Just In
Don't Miss
সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার, জানুন এর বৈজ্ঞানিক কারণ
কালো বিড়ালে রাস্তা কাটলে থেমে যেতে হয়, দরজার বাইরে লেবু-লঙ্কা ঝোলানো, ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে নেই, এই ধরনের বহু কুসংস্কার আমরা মেনে চলি। এই সব শুনলে অনেকে হাসেন, আবার মনে মনে বিশ্বাসও করেন! তবে সব কুসংস্কার কিন্তু অযৌক্তিক হয় না। আপনারা হয়তো জানেন না যে, এই সমস্ত কুসংস্কারের পিছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন বিধি তৈরি করেছিলেন, যা পরে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে সেরকমই কিছু কুসংস্কারের কথা উল্লেখ করা হল এবং সেগুলি পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তিও দেওয়া হল।
১) দরজার সামনে লেবু-লঙ্কা ঝোলানো
বাড়ির মূল দরজা বা ব্যবসার জায়গায় লেবু-লঙ্কা সবাই ঝুলিয়ে রাখি। আমাদের বিশ্বাস এতে খারাপ শক্তি প্রবেশ করবে না। কিন্তু আপনি জানেন কি এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে? লেবু ও লঙ্কায় রয়েছে কীটনাশক উপাদান, যেগুলো পোকামাকড়কে ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ফলে আপনার বাড়ি বা দোকান পোকামাকড়ের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে।
২) সূর্যাস্তের পর নখ কাটতে নেই
সন্ধ্যের পর নখ কাটতে বসলেই বাড়ির বড়রা বারণ করেন। কিন্তু কেন নখ কাটতে নেই তার যুক্তিযুক্ত উত্তর কেউ দিতে পারেনা। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, আগেকার দিনে বিদ্যুৎ-এর সমস্যা ছিল, তখন সন্ধ্যের পর ইলেকট্রিক থাকত না, তাই ওইসময় নখ কাটলে সেটা এদিক-ওদিক পড়ে যেত বা খাবারেও চলে যেত, তাই সন্ধ্যের পর নখ কাটতেন না কেউ।
৩) শনি ও মঙ্গলবারে মাছ-মাংস খেতে নেই
মাছ-মাংস যত প্রিয়ই হোক না কেন, সপ্তাহের কয়েকটা দিন প্রতিটি বাড়িতেই এগুলো রান্না করা হয় না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নয়, পেট ঠিক রাখতেই কয়েকটা দিন নিরামিষ খাবার খাওয়া চালু করেন আমাদের পূর্বপুরুষরা।
৪) শুভ কাজে বেরনোর আগে দই-চিনি
দই-চিনি না খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে পরীক্ষা নাকি ভাল হবে না। ছোটবেলায় মা-ঠাকুমাদের বলতে শুনেছি। শুভ কাজে বেরনোর আগে অনেকে দই-চিনি খেয়ে বের হন। বিশ্বাস কাজ ভালো হবে। কিন্তু সত্যি কী এটা হয়? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী দই হল ঠান্ডা জিনিস, যা শরীরকে গরম হতে দেয় না। আর চিনিতে থাকে গ্লুকোজ। দুটি একসাথে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং এনার্জি পাবেন আপনি।
৫) রাতে অশ্বত্থ গাছের সামনে যেতে নেই
অশ্বত্থ গাছে নাকি ভূত-প্রেত থাকে, রাতে গাছের নীচে গেলে ভূতে ধরতে পারে। এইসব কথা অনেকেই শুনেছেন। যেটা একদমই ভুল। আসলে, অশ্বত্থ গাছ দিনের বেলা অক্সিজেন ত্যাগ করে এবং রাতে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে, সেজন্য রাতে গাছের নীচে যেতে নেই।
৬) ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে নেই
আধুনিক যুগে আমরা বাস করলেও এখনও পর্যন্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েই গিয়েছে। তেমনই একটি হল, ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের মন্দিরে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা। কারণ হিসেবে মনে করা হয়, এই সময় মহিলাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা হয়, আগেকার দিনে মন্দির অনেক দূরে দূরে ছিল। ওই অবস্থায় অনেকটা পথ গেলে তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। মহিলাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই তাঁদের মন্দিরে যেতে বারণ করা হত।
৭) ভাঙা আয়না অশুভ
অনেককেই বলতে শুনবেন, ভাঙা আয়নায় নাকি মুখ দেখতে নেই। খারাপ কিছু হবে। এই কুসংস্কারের পিছনে একটা কারণ আছে। সেটা হল, বহু যুগ আগে আয়না প্রচুর দামী জিনিস ছিল। একটা আয়না ভেঙে গেলে অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যেত। তাই রোমের মানুষরা বলা শুরু করেন, আয়না ভাঙলে সাত বছরের দুর্ভাগ্য বয়ে আসবে। সাত বছর এইজন্য বলা হত, কারণ রোমের মানুষ বিশ্বাস করেন, প্রতি সাত বছর অন্তর জীবন বদলায়।
৮) শবদাহের পর স্নান করা
শ্মশান থেকে বাড়ি ফিরে আগে স্নান করতে যান সবাই। কিন্তু কেন? আসলে, শ্মশানে নানারকম জীবাণু থাকে। মৃত ব্যক্তির দেহেও ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। দেহ পোড়ানোর সময় সেই ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। সেই জীবাণু বাড়ির পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যাঁরা শ্মশানে যান সৎকারের পর প্রত্যেকের স্নান করা উচিত।
৯) কালো বিড়ালে রাস্তা কাটা অশুভ
শুধু ভারতে নয়, পাশ্চাত্যেও মানা হয় বিড়াল রাস্তা কাটা মানেই অশুভ! ইজিপ্ট থেকে এই কুসংস্কারের উৎপত্তি। কালো বিড়ালকে তারা শয়তানের রূপ মনে করতেন। আমাদের দেশে কেউ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কালো বিড়াল দেখলে থমকে দাঁড়ান। অন্য কেউ রাস্তা দিয়ে চলে গেলে তবে তিনি যান। এর পিছনে আসল কারণ হল, বহু শতাব্দী আগে মানুষ ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি ব্যবহার করতেন যাতায়াতের জন্য। সেইসময় রাস্তায় বিড়াল, শিয়াল বা চিতাবাঘ ঘুরে বেড়াত। অন্ধকারে ওইসব প্রাণীদের চোখ জ্বলে। তাই ঘোড়া, গরু ভয়ে যেতে চাইত না। সেই সুযোগে গাড়িতে থাকা লোকজন আশপাশে কিছুটা সময় বিশ্রামও করে নিতেন। বিশ্রাম পেত ঘোড়া, গরুগুলোও। সেই থেকে চালু হয় রাস্তা দিয়ে বিড়াল গেলে থেমে যাওয়া দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা কুসংস্কারে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
১০) উত্তর দিকে মাথা করে শোওয়া খারাপ
উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোতে নেই। একথা মা-ঠাকুমাদের থেকে আমরা সবাই শুনেছি। বাড়ির প্রবীণরা যা বলেন, তা সঠিক। তবে এটা কোনও কুসংস্কার নয়, এর পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। পৃথিবীর উত্তর এবং দক্ষিণে দুটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। তার পজিটিভ এবং নেগেটিভ প্রভাবও রয়েছে। পজিটিভ এফেক্ট রয়েছে উত্তর দিকে, দক্ষিণে নেগেটিভ। সমান্তরালভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে মানবদেহেও। মাথার দিকটি পজিটিভ ক্ষেত্র, পায়ের দিকটি নেগেটিভ ক্ষেত্র। চুম্বকের ধর্ম মেনে পজিটিভ পোলগুলি পরস্পরকে প্রতিরোধ করে। বিপরীত পোল একে অপরকে আকর্ষণ করে। ঠিক এই কারণেই উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোতে নেই।