Just In
Mother Teresa Birth Anniversary : জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য...
'মা'- যাকে আমরা সবচেয়ে কাছের মানুষ বলে জানি, যাকে আমরা সব কথা বলতে পারি। 'মা' শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরম মমতাময়ী একজন মানুষ। যিনি সবার উর্ধ্বে বিরাজ করেন। প্রকৃত মা বলতে যাকে বোঝায় তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় 'মাদার টেরিজা'। যাঁকে সারা বিশ্ব 'মা' বা 'মাদার' বলে চেনে। যাঁকে স্বয়ং ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন সমগ্র মর্ত্যবাসী মানুষের সেবা করার জন্য। মাদার অ্যাগনেস টেরিজা বা মাদার টেরিজা। আজীবন সেবা করে গেছেন অসংখ্য দুঃস্থ মানুষের। একজন বৃদ্ধা মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের বস্তিতে বস্তিতে। অনাথকে, আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা শিশুকে কোলে তুলে পরম মমতায়, ভালোবাসায় জড়িয়ে ফেলছেন। হাতটা জোড় করা, একটু ঝুঁকে হেঁটে যাচ্ছেন মাদার - তাঁকে দেখলে মানবতা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায়। আজ, ২৬ অগস্ট তাঁর জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষ্যে তাঁকে স্মরণ করার জন্য অনেক জায়গাই সেজে উঠেছে তাঁর স্মৃতিচারণে। বিশেষ করে দেশে বিদেশে তাঁর তৈরি করা হোমগুলিও তাঁর স্মৃতিচারণে সেজে উঠেছে।
প্রাথমিক জীবন :
১৯১০ সালের ২৬ অগস্ট ম্যাসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপ্জে-তে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। এরপর, তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। তিনি ছোটো থেকেই ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। এরপর, একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লরেটো সংস্থায়।
কর্মজীবন ও মিশনারিজ অফ চ্যারিটি :
তিনি প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিখতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নব দীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux -এর নামানুসারে 'টেরিজা' নাম গ্রহণ করেন।
১৯৩৭ সালের ১৪ই মে, পূর্ব কোলকাতার লরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি কলকাতার দারিদ্র্যতা দেখে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরের ফলে শহরে নেমে আসে মহামারি আর মৃত্যু। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতেও মারা যান বহু মানুষ। এইসব ঘটনা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
১৯৪৮ সালে দরিদ্রের মাঝে ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেন তিনি। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পাড়ের সাদা সুতির বস্ত্র। মানুষের সেবা করার জন্য সারাজীবনের মতো নিজেকে বদলে ফেলেন তিনি। এসময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। তারপর, ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন।
মানুষের জন্য কাজ করার প্রথম দিকের দিনগুলি তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। সে সময় তার হাতে ছিল না কোনও অর্থ। গরীব এবং অনাহারীদের খাবার ও থাকার অর্থ জোগাড়ের জন্য তাঁকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো।
১৯৫০ সালের অক্টোবরে তিনি 'ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ' করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি পান। এ সমাবেশই পরবর্তীকালে 'মিশনারিজ অফ চ্যারিটি ' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্য নিয়ে এই চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে অনাথ ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই কাজ করেন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে তাঁর এই চ্যারিটি হোম।
১৯৫২ সালে মাদার টেরিজা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন 'নির্মল হৃদয়'। এছাড়াও, দেশ বিদেশে মানুষের সহায়তার জন্য তিনি আরও অনেক কাজ করেছেন।
পুরস্কার ও সন্মাননা :
১৯৭৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৮০ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'ভারতরত্ন' পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পর তাঁর কাজের জন্য ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস আমাদের সকলের প্রিয় মাদার টেরেজাকে 'সন্ত' হিসাবে ভূষিত করেন।
১৯৮৩ সালে রোম সফরের সময় তঁর প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। দ্বীতিয় বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তাঁর দেহে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। এরপর তিনি নিউমেনিয়ায় আক্রাম্ত হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বহুদিন শারীরিক অসুস্থ থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি দেহত্যাগ করেন।
কলকাতা সহ সারা ভারতে ও সারা বিশ্বে মানুষের প্রতি তাঁর যে অবদান তিনি রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু, রেখে গেছেন অনেক কিছু। তিনি আজীবন আমাদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।