Just In
Don't Miss
দীপাবলি ২০২০ : হোক ‘সবুজ দীপাবলি’, তৈরি করুন দূষণ মুক্ত পরিবেশ
বছর অতিক্রান্ত উপস্থিত দীপাবলি, আলোর উৎসব। ইতিমধ্যেই আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে চারিদিক, ঘরে ঘরে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠছে সকলে। কিন্তু এই উৎসব যে শুধুমাত্র আলোর, শব্দের নয় তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি উৎসব 'দিওয়ালি'। 'দিওয়ালি' বা 'দীপাবলি' শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে উদ্ভূত এবং এর অর্থ 'সজ্জিত প্রদীপের সারি'। এইসময় গোটা ভারত আলোয় ভরে ওঠে। দিওয়ালি বলতে বোঝায় অন্ধকারের উপর আলোর বিজয়, অজ্ঞতার উপর জ্ঞান, হতাশার উপর আশা এবং খারাপের উপর ভালো। পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে পালিত হয় দীপাবলি এবং শেষ দিনটি হয় অন্ধকার অমাবস্যার। এইবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে, দিওয়ালি বা দীপাবলি পড়েছে ১৪ নভেেম্বর।
আপনারা কেউ যদি দিওয়ালির সময় আতশবাজি জ্বালানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে দু'বার ভাবুন। সত্যিই কি আতশবাজি পোড়ানো দিওয়ালির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ! তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এটি এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উৎসব উদযাপনে কোনও ক্ষতি নেই, তবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত এটি দায়িত্বপূর্ণভাবে উদযাপন করা।
দীপাবলি নামান্তরে দিওয়ালি। দিয়া অর্থাৎ দীপের মালা, চারিদিকে আলো দিয়ে এই উৎসব যে অনেক মনোগ্রাহী হতে পারে, তা আমরা কখনই বিবেচনা করে দেখিনা। ইতিমধ্যেই উচ্চতম আদালতে শব্দবাজি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিয়মভঙ্গের কর্মে লিপ্ত থাকছে ক্রেতা থেকে বিক্রেতা দু'পক্ষই। দিওয়ালির পুরো সপ্তাহে কঠিন হয়ে পড়ে শ্বাস নেওয়া। এই দানবীয় দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হবে আমাদের এবং বাঁচাতে হবে প্রকৃতিকে।
বছরের ঠিক এই সময়টা যেন গোটা জীবজগতের কাছে আতঙ্কের হয়ে ওঠে। শুধু শব্দদূষণই নয়, বায়ুদূষণের প্রকোপে রীতিমত ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহর ও শহরতলির আশ্রয়ে থাকা পশুপাখির জগৎ। সময়ক্রমের ইতিহাসে কোনও বিজয়োল্লাস বা উৎসবের সঙ্গে শব্দবাজির তাণ্ডবের মেলবন্ধন ঠিক কোথায় তা আবিষ্কৃত না হলেও, বর্তমানে তা প্রকৃতির কাছে ভাবনার বিষয়। আই আমাদের প্রত্যেকের উচিত বাড়ির বাচ্চাদের জন্য এবং পশুপাখিদের জন্য পরিষ্কার এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। সকলকে সোচ্চার হতে হবে দূষণ প্রতিরোধে। নিজেদের কয়েকটি ছোটো পরিবর্তনেই রোধ হতে পারে দূষণ। উপভোগ করুন দিওয়ালি, তবে শব্দে নয়, আলোয়।
এইবছর পরিবেশ বান্ধব দিওয়ালি উদযাপন করতে কয়েকটি উপায়ের আশ্রয় নিতে পারেন যার মাধ্যমে আপনি শান্ত, মনোরম দিওয়ালি এবং একই সাথে আপনার পরিবেশের যত্ন নিতে পারেন। এই দিওয়ালিতে কীভাবে প্রতিরোধ করবেন দূষণ, রইল তার কয়েকটি সাধারণ উপায় -
১) পশু-পাখিদের যত্ন নিন
এই দিওয়ালিতে অর্থ ব্যয় করা ছাড়াও আপনি রাস্তার বিপথগামী কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীদের জন্য দুর্দান্ত কিছু করতে পারেন। বাড়ির বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি আমাদের চারপাশের পশুদেরও যত্ন নেওয়াও আমাদের দায়িত্ব। আতশবাজির শব্দদূষণ, ধোঁয়ার কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে থাকে, তাই এগুলো বন্ধ করা উচিত এবং খেয়াল রাখবেন যাতে রাস্তার পশুদের গায়ে কোনওভাবে আতশবাজি না পড়ে।
২) দিয়া বা প্রদীপ ব্যবহার করুন
যেহেতু এটা আলোর উৎসব, তাই পুরো ঘর আলোকসজ্জায় ভরিয়ে দেওয়া দরকার। অনেকেই সময় সাশ্রয় করতে বৈদ্যুতিক লাইট ব্যবহার করে থাকেন। তবে, আপনি যদি বাড়ির চারপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজান তবে এটি সবুজ দীপাবলি উদযাপনের জন্য সহায়তা করবে। আপনি পুরো পরিবারকে এর জন্য কাজে লাগাতে পারেন, ফলস্বরুপ পরিবারের সবাই একত্রিত হবে এবং বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।
৩) শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করুন
দিওয়ালির সময় সর্বাধিক দূষণ ঘটে, আগুনে পোড়ানো শব্দবাজি এবং ধোঁয়ার কারণে। নিজেদের চেষ্টায় বন্ধ করতে হবে শব্দবাজি ফাটানো। দিওয়ালিটিকে বলা হয় আলোর উৎসব, দানবীয় শব্দের উৎসব নয়। সুতরাং বিকট আওয়াজ যুক্ত চকোলেট বোমা এবং অন্যান্য শব্দ যুক্ত বোমা ফাটানোর কোনও ন্যায়সঙ্গত কারণ নেই। শব্দ দূষণের সাথে এগুলি ক্ষতি করতে পারে মানুষের কানেরও। এগুলি থেকে নির্গত ধোঁয়া খুবই ক্ষতিকারক, যা আমাদের শরীরে অত্যন্ত ক্ষতি করে। সুতরাং বন্ধ করুন শব্দবাজি।
৪) চারপাশ পরিষ্কার রাখুন
এই দিওয়ালিতে পরিষ্কার করুন আপনার নিজের বাসভবন এবং চারপাশ। আপনি যদি ক্র্যাকার ফাটান তবে পড়ে থাকা কাগজের টুকরোগুলি পরিস্কার করুন। দিওয়ালির পরে আপনার নিজের বাড়ি বা ভবনের সামনে জমে থাকা আবর্জনা সংগ্রহ এবং নিষ্পত্তি করার জন্য উদ্যোগ নিন,পরিবেশের ভারসাম্যকে বজায় রাখুন।
৫) দিওয়ালি হোক প্লাস্টিক বিহীন
দিওয়ালি হোক প্লাস্টিক বিহীন। আতশবাজির প্লাস্টিকের কভার, মিষ্টির বাক্স, ভাঙা বোতল এবং বিস্ফোরক, অ-বিস্ফোরক আবর্জনাগুলি আলাদাভাবে সংগ্রহ করুন যাতে এটি উপযুক্তভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।
৬) ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাওয়ান
উৎসব চলাকালীন, প্রচুর খাবার নষ্ট হয়, ফেলে দেওয়া হয়। এগুলি নষ্ট না করে যারা ক্ষুধার্ত, খালি পেটে ঘুমাতে যায় তাদের মধ্যে অতিরিক্ত খাবার বিতরণ করুন। এটি খাবার নষ্ট করা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে এবং পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে।
৭) উপহারের তালিকায় রাখুন সবুজ উদ্ভিদ
উৎসবের সময় যে উপহারগুলি আমরা বিনিময় করি সে সম্পর্কে উন্নত কিছু চিন্তাভাবনা করুন। উৎসবকে সাধারণ এবং পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে আপনার প্রিয়জনকে একটি গাছ উপহার দেওয়ার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। এছাড়াও, আপনি ভেষজ পণ্যও বেছে নিতে পারেন।
এই সমস্ত পন্থা অবলম্বন করে রোধ করতে হবে পরিবেশ দূষণকে।নিজের মাধ্যমে অন্যকে অগ্রসর করাতে হবে দূষণ মুক্তের পথে।তবেই সফল হবে দিওয়ালিতে পরিবেশ রক্ষার লড়াই।অলোকময় হয়ে উঠবে ২০১৯-এর নামান্তরে দিওয়ালি।