Just In
Gandhi Jayanti: জেনে নিন গান্ধীজি সম্পর্কিত কিছু অজানা কিছু তথ্য এবং তাঁর বলা বিখ্যাত বাণী
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যাঁকে আমরা এক নামে মহাত্মা গান্ধি বা গান্ধিজী নামেই চিনি। তিনি ছিলেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এবং প্রভাবশালী নেতা। এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হবে। এইদিনে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতে 'গান্ধী জয়ন্তী' হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় ছুটির দিন পালিত হয়।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দেশকে অহিংসার পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি গোটা ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকার তাঁকে ভারতের 'জাতির জনক' হিসেবেও ঘোষণা করে। ২০০৭ সালের ১৫ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবর-কে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন : নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু : এই সাহসী বঙ্গসন্তান সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর মহাত্মা গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে।
মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেটি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি এবং শাল যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূ্লই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাস থাকতেন।
তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য :
১) মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ সালে পোরবন্দরের হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা করমচাঁদ উত্তমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান। মা ছিলেন পুতলিবা।
২) ১৮৮৩ সালে মহাত্মা গান্ধী কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কাস্তুবাই নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। ১৮৮৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি লন্ডনে যান।
৩) গান্ধীজীর প্রথম অর্জন আসে ১৯১৮ সালের চম্পারণ এবং খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে।
৪) ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাঝে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন।
৫) গান্ধী তার অহিংস নীতির পরিবর্ধন করেন স্বদেশী নীতি যোগ করে। স্বদেশী মতে সকল বিদেশী পণ্য বিশেষত ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা হয়। এর পথ ধরে তিনি সকল ভারতীয়কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পরার আহ্বান জানান।
৬) ১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯২৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
৭) ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।
আরও পড়ুন : স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিখ্যাত কিছু স্লোগান, যা শুনে ব্রিটিশদের কপালে ভাঁজ পড়েছিল
৮) ১৯৩০ সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।
৯) ১৯৩৩ সালের ৮ মে তিনি হরিজন আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২১ দিন ধরে অনশন করেন।
১০) ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিড়লা ভবনে পথসভা করছিলেন। তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী যার সাথে চরমপন্থী হিন্দু মহাসভার যোগাযোগ ছিল।
তাঁর ১৫২তম জন্মদিনে দেখে নেওয়া যাক গান্ধীজীর কিছু বিশেষ বাণী, যা আজও উদ্বুদ্ধ করে সমাজকে-
১)
দুর্বল মানুষ কখনও ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা শক্তিমানের ধর্ম।
২)
যখনই কোনও প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে, তাকে ভালোবাসার সাথে অর্জন করো।
৩)
চোখের বদলে চোখ গোটা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।
৪)
আজ তুমি যা করবে, তার উপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যত।
৫)
যেদিন ভালবাসা, ক্ষমতার লোভকে হরিয়ে দেবে, সেদিন এই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে।
৬)
এমনভাবে জীবনযাপন করো, যেন মনে হয় তুমি আগামীকালই মারা যাবে। এমনভাবে শিখবে যেন তোমার সময়ের অভাব নেই,তুমি চিরজীবী।
৭)
ভালোবাসা জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি।
৮)
শক্তি দেহের ক্ষমতা থেকে আসে না, আসে মনের অদম্য ইচ্ছার মাধ্যমে।
৯)
ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো সহজ, কিন্তু একাকী দাঁড়াতে সাহস দরকার।
১০)
পৃথিবীতে তুমি যে পরিবর্তন দেখতে চাও তা নিজ থেকেই শুরু করো।