ে পারবে পৃথিবীর বুকে। তাই জান-মালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেজায় কম, যদি না এইকদিনে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় তো!
কিন্তু কোথায় আছড়ে পড়বে স্পেস স্টেশানটি?
এই একটা বিষয় নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ জায়গাটা যদি জনবসতিপূর্ণ এলাকা হয়, তাহলে যত ছোটই ভগ্নাংশ হোক না কেন, তা মারাত্মক ক্ষতি সাধন করবে। শুধু তাই নয়, ভয় আরও একটা কারণেও রয়েছে। কী কারণ? আসলে এখনও পর্যন্ত হাজারো হিসেব-নিকেশ করার পরেও বিজ্ঞানীরা বুঝে উঠতে পারেননি ঠিক কোন জায়গায় আছড়ে পরবে এই চিনা স্টেশনটি। তাই বিপদের মেঘ যে পুরোপুরি কেটে গেছে, এমনটা একই বলা যাবে না! প্রসঙ্গত, এতদিনে একটা তথ্যই বিশেষজ্ঞদের কাছে এসেছে, তা হল যখনই স্পেস স্টেশনটি পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে প্রবেশ করুক না কেন, তা আছড়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে ৪৩ ডিগ্রি উত্তর এবং ৪৩ ডিগ্রি দক্ষিণ ল্যাটিটিউডের আশপাশের এলাকায়। এর থেকে বেশি কিছুই জেনে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা, যা যারপরনাই ভারতবাসীদের কাছে ভয়ের বিষয়।
৪৩ ডিগ্রি উত্তর এবং ৪৩ ডিগ্রি দক্ষিণ ল্যাটিটিউড বলতে ঠিক কোন জায়গাটাকে বোঝায়?
জিপিস-এ এই কোঅর্ডিনেটটা ফেলে দেখলেই বুঝে যাবেন কেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরাদের এত চিন্তায় রয়েছেন। কারণ পৃথিবীর যে অংশে এই স্পেস স্টেশনটি আছড়ে পরার সবথেকে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, সেই জায়গাগুলি হল- আমেরিকা, ইউরোপ, উত্তর চিন, মঙ্গোলিয়া এবং আফগানিস্থান। আর বাস্তবিকই যদি চিন, মঙ্গোলিয়া এবং আফগানিস্থানের কোনও অংশে এই ঘটনাটি ঘটে, তার প্রভাব যে কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছাবে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই! তাই তো ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ইতিমধ্য়েই আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন পশ্চিমী মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
একেবারেই কি জানা সম্ভব নয় কোথায় হবে ইমপ্যাক্ট?
গবেষকদের মতে ঘটনাটি ঘটার ১-২ দিন আগে পর্যন্ত কোনও কিছুই প্রেডিক্ট করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, কোথায় আছড়ে পরছে স্পেস স্টেশনটি তা জানা গেলেও একটা বিষয় এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে একেবারে পিন পয়েন্টে এসে কিন্তু স্পেস স্টেশনটি আছড়ে পরবে না। বরং যে এলাকায় এটি ধাক্কা মারবে, তার প্রায় কয়েকশো মাইল পর্যন্ত এর প্রভাব পরবে। এই কারণেই তো ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ পরতে শুরু করেছে।
বিপদ কিন্তু বাড়বে বৈ কমবে না!
যদি ধরেও নেওয়া যায় এবার তেমন একটা কিছু ঘটবে না, তাহলেও যে বিপদ একেবারে কেটে যাচ্ছে, তা নয় কিন্তু! কারণ যত দিন যাচ্ছে, তত এই ধরনের কোনও বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।। কারণ এই মুহূর্তে যে যে স্পেস স্টেশানগুলি মহাকাশে কাজ করছে, সেগুলির ওজন এই চাইনিজ স্পেস স্টেশানের থেকে অনেক অনেক বেশি, আর সেগুলির কোনওটা যদি কোনও দিন পথ ভুলে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়, তাহলে যে কী হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত, এখন মহাকেশে কাজ করছে যে যে স্পেস স্টেশনগুলি, সেগুলি হল- ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ওজন ৯২৫,৩৩৫ এল বি এস), এম আই আর (২৬৮,০০০ এল বি এস), স্কাইল্যাব (১৬৯,৯৫০ এল বি এস), স্যালিয়াট ৭ (৪৩,৭০৪ এল বি এস), স্যালিয়ট ৬ (৪৩,৭০০ এল বি এস), তিয়াংগং ১ (১৮,৮০০ এল বি এস)।