Just In
Don't Miss
কোভিডের মাঝে ছড়াচ্ছে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' সংক্রমণ, কী এই রোগ? জেনে নিন বিস্তারিত
কোভিডের চোখ রাঙানিতে এমনিতেই বিপর্যস্ত জনজীবন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমার পরিবর্তে দিন দিন বাড়তেই থাকছে। স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে রীতিমতো হাহাকার পড়ে গিয়েছে। এই মারণ ভাইরাসের হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস, মস্তিষ্ক। আর এরই মধ্যে অনেকের শরীরে ঢুকে পড়ছে এক ধরনের ছত্রাক, যা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নামে পরিচিত। কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া বেশ কয়েকজনের মধ্যে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকমহলের।
মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে কিছু করোনা রোগীর মধ্যে এই মারাত্মক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক, কী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং এর উপসর্গ সম্পর্কে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
এটি ছত্রাকজনিত রোগ। এই সংক্রমণের আরেক নাম ‘মিউকরমাইকোসিস'। এই ছত্রাকের সংক্রমণ খুবই মারাত্মক এবং এটি চোখ, নাক এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও অ্যাটাক করে। এই সংক্রমণ থেকে অন্ধত্ব, খুব কঠিন অসুখ এবং মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ
কোনও ব্যক্তির মধ্যে এই সংক্রমণ হলে যে উপসর্গগুলি দেখা দেয় - নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, রক্ত পড়া নাক দিয়ে, মুখে ফোলাভাব, দাঁতে ব্যথা, বুকে ব্যাথা। চোয়ালে ব্যথা, চোখ জ্বালা ও ব্যথা, নাকের চারপাশে ব্যথা ও লালচে ভাব, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, নাকের উপর কালচে দাগ দেখা দিতে পারে, জ্বর, বুকে ব্যথা, মাথা ব্যথা, কাশি, বমি।
কীভাবে ছড়ায় মিউকরমাইকোসিস?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। এটি সাধারণত মাটি, গাছপালা, সার, পচা ফল-শাকসব্জির মধ্যে যে মিউকাস থাকে, তার থেকেই ছড়ায়। এটা মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাসে উপস্থিত ছত্রাক আমাদের শরীরে পৌঁছায়। শরীরে যদি কোনও ধরণের ক্ষত থাকে বা দেহের কোনও অংশ পুড়ে গিয়ে থাকে, তবে সেখান থেকেও এই সংক্রমণ দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সনাক্ত না করা হয়, তবে চোখের দৃষ্টি চলে যেতে পারে। শরীরের যে অংশে এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়েছে, দেহের সেই অংশটি পচে যেতে পারে।
সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে এই সংক্রমণ। বিশেষত, যারা ডায়বেটিসে ভুগছেন, যাদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্যান্সার বা এইডস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এই সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর আশংকা ৫০ শতাংশ। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে।
কোভিডের সাথে এর কানেকশন
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেসব কোভিড রোগীর অবস্থা গুরুতর তাদের চিকিৎসায় যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা থেকেই সম্ভবত ছড়াচ্ছে এই সংক্রমণ। স্টেরয়েড ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে পারলেও, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি-তে বেশ কয়েকজনের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা গিয়েছে।
কোভিড আতঙ্কের মাঝেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের হানা, কী করা উচিত আর কী নয়, জানালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এই সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়
১) ধুলোবালি রয়েছে এমন কোনও নির্মাণস্থলে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
২) গার্ডেনিং বা ক্ষেতে কাজ করার সময় মাস্ক, জুতো, লম্বা প্যান্ট, লম্বা হাতাযুক্ত জামা পরুন।
৩) ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
৪) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিফাংগাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে।
৫) করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর সময় সময় হেল্থ চেকআপ করা উচিত। ছত্রাক সংক্রমণের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যান।