Just In
বর্ষাকালীন নানাবিধ সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে ঘরোয়া টোটকা!
জ্বালাময় গরমের দীর্ঘ ইনিংসের পর যেদিন প্রথম নীল আকাশের ক্যানভাসে ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘের দেখা মেলে সেদিন যেন আনন্দের চোটে কাজ মাথায় ওঠে। সবার চোখ যেন অফিসের কাঁচের জানলা পেরিয়ে কালো মেঘের দেশে পাড়ি জমায়। আর যখন বর্ষার প্রথম ফোঁটাটা পৃথিবীকে আলিঙ্গন করে তখন সোদা মাটির গন্ধের নেশা যেন শরীর এবং মনকে ছাড়তেই চায় না। সেই সঙ্গে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজাকে বাদ দেওয়া যায় কীভাবে বলুন!
আমার মতো আপনাদেরও নিশ্চয় প্রথম বর্ষার পর এমন সব অনুভূতি ঘিরে ধরে। কী তাই তো! কিন্তু সমস্যা একটা জায়গাতেই! বৃষ্টির সঙ্গে জল জমা আর কাদা রাস্তায় আছাড় খাওয়া যেমন পিছু পিছু আসে, তেমনি লেজুড় হয় আরও বেশ কিছু সমস্যা, যেগুলির সঙ্গে আমাদের শরীরের ভাল-মন্দের গভীর যোগ রয়েছে। যেমন ধরুন বর্ষাকালে অনেকেরই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। ফলে নানাবিধ সংক্রমণ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে হজমের সমস্যা এবং মশার কামড় ঘটিত নানাবিধ রোগ তো রয়েছেই। এইসব ক্ষেত্রে উপশম মিলতে পারে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্য়মে, যেগুলির সম্পর্কে বাকি প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচান করা হল।
মশার ভীতি থেকে মুক্তির শর্টকাট:
বর্ষার সময় আমরাই একমাত্র নই, যাদের খুব আনন্দ হয়। আরেক দল আছে যারা আমাদের লাফাতে দেখে খাবারের লোভে খিক খিক করে হাঁসতে থাকে। এরা হল মশা। বর্ষায় যাদের বাড়বাড়ন্ত চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে মশাদের কাবু করতে কাজে লাগাতে পারেন নিম পাতাকে। শুকনো করা নিম পাতা একসঙ্গে করে জ্বালিয়ে দিন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই একটা মশাকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন:
সারা রাত বৃষ্টির পর এলাকা একেবারে জলের তলায়। আর এদিকে আপনাকে অফিস যেতে হবে। অগত্যা ছপাত ছপাত করে জলের মধ্যে দিয়ে অফিস যাত্রা ছাড়া উপায় থাকে না। এমনটা করলে আর কোনও শারীরিক সমস্যা না হলেও পায়ে এবং শরীরের বাকি অংশে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই বছরের এই সময় বেশি করে পায়ের খেয়াল রাখতে হবে। নোংড়া জল ঠেলে বাড়ি এলে গরম জলে অল্প করে ডেটল ফেলে ভাল করে পা ধুতে হবে। সেই সঙ্গে নখের মাঝে যাতে ময়লা জমে না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষত যারা ডায়াবেটিক তাদের তো বেশি করে এই সময় পায়ের দিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে আদা, হলুদ এবং গ্রিন টি বেশি করে খেতে হবে। কারণ এই তিনটি খাবারই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
স্নানের নিয়ম:
বর্ষাকালে শরীরকে ভিতর এবং বাইরে থেকে চাঙ্গা রাখতে সপ্তাহে একবার নিম তেল সারা শরীরে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট মাসাজ করতে হবে। তারপর হলকা গরম জলে স্নান করা তো মাস্ট! এমনটা করলে স্কিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। অন্যদিকে সারা শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে একাধিক রোগও দূরে পালাবে।
কী কী করবেন, কীকী করবেন না:
শরীরকে সুস্থ রাখতে এক্ষেত্রে কতগুলি নিয়ম চোখ বুজে অনুসরণ করে যেতে হবে। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবে। নিয়মগুলি হল...
১. হজম ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শরীরে যেন জলের ঘাটতি না হয়। প্রসঙ্গত, বর্ষাকালে হলকা গরম জল খেলে শরীরের খুব উপকারে লাগে। তাই ইচ্ছা হলে আপনিও এই নিয়মটা মেনে চেলতে পারেন।
২. আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিংঙ্কের মতো ঠান্ডা খাবার যতটা পারবেন এড়িয়ে চলবেন।
৩. যখনই সুযোগ পাবেন আদা খাবেন। দেখবেন উপকার পাবেন।
৪. বর্ষাকালে স্যালাড একেবারে খাবেন না। কারণ এমন খাবার থেকে পেট খারাপের আশঙ্কা থাকে। খেয়াল রাখবেন যে খাবারই খান না কেন, তা যেন ভাল করে রান্না করা হয়। কাঁচা রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলবেন।
৫. পাঁঠার মাংস কম খেতে হবে। আসলে বর্ষাকালে আমাদের হজম ক্ষমতা কমে যায়। তাই এমন সব খাবার ডায়েট থেকে বাদ দেওয়াই ভাল যা হজম হতে সময় লাগে।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে হলকা গরম জলে অল্প করে গোলমরিচ এবং রক সল্ট মিশিয়ে সেই পানীয়টি খেতে পারেন।
৭. দুপুর বেলা খেয়ে ঘুমাবেন না। এমনটা করলে মেটাবলিজম রেট কমে যাবে। ফলে বদ হজম হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
৮. সুস্থ থাকতে এই সময় তুলসি চা অথবা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।