Just In
নিয়মিত কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করা বা সাঁতার কাটা উচিত কেন জানা আছে?
ঠান্ডা জলে স্নান করলে যে শুধু ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো রোগের প্রকোপই কমে, এমন নয়, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার। যেমন ধরুন...
সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান করলে বা সাঁতার কাটলে ব্রেনের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। আর গত কয়েক বছরের আমাদের দেশে যে বারে মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েছে তাতে প্রত্যেকেরই, বিশেষত কম বয়সিদের ঠান্ডা জলে সাঁতার কাটার প্রয়োজন যে বেড়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কয়েক মাস আগে হওয়া "সিগমা ৩৬০ ওয়েল বিং সার্ভে" অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি নয়তো স্ট্রেসের শিকার। এমন পরিস্থিতি এই গবেষণা যে অনেককেই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার রাস্তা দেখাবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্নটা হল ঠান্ডা জলে স্নান করার সঙ্গে মানসিক অবসাদ এর সম্পর্কটা ঠিক কোথায়?
গবেষণা অনুসারে ঠান্ডা জলে স্নান করলে অথবা সাঁতার কাটলে ব্রেনের অন্দরে বিটা-এন্ডোরপিন এবং নর এড্রিনালিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে ব্রেন পাওয়ার তো বৃদ্ধি পায়ই, সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন এবং স্ট্রেস লেভেল কমতেও সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, ইউনিভার্সিটি অব অস্কোর গবেষকদের করা স্টাডি অনুসারে ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় মস্তিষ্কে কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণও কমতে শুরু করে। ফলে অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা দূর হয় চোখের পলকে। তবে ঠান্ডা জলে স্নান করলে যে শুধু ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো রোগের প্রকোপই কমে, এমন নয়, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক শারীরিক উপকার। যেমন ধরুন...
১. ইনসমনিয়ার মতো রোগ দূরে পালায়:
নানা কারণে কি রাত্রি বেলা একেবারেই ঠিক মতো ঘুম হয় না? তাহলে বন্ধু আজ থেকেই শুতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা জলে স্নান সেরে নিতে ভুলবেন না। আসলে এমনটা করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে অনিদ্রার সমস্যা দূরে পালাতে সময় লাগে না।
২. রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত সকাল-বিকাল ঠান্ডা জলে স্নান করলে সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে শরীরের বাকি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তাই তো বলি বন্ধু, সুস্থভাবে যদি বাঁচতে হয়, তাহলে নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান করতে অথবা সাঁতার কাটতে ভুলবেন না যেন!
৩. স্পার্ম কাউন্ট বাড়ে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান করলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে স্পার্ম কাউন্টে উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। ফলে বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনও বাঁধা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায় কমে।
৪. দেহের সার্বিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় আমাদের শরীর থেকে এন্ডোরফিন এবং নোরাড্রেনালিন নামে দুটি কেমিকেলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই দুটি কেমিকেল শরীর থেকে যত বেরিয়ে যেতে থাকে, তত আমাদের ক্লান্তি দূর হয়। সেই সঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
৫. রেসপিরেটরি সিস্টেম চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
ঠান্ডা জলে ডুবকি লাগানোর সময় আমরা শ্বাস বন্ধ করে জলের তলায় যাই। যে মুহূর্তে শ্বাস ফরিয়ে যায়, অমনি হাপুস হুপুস করে অক্সিজেন টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগে পরি। এমনটা করার সময় আমাদের ফসুফুসের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বেড়ে যায়। তাহলে একবার ভাবুন, যারা প্রতিদিন গঙ্গা স্নান করছেন অথবা যাদের পুকুরে স্নান করার অভ্যাস রয়েছে, তাদের ফুসফুস কতটা কর্মক্ষম!
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
প্রতিদিন ঠান্ডা স্নান করলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে নানাবিধ সংক্রমণের প্রকোপ একেবারে কমে যায়। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন তো শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ঠান্ডা জলে স্নান করার প্রয়োজন কতটা!
৭. প্রতিটি অঙ্গের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে:
শরীর, ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে আসা মাত্র লিম্প ভেসেলগুলি সংকুচিত হতে শুরু করে। ফলে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। এমনটা যখনই হয়, তখনই প্রতিটি অঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে দেহের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৮. শরীর বিষ মুক্ত হয়:
ঠান্ডা জলে সকাল সকাল ডুবকি লাগালে শরীর থেকে বেশ কিছু ক্ষতিকর অ্যাসিড বেরিয়ে যায়। ফলে পেশিতে কোনও চোট থাকলে তা দ্রুত সেরে উঠতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই কারণেই তো খেলোয়াড়রা ইনটেন্স ট্রেনিং-এর পর ঠান্ডা জলে স্নান করে থাকেন। আসলে ঠান্ডা জল পেশির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ঠান্ডা জলে স্নান করলে পেশীর ক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমে যেতেও সময় লাগে না। এই কারণেই তো শরীরচর্চার পর ঠান্ডা জলে স্নান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
১০. চুলের সৌন্দর্য বাড়ে:
সকাল সকাল পুকুর বা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করলে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আসলে ত্বক এবং চুলের অন্দরে থাকা প্রকৃতিক তেল যাতে বেশি মাত্রায় ক্ষরণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে ঠান্ডা জল। ফলে ত্বক বা চুল আদ্র হয়ে গিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রসঙ্গত, নিয়মিত পুকুরের ঠান্ডা জলে স্নান করলে চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ স্কাল্পের সমস্যাও দূর হয়।
১১. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
আমাদের শরীরে দু ধরনের ফ্যাট থাকে। একটা হল ব্রাউন ফ্যাট, যা শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। আর আরেকটি হল হোয়াইট ফ্যাট, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। এই দ্বিতীয় ধরনের চর্বি গলানোর কথাই চিকিৎসকেরা সব সময় বলে থাকেন। প্রসঙ্গত, পুকুর বা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় ব্রাউন ফ্যাট খুব অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি ক্যালোরি বার্ন হতে শুরু করে। ফলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত সাদা চর্বি ঝড়ে গিয়ে দেহ মেদমুক্ত হয়ে ওঠে।