Just In
কার্গিল যুদ্ধের মহানায়ক ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা, জানুন তাঁর জীবনযুদ্ধের কাহিনী
আমাদের দেশে এমন বীরের অভাব নেই, যাঁরা দেশ মায়ের জন্য নিজের জীবন দিতে এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধাবোধ করেন না। ভারত মায়ের এমনই এক ছেলে হলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা। যিনি কার্গিল যুদ্ধের নায়ক হিসেবে পরিচিত। কার্গিল যুদ্ধের নায়ক এবং শেরশাহ নামে বিখ্যাত ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রার বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের কাহিনী ভোলা যায় না। যখনই দেশের এই বীরের নাম নেওয়া হয়, সবার বুক গর্বে প্রশস্ত হয়।
ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা, যিনি মাত্র ২৪ বছর বয়সে দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেনে নিন ভারত মায়ের এই বীর পুত্র সম্পর্কে।
হিমাচল প্রদেশে জন্ম
১৯৭৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর হিমাচল প্রদেশের পালামপুরে জন্মগ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা। তাঁর পিতার নাম গিরধারী লাল বত্রা এবং মাতা কমল কান্তা বত্রা। তাঁর এক যমজ ভাই বিশাল বত্রা এবং দুই বোন ছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমিক বিক্রমের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। চণ্ডীগড়ের DAV কলেজ থেকে বিএসসি মেডিকেল সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট হন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি NCC-তে যোগ দেন। ইন্টার-স্টেট এনসিসি ক্যাম্পে, তিনি উত্তর অঞ্চলের পাঞ্জাব অধিদপ্তরের বেস্ট এনসিসি এয়ার উইং ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজেও অংশ নেন। তখন থেকেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বিদেশী চাকরি প্রত্যাখ্যান
এনসিসি-র ক্যাডেট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি CDS (Combined Defence Services) পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। যখন তিনি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তিনি হংকং-এ মার্চেন্ট নেভিতে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভারত মায়ের সেবার জন্য এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া
CDS পরীক্ষায় পাশ করার পর ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি, দেরাদুনে যোগ দেন। এরপর তাঁর ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ হয়। প্রশিক্ষণ শেষ করার পর, ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জম্মুর সোপোর নামক জায়গায় ১৩তম ব্যাটালিয়ন জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলস-এ লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯-র পয়লা জুন, তাঁর দলকে কার্গিল যুদ্ধে পাঠানো হয়। পরে তাঁর যুদ্ধক্ষেত্রেই ক্যাপ্টেনের পদে পদোন্নতি করা হয়।
কার্গিল যুদ্ধ
ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা কার্গিল যুদ্ধের নায়ক হিসেবে পরিচিত। কার্গিল যুদ্ধের সময়, তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার একটি দল শত্রুদের হাত থেকে 'পয়েন্ট ৫১৪০' উদ্ধার করে। তারপর টার্গেট ছিল 'পয়েন্ট ৪৮৭৫' উদ্ধার করা। শত্রুর গুলিতে আহত হন তিনি, কিন্তু সেই অবস্থাতেও লড়াই চালিয়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে পয়েন্ট ৪৮৭৫ উদ্ধার করে দেশের পতাকা উড়িয়ে দেন ক্যাপ্টেন বত্রার সহযোদ্ধারা। ক্যাপ্টেন বত্রার এই সাহসিকতার জন্য মরণোত্তর পরমবীর চক্রে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। যুদ্ধ ভূমিতে তাঁর কোড নেম ছিল শেরশাহ।