Just In
এক চামচ মধুর সঙ্গে অল্প পরিমাণে দারচিনি গুড়ো মিশিয়ে খেলে কী কী উপকার পেতে পারেন জানেন?
যারা কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা মাসের শেষে কিছু না কিছু টাকা ঠিক জমিয়েই থাকেন। কিন্তু কেন জমান সবাই টাকা? কারণটা ঠিক কী? এই পশ্ন করলে বেশিরভাগই বলবেন, "হঠাৎ যদি রোগভোগ হয় তাহলে..!" কিন্তু আমি যদি বলি এই লেখাটি পড়লে আর টাকা জমানোর প্রয়োজন পরবে না, কারণ কোনও রোগই আপনাকে ছুঁতে পারবে না, তাহলে কী বলবেন!
মানে! এমনটা কীভাবে সম্ভব? আসলে বন্ধু এই লেখায় এমন একটি ঘরোয়া টোকটা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছে, যাকে কাজে লাগালে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এতটাই চাঙ্গা হয়ে উঠবে যে ছোট বড় কোনও রোগই দেখবেন ছুঁতে পারবে না। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষমতাও বাড়বে চোখে পরার মতো...!
আসলে যে ঘরোয়া টেটকাটি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে সেটি বানাতে প্রয়োজন পরবে অল্প পরিমাণে মধু এবং দারচিনির। প্রসঙ্গত, এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে একদিকে যেমন বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে নানাবিধ উপকারি এনজাইমের মাত্রা, তেমনি শরীরে প্রবেশ ঘটবে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানেরও। সেই সঙ্গে অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিয়াসিন, রাইবোফ্লবিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং আরও নানাবিধ উপাদানের ঘাটতি দূর হওয়ার কারণে একাধিক শারীরিক উপকারও মিলবে। যেমন ধরুন...
১. ব্লাডার ইনফেকশনের চিকিৎসায় কাজে আসে:
ব্লাডারের অন্দরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে ব্লাডার ইনফেকশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের বাকি অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার ভয়ও থাকে। এই সময় যদি ১ চামচ দারচিনির গুঁড়োর সঙ্গে হাফ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের ইতিউতি উপস্থিত সমস্ত ধরনের ক্ষতিকারক জীবাণু মারা পরে। ফলে সংক্রমণের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
২. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়:
দারচিনি এবং মধুতে উপস্থিত একাধিক উপাকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে মুখ গহ্বরে উপস্থিত নানাবিধ ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে মুখের গন্ধ তো দূর হয়ই। সেই সঙ্গে দাঁত এবং মাড়ি সম্পর্কিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। প্রসঙ্গত, এই সব উপকার পেতে সপ্তাহে কম করে ২-৩ দিন নিয়ম করে এক গ্লাস গরম জলে পরিমাণ মতো দারচিনি গুঁড়ো এবং মধু মিশিয়ে গার্গেল করতে ভুলবেন না যেন!
৩. চুলের সৌন্দর্য বাড়বে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মধু এবং দারচিনি খেলে চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে হেয়ার ফলের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
৪. হার্টের ক্ষমতা বাড়বে:
শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে দারচিনি এবং মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, মধুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের অন্দরে প্রদাহ কমায়। ফলে কোনও ধরনের হার্ট ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে কমে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও।
৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে চোখে পরার মতো:
সপ্তাহে ২-৩ দিন পরিমাণ মতো দারচিনি পেস্ট নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে স্কিনের যে কোনও সমস্যা কমে যায়। সেই সঙ্গে কোষের উপরের স্থরে জমতে থাকা মৃত কোষের স্থর সরে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণচ্ছল হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বলিরেখা এবং বয়সের ছাপও কমতে থাকে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত সকালে উঠে গরম জলে মধু এবং দারচিনি মিশিয়ে খেলে শরীরে অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে মেদ ঝরার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ফলে ওজন হ্রাস পেতে সময় লাগে না। তাই তো বন্ধু অতিরিক্তি ওজনের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে এই ঘরোয়া ঠোটকাটিকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন!
৭. আর্থ্রারাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমবে:
নিয়মিত গরম জলে পরিমাণ মতো মধু এবং দারচিনি পেস্ট মিশিয়ে খেলে জয়েন্টে প্রদাহ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হাড়ও শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আর্থ্রারাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৮. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না:
মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমায়। অন্যদিকে দারচিনিতে উপস্থিত অ্যান্টি-টিউমার প্রপাটিজ শরীরে কোথাও টিউমার হতে দেয় না। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না।
৯. দাঁত শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে:
দারচিনি এবং মধুতে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন দাঁতকে শক্তপোক্ত করে, তেমনি মুখগহ্বরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ যেমন দূর হয়, তেমনি কোনও ধরনের ডেন্টাস প্রবলেম মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে:
নিয়মিত যদি পরিমাণ মতো দারচিনির পেস্টের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের পরিমাণ বাড়তে থাকে যে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ক্লান্তিও দূর হয়।
১১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত দারচিনি এবং মধু খেলে স্টমাকে উপস্থিত গ্যাস বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদহজম এবং বুক জ্বালার মতো সমস্যা কমে যায়। প্রসঙ্গত, ব্লাডার ইনফেকশনের মতো রোগের চিকিৎসাতেও এই দুটি প্রকৃতিক উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে:
পরিবারে কি এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে? তাহলে তো বন্ধু আজ থেকেই দরচিনি এবং মধু খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই দুই প্রকৃতিক উপাদান ইনসুলের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।