Just In
বাদাম বেচেই স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে জয়ালক্ষ্মী, ১১-তেই পাড়ি নাসায়
জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের মাঝে হার না-মেনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর গল্প আমরা বহু পড়েছি। জেনেছি তাদের প্রচেষ্টা ও ইচ্ছে শক্তিকে। আজ এমনই এক "জয়ীর" গল্প বলবো, যার নাম জয়ালক্ষ্মী। যে জয় করেছে নাসা যাওয়ার স্বপ্নকে।
স্বপ্ন আসে সবার জীবনে, সেও দেখেছিল। তবে কোনও ভূত বা স্পাইডারম্যানের নয়, দেখেছিল নাসার স্বপ্ন। কারণ, ছোট থেকেই মহাকাশ টানত তাকে। তাই, একদিন খবরের কাগজের এক টুকরো পাতায় থাকা বিজ্ঞাপন থেকেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার খোঁজ পায় সে। জানতে পারে, প্রতিযোগীতায় সফল হতে পারলেই পথ খুলবে 'নাসা' যাওয়ার। ব্যাস, সেই থেকেই পথ চলা শুরু স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য।
নিজের মতো করে বাড়িতে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে জয়ালক্ষ্মী। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে পরীক্ষায় সফলও হয়ে যায় সে। তার সামনে খুলে যায় নাসায় পৌঁছানোর প্রবেশদ্বার। কিন্তু এই প্রবেশদ্বারে পা রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। কারণ, অর্থ ছাড়া আমেরিকা পাড়ি দেওয়া কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়।
বিজ্ঞানকে ভালোবাসত সে। আইডল ছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। একদিন তাঁর মতোই হবে সে, তাই হাল ছাড়েনি। পা রাখতেই হবে নাসার প্রবেশদ্বারে। তাই সাহায্যের জন্য আবেদন জানায় সে। কারণ, নাসায় ঢোকার টিকিট পেলেও আমেরিকা যাওয়ার টিকিটের খরচ ওর সামর্থ্যের বাইরে।
কয়েকজন শিক্ষক ও সহপাঠীরা মিলে বানিয়ে দেয় পাসপোর্ট। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মচারীরা তার হাতে তুলে দেন ৬৫ হাজার টাকা। তবে এই টাকাটি যথেষ্ট নয়। তাই জয়ালক্ষ্মী সাহায্যের জন্য যায় জেলা শাসকের কাছে। জেলাশাসক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তার দিকে। সকলের সহায়তায় তুলে দেন ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু তার এখনও প্রয়োজন ৭০ হাজার টাকা।
তার বিশ্বাস সকলের সহায়তায় সে পৌঁছাতে পারবে নাসায়। তবে জয়লক্ষ্মী জানিয়েছেন "আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সাহায্য করেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি টাকা পেয়ে গেলে পা রাখতে পারব নাসায়।"
তামিলনাড়ুর পাত্তুকোট্টাইয়ে একটি সরকারি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কে.জয়ালক্ষ্মী। হার না মানার জেদ তার মধ্যে ছোট থেকেই রয়েছে। ছোট থেকেই সে দেখেছে অভাব-অনটন। বাবা থেকেও নেই, বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন বহুদিন আগে। মানসিক রোগী মা এবং ভাইয়ের দেখভাল, সংসারের গুরুদায়িত্ব একা কাঁধে সামাল দিত সে। টিউশন পড়িয়ে ও দিনের শেষে বাদাম বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় সংসার ও পড়া দুটোই সমান ভাবে সামলে এসেছে। এত বাধা বিপত্তির মাঝেও নিজের স্বপ্নে চিড় ধরতে দেয়নি জয়ালক্ষ্মী। বড় হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। তাই, একটু আধটু ইংরেজিও শিখে নিয়েছে সে। এই প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তির জেরে আজ সে সফল।
নিজের চেষ্টাতেই নাসায় মহাকাশচারীদের সঙ্গে দেখা করতে চলেছে সে। সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন বছরের মে মাসে নাসায় পা রাখবে জয়ালক্ষ্মী। বিজ্ঞান প্রেমী এই মেয়েকে নিয়ে প্রশংসার ঝড় বইছে গোটা দেশে। আশীর্বাদ ও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সকল মানুষ। এখন শুধু অপেক্ষা জয়লক্ষ্মীর নাসায় উড়ে যাওয়ার খবরে।