Just In
- 8 hrs ago ঠাকুরকে নিত্যভোগ দেওয়ার সময় ঘণ্টা বাজে কেন? জানেন কি এর পিছনের রহস্য
- 10 hrs ago প্রখর রোদ থেকে স্বস্তি পেতে বাড়িতেই বানিয়ে নিন এই শরবতগুলি, ঠান্ডা রাখবে শরীরও
- 12 hrs ago গরমে এই পানীয়গুলি খেলে আপনিও থাকবেন হাইড্রেটেড ও সতেজ
- 14 hrs ago কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে কী করবেন? এড়িয়ে চলুন চা-কফি
বন্ধু খুব হাঁচেন-কাশেন নাকি!
ঠান্ডা লাগা থেকে হাঁচি, এমন ধরনের যে কানও রোগের প্রকোপ কমাতে আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
আমি তখন সিকিমে। লেখা লেখির কাজে বেশ কয়েক মাস হয়ে গেছে উত্তর সিকিমের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেরাচ্ছি। হঠাৎই একদিন বাড়ি থেকে ফোন। মার কাঁপা কাঁপা গলা। প্রথমটায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলান, পরে যখন সব শুনলাম, তখন হাসতে হাসতে বরফ জমিতে ধপাস আমি! আসলে আমার এক দূর সম্পর্কের মামা আছে। আমাদের বাড়িতেই থাকেন। বয়স এই ধরুন ৫০-৫৫। তার সারা বছরই হাঁচি লেগে থাকে। একটা বাক্যও কম করে ১০ বার না হেঁচে শেষ করতে পারেন না। সেই মামার নাকি এমন হাঁচি শুরু হয়েছে যে সামালানো যাচ্ছে না। এখন উপায় কি! মায়ের এই প্রশ্নের উত্তরে সেদিন আমার শ্রদ্ধেয় মামার হাঁচি বন্ধের জন্য বেশ কিছু পাহাড়ি ওষুধের সন্ধান দিয়েছিলাম মাকে, যা আজ এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চলেছি।
বন্ধুরা হাঁচি-কাশি হওয়াটা বেজায় স্বাভাবিক। তার উপর যে হারে দূষণ বাড়ছে, তাতে সারাক্ষণ হ্যাঁচ্চো হ্য়াঁচ্চো করাটা অস্বাভাবিক নয়। তাই আপনার অবস্থাও যদি আমার সেই মামার মতো হয়ে থাকে, তাহলে একবার চোখ রাখতেই হবে এই প্রবন্ধে। তাহলে দেখবেন বেশ উপকার পাবেন!
ন্যাসাল মিউকোসায় অস্বস্তি দেখা দিলেই সাধারণত হাঁচির চোট বাড়তে শুরু করে। কিন্তু জানেন কি হাঁচি আসলে আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। মানে! বলেন কি! একেবারেই। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম শক্তিশালী সৈনিক হল হাঁচি। কোনও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু নাকের পথ হয়ে শরীরে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করলেই হাঁচি শুরু হয়ে যায়। ফলে হাওয়ার চোটে ব্যাকটেরিয়া উল্টো পথে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ক্ষতি করার কোনও সুযোগই পায় না। তবে সমস্যাটা একটা জায়গাতেই, বারে বারে হাঁচি পাওয়াটা বেজায় অস্বস্তিকর। তাই তো এই লেখায় একবার চোখ না বুলিয়ে যে যাওয়ার কোনও উপায় নেই বন্ধুরা! তাহলে আর অপেক্ষা কেন, চলুন হাঁচি বন্ধের নানাবিধ ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার চেষ্টা চালানো যাক।
১. আদা:
ঠান্ডা লাগা থেকে হাঁচি, এমন ধরনের যে কানও রোগের প্রকোপ কমাতে আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি,অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-হিস্টেমিক উপাদান দ্রুত হাঁচি এবং কাশি বন্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে দুভাবে আদাকে কাজে লাগাতে পারেন। ১. প্রতিদিন সকালে সম পরিমাণে আদা, গুড় এবং ঘি এক সঙ্গে খালি পেটে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হাঁচির কোনও পাত্তাই পাওয়া যাবে না। আর যদি একান্তই এই ঘরোয়া উপায়টি পছন্দ না হয়, তাহলে আরেকটি উপায় আছে। ২. রাতে শুতে যাওয়ার আগে আদা চা মধু দিয়ে খেতে হবে। তাহলেই কেল্লাফতে!
২. আমলকি:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের ভরপুর এই ফলটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকবাবেই ব্যাকটেরিয়াদের আটকাতে অন্যান্য সৈনিকরা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায়, হাঁচির প্রকোপ কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, নাক দিয়ে জল পরা, জ্বর প্রভতি রোগ সারাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকভাবেই আমলকি খেতে পারেন। ইচ্ছা হলে কাঁচা চলতে পারে অথবা গরম জলে আমলকি এবং মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। তাতেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
৩. মেথি বীজ:
সোনালী বর্নের এই ছোট ছোট বীজের শরীরে উপস্থি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-হিস্টেমিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ। এই উপাদানগুলি ওয়েদার চেঞ্জের সময় হওয়া একাধির রোগ, যেমন জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁচি প্রভৃতি বন্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই প্রকৃতিক উপাদানটি সরাসরি খাওয়া চলবে না। এক্ষেত্রে গরম জলে ২-৩ চামচ মেথি বীজ মিশিয়ে জলটা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই জলটা চায়ের মতো করে পান করলে দারুন উপকার মিলবে। প্রসঙ্গত, মেথি বীজ দিয়ে তৈরি চায়ের স্বাদ খুব একটা ভাল হয় না। তাই একান্ত যদি খেতে না পারেন, তাহলে অল্প করে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। তাতে স্বাদও বদলাবে, শরীরের উপকারও হবে।
৪. তুলসি:
হাঁচি-কাশির মতো রোগ সারাতে হাজার বছর আগে থেকে তুলসি পাতাকে কাজে লাগানো হয়ে আসছে। কেন হবে নাই বা বলুন! এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ শরীরে অন্দরে ঘর বেঁধে বসে থাকা জীবাণুদের ঠেলে বাইরে বার করে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে। এখন প্রশ্ন হল আপনি তুলতি পাতা খাবেন কীভাবে? তাই তো! খুব সহজ। প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ গুড়ের সঙ্গে কয়েকটি তুলসি পাতা মিশিয়ে খাওয়া শুরু করে দিন। দেখবেন অল্প দিনেই চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। আর যদি এমনভাবে তুলসি পাতা গ্রহন করতে মন না চায়, তাহলে এক কাপ জলে ৩-৪ টে তুলসি পাতা এবং অল্প করে মধু মিশিয়ে জলটা ফুটিয়ে নিন। তারপর সেই জলটা চায়ের মতো করে পান করুন।
৫. সাইট্রাস ফল:
কমলা লেবু, মৌসম্বি লেবু এবং পাতি লেবু সহ বেশ কিছু ফলকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সাইট্রাস ফল নামে ঢেকে থাকেন। এই ধরনের ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। সেই সঙ্গে থাকে আরও বেশ কিছু উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ঠান্ডা লাগা এবং জ্বর-ব্য়াধির মতো সমস্যা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হাঁচিও দূরে পালায়। প্রসঙ্গত, অ্যালার্জির প্রকোপ দূর করতেও ভিটামিন সি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. কালো এলাচ:
বেশ কিছু বাঙালি পদের স্বাদ বৃদ্ধিতে এলাচের কোনও তুলনা হয়না বললেই চলে! কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে জ্বর, সর্দি-কাশি কমাতেও এই মশলাটি বেজায় কার্যকরী ভূমিকা নেয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বন্ধ নাক খুলে দিতে এবং সর্দির প্রকোপ কমাতে কোলো এলাচ দিয়ে তৈরি তেল দারুণ উপকারে লাগে। তাই তো বাড়িতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি এনে রেখে দেওয়া উচিত। কে বলতে পারে কখন কাজে লেগে যায়।
৭. গোল মরিচ:
অ্যান্টি-ব্য়াকেটেরিয়াল উপাদানে পরিপূর্ণ থাকার কারণে শরীরে উপস্থিত ব্য়াকটেরিয়াদের মারতে এই উপাদানটি কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ফলে নিয়মিত গোল মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করলে অনেকাংশেই নানাবিধ রোগের হাত থেকে মুক্তি মেলে। শুধু তাই নয়, পরিবেশ দূষণের কু-প্রভাব থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন কাজে আসে।
৮. মৌরি চা:
কয়েক দিন ধরেই হাঁচি-কাশিতে জর্জরিত? কোনও কিছু করেই স্বস্তি মিলছে না? একটা কাজ করুন তো! এক মুঠো মৌরি ভেজে নিন প্রথমে। তারপর ভাজা মৌরির সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন নিমেষে সমস্যা কমে যাবে। আসলে মৌরিতে উপস্থিত অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-হিস্টেমিক উপাদান এই ধরনের রোগের চিকিৎসায় দারুন উপকারে লাগে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ওয়েদার চেঞ্জের সময় নিয়মিত মৌরি চা খেলে শরীর সহজে ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণের মুখে পরে না। সেই সঙ্গে একাধিক রোগে থেকেও দূরে থাকা সম্ভব হয়।