Just In
একা হয়ে গেলেন চৈতালী, অধরা থাকলো জীবনের ১১ তম ফুটবল বিশ্বকাপ দেখা
জীবন থমকে গেল ৮৬ তেই। দেখা হল না ১১ তম ফুটবল বিশ্বকাপ। মঙ্গলবার, ১৭ই ডিসেম্বর সকালে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পান্নালাল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে আসে ময়দান জুড়ে।
ছবি সৌজন্যে : দীপান্তিতা দাস
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই এক অনবদ্য উৎসাহ। আর উৎসাহের চোটে প্রায় সকল বাঙালিই টিভির পর্দায় মুখ গুঁজে থাকতেন। কিন্তু পান্নালাল বাবু এক ব্যতিক্রমী বাঙ্গালী। যিনি প্রতি চার বছর একটু একটু করে টাকা জমিয়ে সস্ত্রীক পৌঁছে যেতেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ময়দানে। ফুটবলের প্রতি নেশা, ভালোবাসা ও টান থেকেই ময়দানে বসে চাক্ষুষ করেছেন 'দশটি' ফুটবল বিশ্বকাপ। জীবন সায় দেয়নি ১১ কে চাক্ষুষ করার। তাই ৮৬ তেই থমকে যেতে হয়েছে বাংলার এই অনবদ্য ফুটবল প্রেমিকে।
আমরা জানি যে, প্রতি চার বছর অন্তর ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। পান্নালাল বাবু এই চার বছর ধরে জমানো টাকা দিয়ে স্ত্রী চৈতালী চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে মাঠে বসে দেখেছিলেন ১০ টি বিশ্বকাপ ম্যাচ। ২০২২ এর কাতার বিশ্বকাপে পাড়ি দেওয়ার জন্য জমাচ্ছিলেন টাকা। কিন্তু, আর যাওয়া হল না।
শুরুটা হয়েছিল ১৯৮২ সালে। প্রথমবার বিশ্বকাপ দেখতে খিদিরপুরের রামকমল স্ট্রিট থেকে স্পেনে পাড়ি দেন সস্ত্রীক পান্নালাল বাবু। সাক্ষী হন পরপর দশটি ফুটবল বিশ্বকাপের।
কে এই পান্নালাল চট্টোপাধ্যায়?
হ্যাঁ পান্নালাল বাবু, সিকিম গভর্নর গোল্ডকাপের মুখ্য সংগঠক ছিলেন তিনি। তবে, তিনি কোনও ফুটবলার ছিলেন না। তিনি ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের একজন জনপ্রিয় কর্তা ও ফুটবল প্রেমী। বিদেশে বাবুদের মাঝেও ফুটবল গ্যালারিতে মিশে যাওয়া লোকটিই বাংলার পান্নালাল।
মধ্যবিত্তের সংসার, থাবা বসিয়েছিল বয়স, তাও থমকে যাননি পান্নালাল। সংসারের খরচ থেকে একটু একটু করে জমিয়ে নিতেন টাকা। তারপর চার বছর পার হতেই স্ত্রী চৈতালি-কে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিতেন ইতালি, মেক্সিকো, ব্রাজিল, রাশিয়া থেকে গোটা দুনিয়া। ইনিই পান্নালাল চট্টোপাধ্যায়।
ছবি সৌজন্যে : দীপান্তিতা দাস
প্রিয় দল ছিল ব্রাজিল। ১৯৮২ এর পর ১৯৮৬ সালে পৌঁছে যান মেক্সিকো বিশ্বকাপে। তারপর ১৯৯০ সালে ইতালিতে। ১৯৯৪ সালে ইউনাইটেড স্টেট। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স। ২০০২ সালে জাপান। ২০০৬-এ জার্মানি। ২০১০ সালে সাউথ আফ্রিকা। ২০১৪ সালে গ্যালারিতে বসেই দেখতে হয় প্রিয় দল ব্রাজিলের ভয়ঙ্করতম হার। মন ভাঙে পান্নালালের।
তাতে কী? প্রিয় দলের কামব্যাক দেখতে ২০১৮ সালে রাশিয়ায় পাড়ি দেন তাঁরা। পেলে, মারাদনা থেকে মেসি, রোনাল্ডো সবাইকেই দেখেছেন কাছ থেকে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে পেলের সঙ্গে দেখা হয় সস্ত্রীক পান্নালালের।
শুধু যে বিশ্বকাপ তা কিন্তু নয়। কলকাতা ফুটবল লিগের কোনও খেলা বাদ পড়ত না তাঁর লিস্ট থেকে। কলকাতার ময়দানে পান্নালাল বা 'পানুদা' ছিলেন মোহনবাগান সমর্থক। গ্যালারিতে বসে গলা ফাটিয়েছেন মোহনবাগানের জন্য। তারপর ফুটবলের টানে ছুটে বেরিয়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কিন্তু কাতারে তাঁর আর পৌঁছনো হল না। দেখা হল না ব্রাজিলের জয়, পূরণ হল না সেই ইচ্ছে। স্ত্রী চৈতালি চট্টোপাধ্যায়কে একলা ফেলে রেখে পরলোক গমন করলেন তিনি। ভাল থাকুন পান্নালাল, ফিরে আসুন বাংলার এহেন ফুটবল প্রেমী হয়ে।