Just In
- 6 hrs ago এপ্রিল মাসে ৪ গ্রহের স্থান পরিবর্তন, রাজযোগ ও সৌভাগ্যে ফুলে ফেঁপে উঠবে এই রাশির জাতকরা, দেখুন
- 7 hrs ago আপনার কি ক্রমাগত কান চুলকাচ্ছেন? অজান্তেই ডেকে আনচ্ছেন বড় বিপদ
- 11 hrs ago মসুর ডাল খেতে ভালোবাসেন? কিন্তু অতিরিক্ত খেলে হতে পারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!
- 12 hrs ago অনলাইন গেমে বাচ্চারা ঘরকুঁনো! জানেন কি স্বাস্থ্যের জন্য় কতটা উপকারি আউটডোর গেম?
Don't Miss
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র: যাঁর কন্ঠস্বরে ভেসে আসে আগমনীর বার্তা, জানুন তাঁর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
প্রতি বছর তাঁর কন্ঠস্বরে ভেসে আসে আগমনীর বার্তা, পুরোনো ফুল ঝরে গিয়ে ফোটে নতুন ফুল, নীল আকাশে খুশির আমেজ মিশে ভেসে বেড়ায় সাদা তুলোর মতো মেঘ, ঘরে ঘরে দরজায় কড়া নেড়ে জানান দেয় মা আসছেন...। দুর্গা পুজো প্রথম যাঁর সুমধুর কন্ঠস্বরের স্তোত্র পাঠ দিয়ে শুরু হয় তিনি হলেন সর্বাধিক পরিচিতি (বিশেষত বাঙালীর কাছে) বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ইনি ছাড়া দুর্গা পুজো অসম্পূর্ণ, একদম ভাবাই যায় না।
১৯০৫ সালের ৪ অগস্ট উত্তর কলকাতায় আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তাঁর পিতা রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা সরলাবালা দেবী। পরবর্তীকালে, ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কেনা ৭, রামধন মিত্র লেনে উঠে আসেন তাঁর পরিবারবর্গ। কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯২৭ সালে তিনি "রায়বাহাদুর" খেতাব পান। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।
তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। কলকাতার বাসিন্দা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পঙ্কজকুমার মল্লিক ও কাজী নজরুল ইসলামের সমসাময়িক ১৯৩০-এর দশক থেকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিও-য় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন। কলকাতার আকাশবাণীর অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ তিনি। রেডিও ছিল তাঁর প্রাণ। আকাশবাণীর জন্য তিনি তাঁর জীবনের শেষ টুকু অবধি দিয়েছিলেন। তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনাও করেন। এমনকি নিজেও পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন। ১৯৫৫ সালে 'নিষিদ্ধ ফল' নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন তিনি।
তাঁর সর্বাধিক পরিচিত বেতার সম্প্রচার হল "মহিষাসুরমর্দিনী", যা নতুন ভাবে মা দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। আকাশবাণীর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান এটি। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। এই অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ প্রত্যেক বাঙালীর মন ছুঁয়ে যায়। সেই ১৯৩১ সাল থেকে আজও প্রতিবছর 'মহালয়া'-র দিন ভোর চারটের সময় কলকাতার আকাশবাণী থেকে এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। তিনিই একমাত্র এর উত্তরাধিকার রুপে মানুষের মনে বিরাজ করেন। এই সম্প্রচারের মাধ্যমেই শুরু হয় বাঙালির দুর্গা পূজা। তাঁর স্তোত্র পাঠ শেষের পর প্রত্যেক বাঙালির মনে একটাই বাক্য ঘোরাফেরা করে, "পুজো এল...।"
এত প্রতিভার পরেও তাঁর জীবনে খারাপ সময় আসেনি, এটা বলাটা বোধহয় ভুল হবে। সালটা ১৯৭৬। হঠাৎই, আকাশবাণী কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় চিরাচরিত 'মহিষাসুরমর্দিনী' বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পরিবর্তে বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তমকুমারকে দিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করানোর কথা ঠিক হল। গোপন বৈঠকে বাদ পড়লেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। পরিবর্তিত 'মহিষাসুরমর্দিনী'- র স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের বিভাগীয় প্রধান ডঃ গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়। সেইবছর মহালয়ার ভোরে রেডিয়োয় বাজল নতুন অনুষ্ঠান 'দেবীং দুর্গতিহারিণীম্'। কিন্তু, তা জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। সমালোচনার ঝড়, বেতার অফিস ভাঙচুর হয়ে একাকার কান্ড। অফিসের সামনে লোকে গালিগালাজ করতে লাগল।
যাইহোক, বহু মানুষের চাহিদায় সে বছর ষষ্ঠীর দিনই আবার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই চিরাচরিত 'মহিষাসুরমর্দিনী' সম্প্রচার করা হয়। তারপর থেকে আর একবারও এই অনুষ্ঠানকে বদলে ফেলার কথা কেউ ভাবেনি।
আকাশবাণীর প্রক্যেকটা কোণায় আজও তাঁর স্মৃতি জ্বলজ্বল করে। আজও আকাশবাণীর প্রতিটি কোণায় ধুতি-পাঞ্জাবি গায়ে, চপ্পল পরা এক ছায়া যেন ঘুরে বেড়ায়। আজ তিনি নেই ঠিকই, তবে, এমন এক অমূল্য রত্ন দিয়ে গেছেন যেটা ছাড়া বাঙালির জীবন অচল। তাঁকে দেখা না গেলেও তাঁর ভেসে আসা কন্ঠই তৃপ্ত করে মানুষকে।