Just In
Don't Miss
ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে মরতে না চাইলে প্রতিদিন আমলকি খেতে ভুলবেন না যেন!
শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দেখা দিলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। আর ঠিক এই কারণেই আমলকি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
যদি ভেবে থাকেন ডায়াবেটিস বুড়োদের রোগে, আপনার কোনও ভয় নেই, তাহলে ভুল ভাবছেন! কারণ পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের ৩০-৫০ বছর বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্য়াটা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে। এবং ভয়ের বিষয় হল সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে।
২০১৭ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বে প্রায় ৪২৫ মিলিয়ান মানুষ ডায়াবেটিস রোগের শিকার, যে সংখ্যাটা আমাদের দেশে প্রায় ৭২.৯ মিলিয়ান। তাই তো এমন পরিস্থিতিতে এই মারণ রোগের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে নিয়মিত আমলকি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমলকির সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগের সম্পর্কটা ঠিক কোথায়?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দেখা দিলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। আর ঠিক এই কারণেই নিয়মিত আমলকি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র দেহের অন্দরে "অক্সিডেটিভ স্ট্রেস" এর মাত্রা কমতে শুরু করে, যে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, আমলকির অন্দরে উপস্থিত ক্রোমিয়াম নামক একটি উপাদানও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, নিয়মিত আমলকি খাওয়া শুরু করলে যে কেবল ডায়াবেটিসের মতো মেটাবলিক ডিজিজ দূরে থাকে, তা নয়। সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে, তেমনি হার্টেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই তো ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা যাতে বেড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত এই ফলটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
২. কিডনির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে:
রোজের ডায়েটে আমলকিকে জায়গা করে দিলে শরীরে নাইট্রিক অ্যাসিড এবং কস্ক-২ নামক উপাদানের মাত্রা কমতে শুরু করে, সেই সঙ্গে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। শুধু তাই নয়, দেহের অন্দরে ধীরে ধীরে ইউরিয়ার মাত্রাও কমে। ফলে কিডনির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে।
৩.ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়:
পরিসংখ্যান বলছে যত দিন যাচ্ছে, তত যেন ক্যান্সার আমাদের ছায়া হয়ে উঠছে। মানে মানুষ যেখানে, সেখানেই এই রোগ নিজের থাবা বসাচ্ছে। তাই তো আগামী ৩-৪ বছরে আমাদের দেশে প্রতি বছর নতুন করে এই মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষে এসে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এমন অবস্থায় আপনার বিশ্বস্ত সেনাপতি হয়ে উঠতে পারে আমলকি। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানদের বার করে দিয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।
৪. গলার ব্যথা নিমেষে কমে:
আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত এক গ্লাস আমলা রসে পরিমাণ মতো আদা এবং মধু মিশিয়ে খেলে গলার ব্যথা তো কমেই। সেই সঙ্গে কফ এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, এমন ঠান্ডা-গরম পরিস্থিতিতে গলা ব্যথা শুরু হলে আমলার রসকে কাজে লাগাতে দেরি করবেন না যেন!
৫.ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
আমলিতে এমন কিছু খনিজ এবং উপাকারি ভিটামিন আছে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ত্বকের অন্দরে জলের ঘাটতি দূর করে, সেই সঙ্গে পুষ্টির চাহিদাও মেটাও। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আমলকি শুকিয়ে তা দিয়ে বনানো পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো দই এবং মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে একথা হলফ করে বলতে পারি যে খাতায় কলমে আপনার বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স ভুলেও বাড়ার সাহস পাবে না।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
আমলিকে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদেরও বার করে দেয়। ফলে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো।
৭. ক্ষতিকর জাবীণুরা ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না:
ভিটামিন সি হল সেই ব্রহ্মাস্ত্র, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে এতটাই মজবুত করে দেয় যে কোনও জীবাণুই সেই দেওয়াল ভেদ করে শরীরের অন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ওয়েদার চেঞ্জের সময় সর্দি-কাশির ভয়ও দূর হয়। আর একথা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন যে আমলকি হল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। তাই এই ফলটি যদি নিয়মিত কাঁচা অবস্থায় অথবা শুকিয়ে খেতে পারেন, তাহলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে যে আর চিন্তায় থাকতে হবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।
৮. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে:
হার্টকে সুস্থ রাখতে চান? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে রোজ একটা করে আমলকি খাওয়া মাস্ট! কারণ এতে উপস্থিত একাধিক শক্তিশালী উপাদান, হার্টের আর্টারিকে আক্রমণ করা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও আর থাকে না।
৯. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
সারাক্ষণ কম্পিউটার-মোবাইল ব্যবহার করার কারণে চোখের বারোটা বেজে যাক, এমনটা যদি না চান, তাহলে রোজের ডেয়েটে আমলকির থাকা মাস্ট! আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে চোখ থেকে জল পরা, চুলকানি এবং চোখ ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
১০.শরীরের বয়স কমে:
আমলকিতে উপস্থিত একাধিক অ্যান্টি-এজিং প্রপাটিজ শরীরের উপর বয়সের চাপ পরতেই দেয় না। ফলে বয়সের কাঁটা পাঁচের ঘর পেরলেও তার আঁচে শরীরে ভেঙে যায় না। তাই শরীরকে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যদি চনমনে রাখতে চান, তাহলে একদিনও আমলকি খেতে ভুলবেন না যেন!
১১. নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে যায়:
দেখুন বাঙালি হয়ে জন্মেছি যখন, তখন একটু পেটুক তো হবই। আর সে কারণে গ্যাস-অম্বল যে রোজের সঙ্গী হবে, তা আর নতুন কথা কী! তাই তো কব্জি ডুবিয়ে মুড়ি ঘন্ট, মাছের কালিয়া আর পাঁঠার কারি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমলকিও যদি খেতে পারেন, তাহলে বদহজম নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। কারণ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, যা হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের পেটের রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।