Just In
ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে: রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাক এমনটা যদি না চান তাহলে কফি খান প্রতিদিন!
সম্প্রতি "ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্টেফিক ইনফরমেশন অন কফি" এর প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন ২ কাপ করে কফি খাওয়া শুরু করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
কফি আর ডায়াবেটিস- সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? সম্প্রতি "ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্টেফিক ইনফরমেশন অন কফি" এর প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন ২ কাপ করে কফি খাওয়া শুরু করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আসলে প্রায় ১,১৮৫,২১০ জনের উপর করা এই গবেষণায় দেখা গেছে কফিতে উপস্থিত নানাবিধ উপাদান, বিশেষত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এলিমেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় এমনও দাবি করা হয়েছে যে দিনে ২-৩ কাপ কফি খাওয়া শুরু করলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়।
বেশ কিছু দিন আগে প্রকাশিত আরেক রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে আমাদের দেশ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের "এপিসেন্টারে" পরিণত হয়েছে। কারণ এদেশে এখন কম-বেশি প্রায় ৭৪ মিলিয়ান মানুষ এই মারণ রোগের শিকার এবং আক্রান্তের সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কফি এবং ডায়াবেটিস রোগের পরস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে তা যে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে একথা জেনে রাখা ভাল যে নিয়মিত কফি খাওয়া শুরু করলে যে কেবল ডায়াবেটিস রোগ দূরে থাকে, এমন নয়, সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়:
"জার্নাল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি" পত্রিকায় প্রকাশিক এক পরীক্ষা অনুসারে এক কাপ কফি খেলে শরীরে ১.৮ গ্রাম ফাইবারের প্রবেশ ঘটে, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। প্রসঙ্গত, শরীরকে চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন ২০-৩৮ গ্রাম ফাইবারের প্রয়োজন পরে। যার প্রায় ১.৮ গ্রাম এসে যায় এক কাপ কপি থেকেই। তাই বুঝতে পরেছেন তো বন্ধ কফিতে কতটা শরীর বান্ধব। তবে বেশি মাত্রায় কফি খেলে কিন্তু বিপদ...!
২. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
একেবারে ঠিক শুনেছেন বন্ধু। হার্টকে শক্তপোক্ত করে তুলতে বাস্তবিকই এই পানীয় নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। প্রসঙ্গত, একদল কোরিয়ান গবেষকদের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে দিনে ২-৩ কাপ করে কফি খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। একই ধরনের এক পরীক্ষা হয়েছিল ব্রাজিলেও। সেই স্টাডিতেও কিন্তু একই রেজাল্ট মিলেছে। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে কফি এবং হার্টের মধ্যকার সম্পর্কটা বেজায় গভীর।
৩. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কফি খাওয়া শুরু করলে কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২৬ শতাংশ কমে যায়। সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে ক্যান্সারাস সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
৪. যন্ত্রণা কমে নিমেষে:
জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে দিনে ২-৩ কাপ কফি পান করলে যে কোনও ধরনের ব্যথা কমার সম্ভাবনা প্রায় ৪৮ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশেষত এক্সারসাইজ করার পর সারা শরীরে যে ধরনের ব্যথা হয়, তা কমাতে কফির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৫. লিভার চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
প্রতিদিন নিয়ম করে ২-৩ কাপ কফি পান করলে নানাবিধ লিভার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে সার্বিকভাবে শরীরের উন্নতি ঘটে।
৬. মন-মেজাজ চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
একাধিক স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত দু-কাপ করে কফি পান করলে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। কারণ শরীরে ক্যাফিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মস্তিষ্কের অন্দরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে ডিপ্রেশনের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না।
৭. শরীরের অন্দরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়:
ঘুম ঘুম ভাব কাটানোর পাশাপাশি কফি আমাদের শরীরে একাধিক পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক কেস স্টাডি করার সময় দেখা গেছে কফি পান করলে শরীরে ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৫, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়। তবে তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কফি খাবেন না যেন। এমনটা করলে উপকারের থেকে ক্ষতি হবে বেশি।
৮. সারা শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে:
জাপানী বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে কফি খাওয়া মাত্র নানা কারণে রক্তের প্রবাহে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে দেহের প্রতিটি কোণায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে নানাবিধ রোগ থেকে তো মুক্তি মেলেই। সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতাও চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।
৯. ওজন কমে চোখে পরার মতো:
গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে কফিতে উপস্থিত ক্যাফিন শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। আসলে ক্যাফিন আমাদের হজম ক্ষমতা বা মেটাবলিক রেট প্রায় ৩-১১ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মেদ ঝরার হার প্রায় ১০-২৯ শতাংশ বেড়ে যায়।
১০. শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
কফির অন্দরে থাকা ক্যাফিন শরীরে প্রবেশ করার পর তা অ্যাডেনোসাইন নামে একটি নিউরোট্রান্সমিটারের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ডোপামাইন নামক ফিলগুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে শরীর চনমনে হয়ে উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এনার্জির ঘাটতিও দূর হয়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডোপামাইন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে ব্রেন ফাংশনেরও উন্নতি ঘটে। তাই দিনে ১-২ কাপ কফি খাওয়া শুরু করতে পারেন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবে।
১১. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
গত কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বজুড়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কফি পান করলে ব্রেন টিস্যুর কর্মক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে বুড়ো বয়সে গিয়ে অ্যালঝাইমারস বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো কমে যায়। প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডিমেনশিয়া রোগের প্রকোপ যে হারে বাড়ছে, তাতে কফি পানের প্রয়োজনীয়তা যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।