Just In
চোখ, হার্ট এবং মস্তিষ্কের কোনও রোগ হোক এমনটা যদি না চান তাহলে খালি পায়ে হাঁটতে হবে রোজদিন!
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেল যে প্রতিদিন খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে শরীরের একাধিক উপকার পাওয়া যায়।
ছোটবেলায় দাদু-ঠাকুমার মুখে শোনা কথাটা আজ আধুনিক বিজ্ঞানের সমর্থন পেল। একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেল যে প্রতিদিন খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে শরীরের একাধিক উপকার পাওয়া যায়। বিশেষত দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে বেশ কিছু মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিসের কতাই ধরুন না।
পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে এই দুটি মারণ রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত কম বয়সীদের মধ্যে। তাই তো শরীরকে বাঁচাতে এবং দীর্ঘায়ু লাভ করতে ২৫-৫০ বছর বয়সীদের প্রতিদিন সকাল-বিকাল খালি পায়ে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, খালি পায়ে হাঁটার সময় পরিবেশ উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়, যে কারণে হার্টের তো উপকার হয়ই, সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমে:
শরীরের অন্দরে নানা কারণে যদি ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাহলে কোষেদের তো ক্ষতি হয়ই, সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় বেড়ে। শুধু তাই নয়, হার্টেরও মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই তো প্রদাহের মাত্রা যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এমনটা করতে খালি পায়ে হাঁটার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে খালি পায়ে হাঁটার সময় মাটিতে উপস্থিত ইলেকট্রন শরীরে প্রবেশ করে অনেকটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কাজ করে। ফলে ইনফ্লেমেশন রেট বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
হাই ব্লাড প্রেসারের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন! কারণ খালি পায়ে হাঁটার সময় পায়ের নিচের নার্ভেরা বেশি মাত্রায় অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। ফলে রক্তচাপ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রেল লেভেলও কমতে শুরু করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
আমাদের পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ সংক্রমমের আশঙ্কা একেবারে শূণ্য়ে এসে দাঁড়ায়।
৪. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
শরীরে রক্তচলাচল যখন স্বাভাবিকভাবে হতে থাকে, তখন ব্লাড ক্লট এবং আর্টারিতে ময়লা জমার আশঙ্কা কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, খালি পায়ে হাঁটার আরেকটি উপকারিতা হল, এই সময় ব্লাড সেলগুলি মারাত্মক অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৫. ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূরে পালায়:
এমন রোগের শিকার কি আপনিও? তাহলে আজ থেকেই খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। দেখবেন বিনিদ্র রাত্রি যাপন আর করতে হবে না। কারণ খালি পায় হাঁটার সময় আমাদের শরীর থেকে নেগেটিভ এনার্জি বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস রিলিজও হয়। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘুম আসতে আর কোনও অসুবিধাই হয় না। প্রসঙ্গত, শুধু খালি পায়ে হাঁটলেই যে এমন উপকার হয়, তা নয়। সাঁতার কাটলেও একই ফল মেলে।
৬.আমাদের অনুভূতিগুলি আরও জোরদার হয়ে ওঠে:
কে বলে শুধু মানুষের অনুভূতি রয়েছে! আসলে পৃথিবীর অন্দরেও সেনসারি চ্যানেল রয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের শরীরের সরাসরি যোগও আছে। কিন্তু সমস্যাটা হল মানুষযখন থেকে ভদ্র হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ জুতো পরা শুরু করেছে তখন মাটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে এখন আর পরিবেশে উপস্থিত শক্তি মনুষের শরীর প্রবেশ করতে পারে না। সেই কারণেই না এত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। তাই তো বলি, খালি পায়ে হাঁটা শুরু করুন। এমনটা করলে আমাদের পায়ের তলায় থাকা কিছু প্রেসার পয়েন্ট অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীর আরও বেশি করে অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সিক্স সেন্সও বাড়তে শুরু করে।
৭. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো:
আজকের দুনিয়ায় সফল হতে গেলে বুদ্ধির তরোয়ালে ধার থাকাটা একান্ত প্রয়োজন, না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ! তাই তো বলি, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে একটু খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। এমনটা করলেই দেখবেন ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনগুলি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাকটিভ হয়ে যাবে। ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বুদ্ধির জোরও বাড়তে শুরু করবে। প্রসঙ্গত, যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই জল দিয়ে গঠিত। তাই তো মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, তত আমাদের শরীরের অন্দরে নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
৮.সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়:
খালি পায়ে হাঁটের সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সারা শরীরে রক্তচলাচল ঠিক মতো হতে শুরু করে দেয়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্ত বেশি বেশি করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে গিয়ে তাদের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো হ্রাস পায়।
৯. পেশী এবং হাড়ের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
খালি পায়ে হাঁটার সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়। অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। ফলে পেশী এবং হাড় আরও শক্তোপক্তো হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
১০. দৃষ্টিশক্তি জোরদার হয়ে ওঠে:
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন ভোর বেলা, খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে পায়ের তলায় থাকা একাধিক প্রেসার পয়েন্টে চপ পরতে শুরু করে। এই সব প্রেসার পয়েন্টের সঙ্গে চোখের সরাসরি যোগ রয়েছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পরে, তত দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে।
১১.সার্বিকভাবে শরীরের উপকার হয়:
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে স্টাইলের চক্করে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই তাদের পায়ের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জুতো পরেন না। ফলে ধীরে ধীরে পায়ের তলার গঠন খারাপ হতে শুরু করে। আর একবার পায়ের গঠন খারাপ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পরে আমাদের শরীরের উপর। ফলে ব্যাক পেন, ঘারে যন্ত্রণা এবং গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাহলে কী জুতো পরাই ছেড়ে দিতে হবে? একেবারেই না। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়া পা যুগলেকে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এমনটা করলেই পায়ের শক্তি বাড়তে থাকবে। ফলে ভুল জুতো পরলেও শরীরের উপরে আর কু-প্রভাব পরবে না।