Just In
বর্ষাকালের পোকামাকড়ের থেকে বাঁচার ঘরোয়া পদ্ধতি!
নিজের বাড়িতে থাকুন কি পিজিতে, এই সময় ঘর পরিষ্কার রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত রান্না ঘর এবং খাবার জায়গা সব সময় যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি।
কাঁথা জড়িয়ে ভাত ঘুমটা সবে জমে উঠেছিল। বাইরে তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আর মনে তখন রঙিন স্বপ্ন। আহা! এর থেকে আরাম আর কী হতে পারে এই দুনিয়ায়! ঠিক তখনই। ওমা!!!!!!!! হঠাৎই ইন্দ্রপতন। কী হল রে! মা-কাকিমা ছুটে এসেছে। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। এদিকে আমি জ্বালার চোটে কখনও কত্থক, তো কখনও হিপ পপ করতে লেগে পরেছি। এত যন্ত্রণা যে মুখ থেকে কথাও ফুটছিল না। কোনও মতে সাইন ল্যাঙ্গয়েজ অবস্থার বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। মা কি বুঝল জানিনা, ছুটল হলুদ আনতে। আসলে কোনও এক অজানা পোকার মনে হয় আমার দিবা নিদ্রায় যাওয়াটা সহ্য হয়নি। তাই রেগে মেগে এমন কামড় বসিয়েছে যে আমার চিৎপটাং অবস্থা। সেই কামড়ের কষ্ট কয়েকদিন পর্যন্ত ছিল জানেন! অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলাম, তবু আসামিকে ধরতে পারেনি। মাল মাকাতে কামড়ে যে কোথায় ভেগেছিল, কে জানে!
আমার মতো দুর্ভোগ যাতে আপনাদেরও না হয়, তাই জন্যই তো এই প্রবন্ধটি লেখা। এই লেখায় বর্ষাকালীন পোকামাকড়দের বাড়ি থেকে তাড়ানোর এমন কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা বেশ কার্যকরী। তাই আর সময় নষ্ট না করে ঝটপট পড়ে ফেলুন এবং জেনে নিন সেই সব পদ্ধতি সম্পর্কে। কারণ এইসব পোকারা কিন্তু বেজায় ভঙ্ককর। যেমন মাছির কথাই ধরুন না, নথি বলছে একটা মাছি প্রায় ৬০ ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়াতে পারে, যার মধ্যে টাইফয়েড, কলেরা সহ একাধিক কষ্টদায়ক রোগও আছে। তাই সাবধান!
এখন প্রশ্ন হল এই সময় নিজেকে এবং পারিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচানোর উপায় কী? খুব সহজ! এক্ষেত্রে শুধু মেনে চলতে হবে নিচে আলোচিত নিয়মগুলি। তাহলেই কেল্লাফতে!
১. ঘর পরিষ্কার রাখুন:
নিজের বাড়িতে থাকুন কি পিজিতে, এই সময় ঘর পরিষ্কার রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত রান্না ঘর এবং খাবার জায়গা সব সময় যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি। এমনটা করলে মাছিদের প্রবেশ ঘটবে কম। ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমবে। প্রসঙ্গত, কাজের ব্যস্ততার কারণে যদি রোজ সম্ভব নাও হয়, একদিন অন্তর অন্তর ফিনাইল জল দিয়ে ঘর মুছতে ভুলবেন না কিন্তু!
২. ময়লা এদিক-সেদিক ফেলবেন না:
কভার দেওয়া ডাস্টবিনে ময়লা ফলবেন। না হলে জলে-ঝড়ে তা ভেসে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পোকামাকড়ের উপদ্রপ বাড়াবে। বিশেষত মাছিদের। তাই তো এই বিষয়টি খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন।
৩. খাবার ঢেকে রাখবেন:
বাড়ির বড়রা খাবার ঢেকে রাখতে কোনও দিনই ভোলেন না। সমস্যাটা আমাদের নিয়ে। আমরা যারা নিজ শহরের বাইরে একা একা থাকি তারা ব্যস্ততার চোটে প্রায়শই না খাওয়া খাবার ঢেকে রাখতে ভুলে যাই। ফলে পোকা-মাকড় সেখানে এসে বাসা বাঁধে। ফলে পরে সেই খাবার খাওয়ার কারণে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই তো খাবার এবং কাটা ফল ঢেকে রাখতে ভুলবেন না কখনও, বিশেষত বর্ষাকালে।
৪. ঘরের মধ্যে থাকা গাছে বেশি জল দেবেন না:
অনেকেই ঘরে বনসাই বা নানা ধরনের গাছ রেখে থাকেন। যারা এমনটা করেন তারা জেনে নিন, বর্ষাকালে ভুলেও ঘরের মধ্যে থাকা গাছে বেশি মাত্রায় জল দেবেন না। এমনটা করলেও মশা-মাছির উপদ্রপ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।
৫. নেটের সাহায্য নিতে পারেন:
বর্ষাকালে পোকা-মাকড়দের থেকে বাঁচতে জনলা-দরজায় নেট লাগাতে পারেন। এর থেকে ভালো প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিন্তু বাস্তবিকই আর কিছু হতে পারে না। আর তাছাড়া নেট লাগালে জানলা বন্ধ করে রাখারও প্রয়োজনও পরবে না। ফলে বর্ষা উপভোগ করতে করতেও পারবেন, আবার রোগ-ভোগও দূরে থাকবে।
পোকামাকড় তাড়াতে ঘরোয়া পদ্ধতি:
১. পিঁপড়ে:
বাড়ির কোন অংশে পিঁপড়ের দল বাসা বেঁধেছে তা আগে চিহ্নিত করুন। তারপর একটা বাটিতে অল্প করে লেবুর রস, দারচিনি এবং পিপারমেন্ট পাতা দিয়ে একটা মিশ্রন বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রনটি পিঁপড়ের বাসার কাছে ছড়িয়ে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই সব পিঁপড়ে প্রাণ ভয়ে ছুট লাগাবে দেখবেন।
২. মাছি:
এক্ষেত্রে যে ঘরোয়া পদ্ধতিটি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, তা শুনতে একটু আজব লাগলেও বেশ কার্যকরী কিন্তু। বাড়ির প্রতিটি কোনায় ছোট ছোট বাটিতে জল নিয়ে রেখে দিন। এমনটা করলে একটা মাছিরও সন্ধান পাবেন না। প্রসঙ্গত, বাড়িতে তুলসি গাছ রাখলেও দারুন উপকার মেলে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাছি সহ একাদিক পোকামাকড়দের ঘরের সীমানা থেকে দূরে রাখতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে তুলসি গাছ।
৩. গন্ধ পোকা:
ঘরের যে কোনও কোণায় অল্প করে সাবান রেখে দিলেই নিস্তার মিলবে এমনসব পোকার হাত থেকে।
৪. আরশোলা:
ছোট-থেকে দৈত্যকার! নানা সাইজের আরশোলায় এই সময় রান্নাঘর ভরে যায়। আর ঠিক সময়ে যদি এদের মারা সম্ভব না হয়, তাহলে অল্প সময়ই এমন হারে বংশবৃদ্ধি হতে থাকে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এক্ষেত্রে বাজার চলতি যে কোনও স্প্রে ব্যবহার করতেই পারেন, তবে একটি ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যা আরশোলাদের বংশবৃদ্ধি আটকাতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে। কী সেই পদ্ধতি? ঘরের প্রতিটি কোনা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। সেই সঙ্গে যে যে জায়গায় আরশোলা বাসা বানিয়েছে ফাঁকগুলি মোটা কাপড় বা কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দিন। তাহলেই কেল্লাফতে!