Just In
ভেগান ডায়েট স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি? এর সাথে ভেজিটেরিয়ানদের পার্থক্য কী? জেনে নিন
নিরামিষ আর আমিষের দ্বন্দ্ব চিরকালীন। শুধুমাত্র শাকসবজি খেলে তাদের ভেজিটেরিয়ান বলে একথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু 'ভেগান' শব্দটির সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় নেই। ভারতে এখন ভেগান বা ভেগানিজম নতুন প্রজন্মের মধ্যে একটি নতুন ট্রেন্ড। ১৯৪৪ সালে ডোনাল্ড ওয়াটসনের উদ্যোগে ভেগান সোসাইটি গড়ে ওঠে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ভেগান ডায়েট সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। আর তখন থেকেই ভেগান ডায়েট নিয়ে বিশ্বজুড়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে।
ভারতেও ভেগানিজম দিন দিন নিজের জায়গা শক্ত করে নিচ্ছে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক কী এই ভেগান ডায়েট এবং ভেজিটেরিয়ানদের সাথে এদের পার্থক্য কী।
ভেগান ডায়েট কী?
ভেগান ডায়েট বলতে গেলে এক কথায় বলা যায় - ভেগানিজম হলো এমন একটি জীবনধারা, যেখানে প্রাণী ও প্রাণীদেহের দ্বারা তৈরি সমস্ত ধরনের পণ্যের ব্যবহার বাদ দেওয়া হয়। এককথায়, নিরামিষাশীরা যখন প্রাণীজাত সমস্ত খাবারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন, তখন তাদের ভেগান বলে। মাছ-মাংস তো নয়ই, তার পাশাপাশি ভেগানরা ডিম, দুধ আর দুধের তৈরি যেকোনও খাবার যেমন - ছানা, দই, পনীর, সন্দেশ, রসগোল্লা, ইত্যাদি খান না।
ভেগান কত প্রকার হয়?
বর্তমান যুগে ভেগানদের মধ্যেও বিভিন্ন ভাগ লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল -
১) হোল ফুড ভেগান
এই ধরনের ভেগানদের খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার থাকে।
২) জাঙ্ক ফুড ভেগান
এই ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রক্রিয়াজাত ভেগান খাবারের উপর নির্ভর করে, যেমন - ভেগান মাংস, ফ্রোজেন ডিনার এবং নন ডেয়ারি আইসক্রিমের মতো ডেজার্ট, ইত্যাদি।
৩) Raw-food ভেগান
এই ব্যক্তিরা কেবলমাত্র কাঁচা খাবার অথবা 48°C এর নীচে তাপমাত্রায় রান্না করা খাবার খায়।
৪) লো-ফ্যাট, Raw-food ভেগান
এই ধরনের ভেগানরা তাদের ডায়েটে বাদাম, অ্যাভোকাডো এবং নারকেল-সহ উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার সীমিত রাখে, পরিবর্তে ফলের উপর নির্ভর করে। তাই এদেরকে 'fruitarians' বলা হয়।
ভেগানদের খাদ্যতালিকায় কী কী খাবার থাকে ও কী থাকে না
প্রাণীজাত যেকোনও জিনিসই ভেগানদের খাদ্যতালিকায় থাকে না। মাংস, মাছ, শেলফিশ, ডিম, মধু, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রভৃতি।
ভেগানরা প্রাণীজ প্রোটিন বর্জন করে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল হয়। ভেগানদের খাদ্যতালিকায় বিনস, বিভিন্ন ধরনের ডাল, টফু, বাদাম, বীজ, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এমনকি প্রাণীজ দুধের বদলে, উদ্ভিদজাত দুধ এবং মধুর বদলে ম্যাপল সিরাপ, প্রভৃতি ব্যবহার করে থাকে। ভেগানরা প্রধানত তাদের খাদ্যতালিকা, প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল এবং শস্যের উপর ভিত্তি করে বানায়।
Covid-19 : জলে গুলে খেলেই করোনার বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি মিলবে, জানুন DRDO-র তৈরি ওষুধ সম্পর্কে
ভেগান এবং ভেজিটেরিয়ানের মধ্যে পার্থক্য কী?
ভেগান এবং ভেজিটেরিয়ানরা উভয়ই নিরামিষাশী হলেও, এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে -
ভেজিটেরিয়ানরা মাছ-মাংস না খেলেও তাদের খাদ্যতালিকায় দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, মধু, ডিম এবং বিভিন্ন প্রাণীজ দ্রব্য থাকে। এমনকি প্রাণী জাতীয় পণ্য, যেমন চামড়ার তৈরি জুতো অথবা জামাকাপড়, প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারেন।
অপরদিকে, ভেগানরা তাদের জীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রাণীজ দ্রব্য ও পণ্য বর্জন করে। উল, চামড়া বা সিল্কের পোশাকও তারা পরেন না। প্রাণী-সহ পরিবেশ বাঁচাতেই তাদের এই উদ্যোগ। ভেগানদের মতে, খাদ্য এবং পণ্যের জন্য জন্য প্রাণী হত্যা করা, পশু সমাজের উপর নির্মম অত্যাচার বোঝায়। যার ঘোরতর বিরোধী ভেগানরা। এক কথায় বলা যায় সমস্ত ভেগান ভেজিটেরিয়ান হলেও, সব ভেজিটেরিয়ানরা ভেগান হয় না।
কীভাবে ভেগান ডায়েটের ভারসাম্য বজায় রাখবেন?
ভারতে ভেগান ডায়েটের ধারণাটি একেবারেই নতুন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ভেগানদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, লং-চেইন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়োডিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্ক থাকে না।
স্প্রাউটস এবং রান্না করা খাবার খান। চা-কফি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন, তার বদলে শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় বেশি করে ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য একত্রিত করুন। আয়রনের শোষণে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে ভিটামিন সি। অঙ্কুরিত বীজ এবং উদ্ভিজ্জ দুধ-সহ সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে, তা ভেগানদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।