Just In
জেম স্টোন পরে কি সত্যিই ভাগ্য ফেরানো সম্ভব?
পিকে মুভিতে যেমনটা বলা হয়েছিল, আমাদের মনের অন্দরে লুকিয়ে থাকা ভয়কে কাজে লাগিয়েই ধর্ম গুরু এবং জ্য়োতিষীরা নিজেদের পসার সাজিয়ে থাকেন। কথাটার মধ্যে কোনও ভুল নেই।
এই প্রশ্নটাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু মজার বিষয় কী জানেন আনেকেই এই উত্তর জানার ছেষ্টা না করেই হাজার হাজার টাকা খরচ করে আঙুল ভরে নানা স্টোন পরে থাকেন। ভাবেন এমনটা করলে জীবনে দুঃখ বলে কিছু থাকবে না। কিন্তু এমন ভবনা কত বোকা বোকা না!
কেন বোকা বোকা বলছি, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? কারণ জীবন মানেই তো কিছু না কিছু সমস্যা থাকবে। আর এমনটা আমরা কেন ভেবেনি যে সমস্যা মানেই তা বিপদের। এমনটাও তো হতে পারে যে প্রবলেম আসলে একটা সুযোগ নিজেকে চেনার, নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কিছু করার। এই যেমন দেখুন না গত বছর এই সময় আমি কিছুই রান্না করতে জানতান না, ফলে দক্ষিণ ভারতের নানা ডেলিকেসির উপরই ছিল আমার ভরসা। এমনটা ভরসা রাখতে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে বার কয়েক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সমস্যায় ভেঙে না পরে রান্না করা শিখেছি। এখন নিজেই নানা বাঙালি পদ রশিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকি। যদিও বলতে পারেন এটা কোনও সমস্যা নাকি? ঠিক বলেছেন। আমাদের জীবনে এর থেকেও অনেক বড় বড় সমস্যা আসে, তখন একটা পাথরের উপর ভরসা না রেখে যদি নিজের উপর একটু ভরসা রাখতে পারেন, তাহলে মনে হয় জীবন যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনাটা অনেক বেড়ে যায়। তবে একাথা ঠিক যে বিজ্ঞানীদের একাংশ স্টোন পরার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের সেই বক্তব্যও এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হবে। সব জানার পর সিদ্ধান্ত আপনার, যে আপনি হাজার হাজার টাকা খরচ করে স্টোনের উপর ভরসা করে জীবন পথে এগতো চান নাকি নিজের মন এবং মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে তুলে সব সমস্যা চোখে চোখ রেখে একজন সফল যোদ্ধার মতো জীবনকে নিয়ন্ত্রণে করতে চান! এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখা ভাল। আমরা, মানে ভারতীয়রা স্টোনের উপর ভরসা রাখলেও পশ্চিমী দুনিয়া কিন্তু এসবে বিশ্বাস করে না। কিন্তু দেখুন ওরা কেমন তড়তড় করে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। তাই প্রশ্নটা থেকেই যায় মনে, এইসব স্টোন কী আদৌ কোনও কাজের?
স্টোনের ধারণার জন্ম হল কীভাবে?
এই বিষয়ে খোঁজ খবর চালাতে গিয়ে জানা গেছে ঋক বেদে স্টোন বা রত্নের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে এমন লেখাও রয়েছে যে আমাদের শরীরের অন্দরে থাকা নানা চক্রকে ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে শরীর এবং মনকে চাঙ্গা রাখতে জেম স্টোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিজ্ঞান কী বলছে?
যেমনটা আগেও আলোচান করা হয়েছে যে বিজ্ঞানীদের একাংশ জেম স্টোনের পক্ষে সাওয়াল করেছেন। তাদের মতে স্টোনের উপর সূর্যালোক পরার পর তা নানাভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। এই সময় বিশেষ এক ধরনের রেডিয়েশন তৈরি হয়। যার প্রভাব শরীরে পরার পর কিছু সুফল পাওয়া যায় ঠিকই। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্দরে কিছু পরিবর্তন হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের সচলতাও বৃদ্ধি পায়। এর বাইরে আর কোনও উপকার হয় কিনা, সে বিষয়ে যদিও ঠোস কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়ই। তাই নটি গ্রহের প্রভাবকে কাটিয়ে আমাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন করতে স্টোন কতটা ভূমিকা পালন করে থাকে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
কোন ধরনের স্টোন বেশি কাজ করে?
বেঙ্গালোরে আসার পর যখন আমার শরীর একেবারে ভাল যাচ্ছিল না, তখন এক জ্যোতিষীর কাছে যাওয়ার ভুল করেছিলাম। তিনি আমাকে একটা লিস্ট ধরিয়ে বলেছিলেন এই স্টোনগুলি পরলে নাকি আমার সব কষ্ট নিমেষে ছু-মন্তর হয়ে যাবে। এই কথাটা শোনর পর আমি কি করেছিলাম জানেন? সেই লিস্টটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। কোনও স্টোনই নিইনি। কারণ তখন আমার কাছে এত টাকা ছিল না যে এতগুলো স্টোন নিতে পারি। কিন্তু বিশ্বাস করুন কোনও ক্ষতি হয়নি আমার। ধীরে ধীরে সমস্যা কমে গিয়েছিল। আর এখন তো বেশ মজাতেই রয়েছি। তাই কোন স্টোন পরলে উপকার মিলবে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া বেজায় শক্ত। তাই দয়া করে স্টোনের পিছনে নিজের কষ্টার্জিত পয়সা ব্যয় করা বন্ধ করুন। বরং নিজের মনকে এবং শরীরকে এতটাই শক্তিশালী করে তুলুন যে কোনও বাঁধাই যেন বাঁধা মনে না হয়।
বাজার অর্থনীতির ফাঁদে পরেছেন কী মরেছেন!
পিকে মুভিতে যেমনটা বলা হয়েছিল, আমাদের মনের অন্দরে লুকিয়ে থাকা ভয়কে কাজে লাগিয়েই ধর্ম গুরু এবং জ্য়োতিষীরা নিজেদের পসার সাজিয়ে থাকেন। কথাটার মধ্যে কোনও ভুল নেই। একটু খেয়াল করে দেখবেন রাস্তা-ঘাটে, টেলিভিশন-রেডিওয়ে এমন অনেক বিজ্ঞাপন শুনতে এবং দেখতে পাওয়া যায় যেখানে এমন দাবি করা হয় যে এই দোকানের স্টোন ১০০ শতাংশ খাঁটি, যা পরলে আপনি সারা জগতকে নিজের মুঠোয় নিসে আসতে পারবেন। কিন্তু বিল গেটস, স্টিভ জোবস, জ্যাক মা, এ পি জে আবদুল কালাম প্রভৃতি সফল মানুষদের তো কখনও স্টোন পরতে দেখিনি। তাহলে এরা সফল হলেন কিভাবে? এই প্রশ্নটা বারে বারে নিজের মনে বলতে থাকুন বন্ধু, তাতে যদি ভবনার কিছু পরিবর্তন করতে পারেন!
তাহলে কী দাঁড়াল?
সবশেষে একটা কথাই বলবো বন্ধুরা। নিজের জীবনেকে অন্ধবিশ্বাসের শিকলে জড়াবেন না। বরং মনকে উন্মুক্ত করুন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন গোয়ার সমুদ্র তটে খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছেন, জোর কদমে হাওয়া ধাক্কা খাচ্ছে আপনার মুখে, মনে হচ্ছে আপনি উড়ছেন। আর ক্ষনিকের অপেক্ষা। একটু পরেই সব বাঁধা পেরিয়ে আপনি উড়ে যাবেন এক দূর দেশে। এমন ভাবনার মতোই মনকে খাঁচা থেকে বার করে উড়িয়ে দিন। ভয় এবং চিন্তার পাথর সরিয়ে দৌড়াতে শুরু করুন। দেখুন কোনও কিছুর প্রয়োজন পরবে না। কোনও স্টোন ছাড়াই আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে। কারণ ওয়াল্ড ডিজনি যেমনটা বলতেন, আমরা যদি স্বপ্ন দেখার সাহস দেখাতে পারি, তাহলে সেই স্বপ্নকে পূরণ করার ক্ষমতাও তৈরি করতে পারি। তাই বন্ধু নিজের চেষ্টায় এগোন, কোনও স্টোনের ভরসার থাকলে কিন্তু সময় নষ্ট হবে মাত্র!