Just In
Sardar Vallabhbhai Patel: আজ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী, জানুন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
আজ ৩১ অক্টোবর, লৌহ মানব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী। ভারতের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল পরিচিত 'আয়রন ম্যান অফ ইন্ডিয়া' হিসেবে। তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা। আজকের এই দিনে আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
জন্ম ও কর্মজীবন
১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাতে কুর্মী পরিবারে তাঁর জন্ম। ২২ বছর বয়সে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল আইন নিয়ে অধ্যয়ন করার। জমানো টাকা নিয়ে পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে। লন্ডনের 'মিডল টেম্পেল ইন' থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। পূর্বের কলেজের ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও প্যাটেল তার ক্লাসে শীর্ষ স্থান অধিকার করেন। ৩৬ মাসের কোর্সটি তিনি সম্পন্ন করেন ৩০ মাসে। পরবর্তীকালে ভারতে এসে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯১৭ সালে সর্দার প্যাটেল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যোগ দেন। ব্রিটেনের থেকেই ভারতবাসীদের স্বরাজ এর জন্য দাবি তুলেছিলেন তিনি। ১৯২০ সালে গুজরাট কংগ্রেসের সভাপতি হন। যা পরবর্তীতে কংগ্রেসের দুর্গ হয়। গুজরাটের খেদায় প্লেগে আক্রান্ত হাওয়ায় দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। নিজের ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে নেমে পড়েন ত্রাণ সংগ্রহে। ১৯১৮ তে খেদাতে কর ছাড়ের লড়াইয়ের আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন কে সমর্থন করে শুরু করেন খাদি পরা। এই আন্দোলনে তিন লাখের বেশি সদস্য নিয়োগের জন্য ভ্রমণ করেন পশ্চিম ভারতে। এরপর ধীরে ধীরে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের হাতে গ্রেপ্তার হন প্যাটেল। ১৯৪২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত আহমেদনগরের দুর্গে বন্দী ছিলেন।
মৌলিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন তিনি। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এবং গুজরাটে কৃষকদের জমি ফেরতের ব্যবস্থা করেন তিনি। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে মদ খাওয়া, অস্পৃশ্যতা, বর্ণ বৈষম্য এবং ভারতবর্ষে নারীদের মুক্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাবে কাজ করেছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার পরে তিনি ভারতের প্রথম উপ প্রধানমন্ত্রী হন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। মন্ত্রী হিসেবে তিনি স্টেটস ডিপার্টমেন্ট এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পাঞ্জাব ও দিল্লী থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা ও শান্তি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেন তিনি। তবে সর্দার প্যাটেলের এই অমূল্য পরিষেবাগুলি স্বাধীন ভারতের কাছে মাত্র তিন বছরের জন্য স্থায়িত্ব ও উপলব্ধ ছিল। ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
লৌহমানব
মহাত্মা গান্ধী জেলে থাকার সময় সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে সারা ভারতজুড়ে পালন করেছিলেন তিনি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বাধীন ভারতে ৫৬৫ টি রাজ্যকে একীকরণ এর পেছনে প্যাটেলের অবদান অবিস্মরনীয়। পর্তুগীজদের হাত থেকে গোয়া এবং নিজাম দের হাত থেকে হায়দ্রাবাদ কে উদ্ধার করে ভারত সরকারের সাথে যুক্ত করেন তিনি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নেহেরু 'নতুন ভারতের নির্মাতা ও একীকরণকারী' বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি লৌহ মানব নামে পরিচিত।
সম্মাননা
মৃত্যুর পরে তাঁকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়। প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানাতে ২০১৪ সালে সূচনা হয় রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের। প্রত্যেক বছর তাঁর জন্ম বার্ষিকীতে পালন হবে এই একতা দিবস এবং তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গুজরাটে স্থাপন করা হয় 'স্ট্যাচু অফ ইউনিটির'। যার উচ্চতা ৫৯৭ ফুট।
প্রজাতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ নেতা। একটি আধুনিক ও অখন্ড ভারত গড়ার প্রকৃত যোদ্ধা। যে দেশের স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে লড়ে গেছেন প্রাণপণে। নতুন রূপ দিয়েছিলেন ভারতের ভাগ্যকে।